হযরত খাদীজা ( রা:)জীবনী - Biography of Hazrat Khadija (RA).
হযরত খাদীজা ( রা:)জীবনী
হযরত খাদীজা ( রা)জীবনী - Biography of Hazrat Khadija (RA).
হযরত খাদীজা ( রা:)জীবনী ১ম পর্ব
নবী করীম ( সা : ) - এর প্রথমা স্ত্রী , প্রথম মুসলমান উম্মুল , মু'মীনীনদের প্রধান হযরত খাদীজাতুল কুবরা ( রা:)হস্তী বছরের ১৫ বছর আগে মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন । তার নাম ' খাদীজা , ডাক নাম উম্মুল হিন্দ ' , উপাধি ‘ তাহিরা ' অর্থাৎ পুণ্যবতী নারী । আব্বার নাম । খুওয়ালিদ ইবনে আসাদ ইবনে আবদুল ওযা ইবনে কুসাই , মায়ের নাম ফাতিমা বিনতু জায়িদাহ । আর নানা ছিলেন আসাম ইবনে হারাম ইবনে ওয়াহা ইবনে হাজার ইবনে আবদ্ ইবনে মাহীছ ইবনে আমের । উল্লখ্য যে , কয়েক পুরুষ ওপরে গিয়ে খাদীজা ( রা : ) - এর পিতৃকূল ও মাতৃকূল এক ছিল । অর্থাৎ তার উর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষ এবং নবী করীম ( সা : ) - এর উর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষ একই ব্যক্তি ছিলেন । এই ব্যক্তির নাম ছিল কুসাই । তাহলে বােঝা গেল হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়ায়লিদ ( রা:) ছিলেন । আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ বংশ কোরাইশ বংশের পূত পবিত্র সন্তান । হযরত খাদীজা ( রা:) নিজেই তকালীন আরবে অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্না ও সম্মানিতা একজন মহিলা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতা ছিলেন । সেই জাহেলী যুগেও তাঁর পূত পবিত্র চরিত্রের জন্য তিনি তাহিরা ’ উপাধিতে ভূষিত হন ।
তােমরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছ যে ইনিই সেই সম্মানিত মহিলা যিনি নবী নন্দিনী হযরত ফাতিমাতুজ্জোহরার মা , ইনিই হাসান ও হােসাইন ( রা : ) - এর নানি এবং আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনাঢ্য ব্যবসায়ী । হযরত খাদীজা ( রা : ) - এর বাল্যকাল সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানা যায় । । তবে রাসূল ( সা : ) - এর সাথে বিয়ে হবার আগে তাঁর আরও দু'বার বিয়ে হয়েছিল ।
এরও আগে খাদীজা ( রা : ) - এর আব্বা খুওয়ালিদ তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য সেই সময়ের বিশিষ্ট তাওরাত ও ইনজীল বিশেষজ্ঞ । ওয়ারাকা ইবনে নাওফিলের সাথে সম্বন্ধ ঠিক করেন । ওরাকা খাদীজার চাচাত ভাই ছিলেন । কিন্তু যে কোন কারণেই হােক সে বিয়ে হয়নি । পরে আবূ হালা ইবনে । যাররাহ আত - তামীমীর সাথে তাঁর প্রথম বিয়ে হয় । এ স্বামীর ঔরসে ও তার গর্ভে দু'জন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন ।
যাদের নাম ছিল হালা ও হিন্দ । রাসূল ( সা:) নবুয়াত প্রাপ্তির পর এ দু'জনই ইসলাম কবুল করেন এবং সম্মানিত সাহাবা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন । কিন্তু তাদের পিতা আবূ হালা ইবনে যাররাহ সেই যাহেলী যুগেই ইন্তেকাল করেন । প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর হযরত খাদীজা ( রা:) আতীক বিন আবিদ আল - মাখযুমীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । এ স্বামীর ঔরসে হিন্দা নামে তাঁর এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন । ইনিও ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেন এবং সম্মানিতা মহিলা সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেন । দ্বিতীয় স্বামী আতিকের মৃত্যু হলে তিনি বিশেষভাবে ব্যবসা - বাণিজ্যে মনােনিবেশ করেন ।
সমস্ত ঐতিহাসিকগণ এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে , আরবের সেই জাহেলী যুগে মক্কার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদশালী ব্যবসায়ী ছিলেন হযরত খাদীজাতুল কুবরা ( রা:) ।
জানা যায় তার বাণিজ্য বহর যখন সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করত তখন দেখা যেতাে একা খাদীজার পণ্য সামগ্রী কুরাইশদের সমগ্র পণ্য সমাগ্রীর সমান । পিতার মৃত্যুর পর খাদীজা ( রা : ) - এর পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে । কারণ তাঁর পিতার ব্যবসা আরবের বাইরেও বিস্তৃত ছিল । এজন্য তিনি একজন বিশ্বস্ত লােক খুঁজতে লাগলেন যাতে তার ব্যবসা দেশের বাইরেও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় ।
নবী করীম ( সা:) তখন ২৫ বছরের যুবক । ইতােমধ্যেই তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের আলাদাভাবে কয়েকবার বাণিজ্য সফরে গিয়ে প্রভূত সাফল্য বয়ে এনেছিলেন । সাথে সাথে ব্যবসা সম্পর্কিত পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছিলেন । অন্যদিকে তিনি নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার কারণে সর্বোপরি বয়েসেই আল - আমীন । উপাধিতে ভূষিত হওয়ায় মক্কা ।
শহরে বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেন । তাঁর সততা , নিষ্ঠা , আমানতদারিতা , ন্যায় পরায়ণতা , বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক মাধুর্যের কথা খাদীজা ( রা : ) - এর কানেও পৌছেছিল। এদিকে খাদীজা ( রা:) তাঁর ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বিশ্বস্ত লোক খুঁজছেন জানতে পেরে রাসূল ( সা : ) - এর চাচা আবু তালিব মুহম্মদ ( সা:) কে একদিন ডেকে বললেন ,.......ভাতিজা ! আমি একজন দরিদ্র মানুষ , সময়টাও খুব সংকটজনক । মারাত্মক দুর্ভিক্ষের কবলে আমরা নিপতিত । আমাদের কোন ব্যবসায় বা অন্য কোন উপায় - উপকরণও নেই।
হযরত খাদীজা ( রা:)জীবনী ২য় পর্ব
...........তােমার গােত্রের একটি বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়া যাচ্ছে । খাদীজা তার পণ্যের সাথে পাঠানাের জন্য একজন লােকের খোঁজ করছেন । তুমি যদি তাঁর কাছে যেতে , হয়তাে তােমাকেই তিনি নির্বাচন করতেন । তােমার চারিত্রিক নিষ্কলুষতা তার জানা আছে ।
চাচা আবূ তালিবের প্রস্ত বের জবাবে রাসূল ( সা:)বললেন , ' সম্ভবতঃ তিনি নিজেই লােক পাঠাবেন।
দেখা গেল সত্যি সত্যিই খাদীজা ( রা:) লােক পাঠিয়েছেন , মুহাম্মদ ( সা:) যদি তাঁর ব্যবসার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিরিয়া যান তাে তিনি তাকে অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ মুনাফা দেবেন । রাসূল ( সা:) রাজি হয়ে গেলেন এবং একদিন সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন । সিরিয়ার পথে এক গীর্জার পাশে একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য বাণিজ্য কাফেলা নামিয়ে বসলেন রাসূল ( সা:) ও তাঁর সঙ্গীরা । এ সময় রাসূল ( সা : ) - এর সংগে ছিল খাদীজা ( রা : ) - এর বিশ্বস্ত দাস মায়সারা ।
তখন কাফেলার লােকজনকে দেখে গীর্জার পাদ্রী এগিয়ে এলেন এবং মায়সারাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ গাছের নিচে বিশ্রামরত লােকটি কে ? ' ময়সারা বললেন , মক্কার হারামবাসী কোরাইশ গােত্রের একটি লােক । ' পাদ্রী বললেন...
' এখন এই গাছের নিচে যিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি একজন নবী ছাড়া আর কেউ নন ।
ঐ পাদ্রীর নাম কী ছিল জান ?
নাসতুরা ' ।
অবশ্য কোন কোন ঐতিহাসিক বলেছেন ঐ পাদ্রীর নাম ছিল বুহাইরা ।
সিরিয়ার বাজারে গিয়ে যথাসম্ভব উচ্চ মূল্যে পণ্য - সামগ্রী বিক্রি করে প্রয়ােজনীয় মাল সামান কম মূল্যে ক্রয় করলেন রাসূল ( সা:) । তারপর সংগী মায়সারাকে নিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হলেন । পথ চলতে চলতে মায়সারা তাজ্জব হয়ে লক্ষ্য করলেন , নবী করীম ( সা:) তাঁর উটের পিঠে সওয়ার হয়ে চলেছেন , আর দু’জন ফেরেশতা দুপুরের প্রচণ্ড রােদ থেকে বাঁচানাের জন্য তার মাথার ওপর ছায়া বিস্তার করে আছে ।
এভাবে তারা । মক্কায় ফিরলেন । ঘরে ফিরেই মায়সারা তার মনিব খাদীজা ( রা : ) - কে পাদ্রীর মন্তব্য ও পথের ঘটনা সব খুলে বলল । মক্কায় ফিরে সিরিয়া থেকে আনা পণ্য - সামগ্রী বিক্রি করে দিয়ে রাসূল ( সা:) দেখলেন এ যাত্রা প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা অর্জিত হয়েছে । তিনি সমস্ত হিসাব - নিকাশ খাদীজা ( রা : ) - কে বুঝিয়ে দিলেন ।
সুন্দরী , বুদ্ধিমতি , বিচক্ষণ সর্বোপরি অসম্ভব ভদ্রমহিলা ছিলেন হযরত খাদীজা ( রা:) । কিন্তু তিনি ছিলেন একজন বিধবা । যে কারণে মক্কার অনেক সম্রান্ত কোরাইশ যুবক তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন ।
তাদের অনেকে প্রস্তাবও পাঠিয়েছিলেন । সে সব প্রস্তাব খাদীজা ( রা:) বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দেন ।
এরপর অনুগত ও প্রিয় দাস মায়সারার কাছে রাসূল ( সা:) সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার পর হযরত ইয়ালার স্ত্রী ও খাদীজা ( রা : ) এর বান্ধবী নাফিসা বিনতু মারিয়ার মাধ্যমে রাসূল ( সা : ) - এর কাছে । বিয়ের প্রস্তাব পাঠান । নাফিসা রাসূল ( সা : ) - এর কাছে এভাবে প্রস্তাব ।
পেশ করেন , ' আপনাকে যদি ধন - সম্পদ , সৌন্দর্য ও জীবিকার নিশ্চয়তার দিকে আহবান জানানাে হয় , আপনি কি গ্রহণ করবেন ?
এখানে তােমাদেরকে একটি তথ্য দিয়ে রাখি , আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে আরবের সেই জাহেলী যুগেও মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে তাদের মতামতের স্বাধীনতা ছিল । তারা নিজেদের বিয়ে - শাদী । সম্পর্কে নিজেরা সরাসরি কথা বলতে পারতাে । প্রাপ্ত বয়স্কা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কা সবাই সমভাবে এ অধিকার ভােগ করতাে ।
যে কারণে খাদীজা ( রা : ) - এর চাচা বেঁচে থাকা অবস্থায়ও তিনি সরাসরি রাসূল ( সা : ) - এর নিকট নিজের বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন ।
রাসূল ( সা:) প্রস্তাব গ্রহণ করলে খাদীজা ( রা : ) - এর চাচা আমর বিন আসাদের পরামর্শে পাঁচশ ’ স্বর্ণমুদ্রা দেনমােহর ধার্য করা হয় । বিয়ের দিন রাসূল ( সা : ) - এর পক্ষ থেকে খাদীজা ( রা : ) - এর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন , চাচা আবূ তালিব , হামজা সহ তার খান্দানের আরাে কিছু লােক ।
খাদীজার পক্ষ থেকেও বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত হলেন । উভয়পক্ষের বিশিষ্ট মেহমানদের উপস্থিতিতে আবূ তালিব প্রাণপ্রিয় ভাতিজার বিয়ের খােতবা পাঠ করেন এবং বিয়ে পড়ান । এ সময়ে নবী করীম ( সা : ) - এর বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর , আর খাদীজা ( রা : ) - এর বয়স ছিল ৪০ বছর । হ্যা ! রাসূল ( সা:) হযরত খাদীজা ( রা : ) - এর চেয়ে ১৫ বছরের ছােট ছিলেন । এই বিয়ের ১৫ বছর পর অর্থাৎ রাসূল ( সা : ) - এর বয়স যখন
৪০ বছর তখন । তিনি নবুয়ত লাভ করেন । হেরা গুহায় প্রথম অহী নাযিলের বিষয়টি সর্বপ্রথম তিনি খাদীজা ( রা : ) - কে জানান । খাদীজা ( রা:) তাে , তার বিয়ের আগে থেকেই রাসূল ( সা : ) - এর নবী হওয়া সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন । যে কারণে তিনি বিষয়টি সামলে নিতে পেরেছিলেন ।
এ ব্যাপারে সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে- হযরত আয়েশা ( রা:) বলেন , রাসূল ( সা : ) - এর প্রতি প্রথম ওহীর সূচনা হয় ঘুমে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে । স্বপ্নে যা কিছু দেখতেন তা সকালবেলায় সূর্যের আলাের মত প্রকাশ পেত ।
তারপর তিনি নির্জনে থাকতে ভালবাসতেন । খানাপিনা সংগে নিয়ে হেরা গুহায় চলে যেতেন। সেখানে একাধারে কয়েকদিন
ইবাদতে মশগুল থাকতেন । খাবার শেষ হয়ে গেলে আবার খাদীজার কাছে ফিরে আসতেন। খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আবার গুহায় ফিরে যেতেন । এ অবস্থায় একদিন তাঁর কাছে সত্যের আগমন হলাে । ফেরেশতা এসে তাঁকে বললেন , আপনি পড়ুন । তিনি বললেন , আমি তাে পড়া - লেখার লােক নই ।
ফেরেশতা তাকে এমন জোরে চেপে ধরলেন যে , তিনি কষ্ট অনুভব করলেন । ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন , পড়ন । তিনি আবারাে বললেন , আমি পড়া - লেখার লােক নই । ফেরেশতা দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারও তার সাথে প্রথমবারের মত আচরণ করলেন । অবশেষে বললেন , পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন । যিনি সৃষ্টি করেছেন , মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে ..... রাসূল ( সা:) ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরলেন ।
খাদীজা ( রা : ) - কে ডেকে বললেন , আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও , তিনি তাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলেন । তার ভয় দূর হয়ে গেল । তিনি খাদীজা । ( রা : ) - এর কাছে পুরাে ঘটনা খুলে বললেন এবং নিজের জীবনের আশঙ্কার । কথা । করলেন । খাদীজা ( রা:) বললেন , না , তা কক্ষণাে হতে পারে না ।
আল্লাহর কসম , তিনি আপনাক লাঞ্ছিত করবেন না । আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়কারী , গরীব - দুঃখীর সাহায্যকারী , অতিথিপরায়ণ ও মানুষের বিপদে সাহায্যকারী । এরপর খাদীজা ( রা:) রাসূলুল্লাহ ( সা : ) - কে সংগে করে তাঁর চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফলের কাছে গেলেন । সেই জাহেলী যুগে তিনি । খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন । হিব্রু ভাষায় ইনজীল কিতাব লিখতেন । তখন তিনি বৃদ্ধ ও দৃষ্টিহীন । খাদীজা ( রাঃ ) বললেন , শুনুন তাে আপনার ভাতিজা কি বলে । তিনি জিজ্ঞেস করলেন , ভাতিজা , তােমার বিষয়টি কী ?
হযরত খাদীজা ( রা:)জীবনী ৩য় পর্ব
রাসূলুল্লাহ ( সা:) পুরাে ঘটনা বর্ণনা করলেন । শুনে ওয়ারাকা বললেন , এতাে সেই মানুষ আল্লাহ যাকে মূসা ( আ . ) - এর কাছে পাঠিয়েছিলেন । আফসােস্ ! সেদিন যদি আমি জীবিত ও সুস্থ থাকতাম , যেদিন তােমার দেশবাসী তােমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে । রাসূলুল্লাহ ( সা:) জিজ্ঞেস করলেন , এরা আমাকে দেশ থেকে বের করে দেবে ? তিনি বললেন , হ্যা , তুমি যা নিয়ে এসেছাে , যখনই কোন ব্যক্তি তা নিয়ে এসেছে , সারা দুনিয়া তার বিরােধী হয়ে গেছে । যদি সে সময় পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকি , তােমাকে সব ধরনের সাহায্য করবাে ( সহীহ বুখারী -১ ম খণ্ড ) । ওয়ারাকা এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই ইন্তেকাল করেন ।
ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে হযরত খাদীজা ( রা:) পুরােপুরি রাসূলুল্লাহ ( সা : ) - কে অনুসরণ করা শুরু করেন । নামায ফরজ হওয়ার । আগে থেকেই তিনি রাসূলুল্লাহ ( সা : ) - এর সাথে ঘরের ভেতর নামায আদায় করতেন । এ অবস্থা একদিন বালক আলী দেখে ফ্যালেন এবং জিজ্ঞেস করেন , মুহাম্মদ এ কি ? ' রাসূল ( সা:) এ সময় নতুন দ্বীনের দাওয়াত আলী'র কাছে পেশ করেন এবং বিষয়টি গােপন রাখার জন্য বলেন । এ সময় ইসলামের হাল অবস্থা ছিল আফীক আল কিন্দীর ভাষায় , ‘ আমি জাহেলী যুগে মক্কায় এসেছিলাম স্ত্রীর জন্য আতর এবং কাপড় - চোপড় ক্রয় করতে । সেখানে আব্বাস ইবনে আবদুল মােত্তালেবের কাছে অবস্থান করি । ভােরবেলা কা'বা শরীফের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে । আব্বাসও আমার সাথে ছিলেন।
এ সময় একজন যুবক আগমন করেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ায় । কিছুক্ষণ পরই একজন নারী এসে এদের পেছনে দাঁড়ায় । এরা দু'জন যুবকটির পেছনে নামায আদায় করে চলে । যায় । তখন আমি আব্বাসকে বললাম , আব্বাস ! আমি লক্ষ্য করছি , একটি বিরাট বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে ’ আব্বাস বললেন , ' তুমি কি জান , এ যুবক এবং মহিলাটি কে ? আমি জাবাব দিলাম , না । ' তিনি বললেন , যুবকটি হচ্ছেন আমার ভ্রাতুস্পুত্র মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মােত্তালিব , আর শিশুটি হচ্ছে আলী । আবু তালিব ইবনে আবদুল মােত্তালিবের পুত্র । যে নারীকে তুমি উভয়ের পেছনে নামায আদায় করতে দেখেছাে , তিনি হচ্ছেন আমার জোয়ান ভাতিজা মুহাম্মদ - এর স্ত্রী খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ । আমার ভাতিজার ধারণা , তার ধর্ম খাছ । ইসলামী ধর্ম এবং তিনি যা কিছু করেন , আল্লহর হুকুমেই করেন । যতদূর আমার জানা আছে , সারা দুনিয়ায় এ তিনজন ছাড়া আর কেউ তাদের দ্বীনের অনুসারী নেই । এ কথা শুনে আমার মনে আকাঙ্ক্ষা জাগে যে , চতুর্থ ব্যক্তি যদি আমি হতাম ' ( তাবাকাত , ৮ ম খণ্ড , পৃ . ১১ ) ।
তােমাদেরকে আগেই বলেছি , হযরত খাদীজা ( রা:) তৎকালীন সময়ে আরবের একজন প্রভাবশালী মহিলা ছিলেন । ফলে তার ইসলাম গ্রহণের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পিতৃকুলের লােকদের ওপরও পড়ে । জানা যায় তাঁর পিতৃকুল বনু আসাদ ইবনে আবদিল উযার জীবিত পনের জুন বিখ্যাত ব্যক্তির দশজনই ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম কবুল করেন । এর মধ্যে খাদীজার ভাতিজা হিযামের পুত্র প্রখ্যাত সাহাবা হাকীম জাহেলী যুগে মক্কার ‘ দারুন নাদওয়ার পরিচালনার ভার লাভ করেন । অপর ভাতিজা আওয়ামের পুত্র প্রখ্যাত সাহাবী যুবাইর ( রা:) । এই যুবাইর ( রা : ) - এর মা ছিলেন রাসূল ( সা : ) - এর আপন ফুফু । হযরত খাদীজা । ( রা : ) - এক বােন ‘ হালা ’ ছিলেন রাসূল ( সা : ) - এর মেয়ে জয়নাব ( রা : ) এর স্বামী আবুল আস ইবন রাবী’র মা । এই ‘ হালা’ও ইসলাম কবুল করেছিলেন ।
হযরত খাদীজা ( রা:) সেই সম্মানিতা মহিলা যিনি নবীজীর নবুয়াত প্রাপ্তির সুসংবাদ প্রথম শুনেছিলেন । তিনি নির্দ্বিধায় রাসূল ( সা:) নবুয়াতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলন এবং ইসলাম কবুল করেছিলেন । তিনিই
সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন । সাথে সাথে তার সমস্ত অর্থ - সম্পদ রাসূল ( সা : ) - এর হাতে সােপর্দ করেছিলেন তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী খরচ করার জন্য । রাসূল ( সা : ) - এর সাথে তার ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে তিনি রাসূল ( সা : ) - এর বিপদে - আপদে , সুখে - দুখে সর্বোত্তম বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছেন । একজন শানাদাত্রী হিসেবে সময়ে - অসময়ে সকল প্রকার সাহায্য সহযােগিতা করেছেন । রাসূল ( সা:) নিজেও খাদীজা ( রা : ) - কে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন ।
যে কারণে নিজের থেকে ১৫ বছরের বড় খাদীজা ( রা:) জীবিত থাকা । অবস্থায় তিনি আর দ্বিতীয় বিবাহ করেন নি । রাসূল ( সা:) খাদীজা ( রা : ) - কে কেমন ভালবাসতেন তা হযরত আয়েশা ( রা : ) - এর বর্ণনা থেকে ধারণা করা যায় । তিনি বলেন , ‘ খাদীজার প্রতি আমার । যতটা ঈর্ষা ( ? ) ছিল রাসূল ( সা : ) - এর অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি ততটা ছিল না । একদিন রাসূল ( সা:) আমার সামনে তাঁর কথা । উল্লেখ করলে আমি ঈর্ষান্বিত হয়ে বলি , সে তাে ছিলাে বৃদ্ধা ।
স্ত্রী , এখন আল্লাহ তা'আলা আপনাকে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট স্ত্রী । দান করেছেন ; তবুও আপনি তাঁর কথা কেন স্মরণ করছেন ? ' আমার কথা শুনে আল্লাহর রাসূল ক্রুদ্ধ হন । রাগে তাঁর পশম মােবারক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । তিনি বলেন , ' আল্লাহর কসম , তার চেয়ে উত্তম স্ত্রী আমি পাইনি । যখন সকলে ছিল কাফির , তখন সে ঈমান এনেছিল । যখন সকলে।
চলবে...... ইন সা আল্লাহ্।