ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - a romantic love story

 ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প  নিয়ে আজকের এই পেইজে হাজির হয়েছি নিওটেরিক আইটির এক অন্যতম সদস্য । খুব রোমান্টিক গল্প,ভাড়াটে বউ,ভালোবাসার গল্প,জীবনের গল্প,বিয়ের রাতের গল্প,রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প,নতুন প্রেমের গল্প,গল্প কাহিনী,ভালবাসার কাহিনী,দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প,নতুন রোমান্টিক গল্প,ভালবাসার গল্প,রোমান্টিক গল্প,বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প,জোর করে বিয়ে ভালোবাসার গল্প,বর বউয়ের রোমান্টিক গল্প,কাছে আসার গল্প,রোমান্টিক বউ,ভাড়াটে বউ,রোমান্টিক ঝগড়া,আন্টি যখন রোমান্টিক বউ,ঝগড়াটে বউ,গার্লফ্রেন্ড যখন ভাড়াটে বউ,না বলা ভালোবাসা | সকল পর্ব এই ধরনের কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করা ব্যক্তিদের জন্য আজকের গল্প 

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - a romantic love story


ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - a romantic love story

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ১

মেয়েটিকে ২ মাসের জন্য বউ হিসাবে ভাড়া করে

এনেছে রিয়ান। মেয়েটির নাম রাইসা। খুব দারিদ্র্য

পরিবারের মেয়ে বিধায়, বাবা চিকিৎসার টাকা জোগাড়

করতে রিয়ানের২ মাসের ভাড়াটে বউ হিসেবে

অভিনয় করার এ্যাগ্রিমেন্টটা হাসি মুখে মেনে

নিয়েছে। অবশ্য এখানে রিয়ানের কোনো

জোর জবরদস্তি ও ছিলোনা।রিয়ান বিরাট

বোড়লোক শামছুল হকের একমাএ পুএ সন্তান, বাবা

- মায়ের আদরের সন্তান বিধায় ছোটবেলা থেকে

কখনো অভাব কিংবা বাস্তবতা এগুলো তাকে স্পর্শ

করতে পারেনি। আর স্পর্শ করতে পারেনি বিধায়

আজ রিয়ানের তার বাস্তবতাকে মেনে নিতে খুব

কষ্ট হচ্ছে। কারো জন্য সে জিবনটাকে বার - বার

থামিয়ে দিতে চাচ্ছে, সুন্দর জিবনটাকে অভিশাপের

কালো অধ্যায়ে পরিনত করে ফেলেছে। দিনরাত

অন্ধকার ঘরে ঘুমোট ভাবে নির্জিবতার আড়ালে

বসে থেকে নিকোটিন আর মদের সাথে বন্ধুত্ব

করছে। মা- বাবার চোখের সামনে সন্তানের এই

দশা, দেখে মিষ্টার শামছুল হক আর সহ্য করতে

পারছিলেন না।

অবশ্য সহ্য করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ও

ছিলো না। কেননা রিয়ান তো তার অতীতটাকে

কোনো মতেই ভুলার চেষ্টা করছেনা। বরং দিন-

দিন আর ও বেশি অতীতটাকে আকড়ে ধরে বাচার

চেষ্টা করছে। আর এই অতীতটাকে ও যতবেশি

আকড়ে ধরবে তত বেশিই ও ক্রমশ শেষ হয়ে

যাবে।রিয়ানের বাবা ছেলের এই অবস্থা আর

দেখতে পারছেনা, কেননা দেখতে - দেখতে

৩ টা বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এতো সময়

দেওয়ার পর ও রিয়ান এতোটুকু বদলায় নি। ছেলের

চিন্তায় ক্রমশ মিষ্টার শামছুল হকের শরীর দূর্বল

হয়ে যাচ্ছে। আর এই দূর্বলতার ফলে এবং

ছেলের জন্য অতিরিক্ত টেনশানের ফলে মিষ্টার

শামছুল হক গত ৪ দিন আগে হঠ্যাৎ করে হার্ট

স্টোক করে। ছোটবেলা থেকেই রিয়ানের

কাছে তার রিয়েল হিরো ছিলো তার বাবা। সেই

বাবার অসুস্থতা রিয়ানকে খুব বেশি ইমোশনাল করে

ফেলে। কেননা ও ইতোমধ্যেই নিজের হিয়ার

মাঝে স্হান দেওয়া একজন মানুষকে হারিয়ে

ফেলেছে । বাবাকে ও যদি সেই মানুষটার মতো

হারিয়ে ফেলে, এই চিন্তাদারা আর ভয় ক্রমশ

রিয়ানকে আর বেশি ইমোশনাল করে ফেলে।

আর রিয়ানের এই ইমোশনালটাকেই মিষ্টার শামছুল

হক তার কাজে লাগায়।ডাক্তার মিষ্টার শামছুল হকের

চিকিৎসা করার পর রিয়ানকে এসে বলে -- ওনাকে দয়া

করে কখনো উওেজিত করবেন না, কেননা ওনি

যদি আর একবার স্টোক করে তাহলে কিন্তু...

যাইহোক ওনি যা চায় সবসময় তাই করার চেষ্টা

করবেন, যত পারবেন ওনিকে চিন্তা থেকে দূরে

রাখবেন। আর আই থিংক ওনি সবথেকে বেশি

টেনশান আপনাকে নিয়ে করে , কারন ওনির জ্ঞান

ফিরার পর থেকে ওনি বারবার একটা কথাই বলছেন ---

রিয়ান, নতুন করে জিবনটাকে শুরু কর বাবা। রিয়ান

এভাবে নিজেকে শেষ করে, ফেলিস না বাবা।

ডাক্তারের কথাগুলো শুনে রিয়ানের চোখ দুটো

লাল হয়ে গেলো, খুব গম্ভীর টাইপের

ছেলে, নিজের কষ্টগুলোকে কখনো কারো

কাছে প্রকাশ করেনা। আর বোধ হয় বিধাথা ওর

নিশ্চুপ চোখ দুটোতে এক ফোটা ও জল

দেয়নি।তাইতো ওর মন আকাশে মেঘেরঘটা

থাকলে ও চোখের মধ্য কখনো বৃষ্টি জড়েনা ।

সেদিন ও নিজেকে এভাবে পাথর করে

রেখেছিলো যেদিন ও নিজের সবথেকে

কাছের মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছিলো।

ডাক্তার রিয়ানের এই নিশ্চুপতা দেখে কাতর স্বরে

রিয়ানকে বলে উঠলো--- রিয়ান অতীতে যা

হয়েছিলো প্লিজ ভুলে যাওনা,

রিয়ান তখন অট্রহাসি দিয়ে বলে উঠলো --- আপনে

সবকিছু জানার পর ও কিভাবে এটা বলছেন?

--- দেখ রিয়ান জিবন কারো জন্য থেমে

থাকেনা,আর হ্যা বিধাথা তোমার ভাগ্য এভাবে

লেখেছে বিধায় তোমার সাথে এমন হয়েছে।

আর তাছাড়া তুমি কি তোমার অতীতের জন্য

তোমার আরেকটা প্রিয় মানুষকে হারাতে চাও,

তোমার মাকে রঙীন শাড়ি থেকে বিধবা শাড়ি

পরনে অবস্থায় দেখতে চাও?

ক্রমশ চুলগুলোকে টানতে-- টানতে রিয়ান বলে

উঠলো --- না,কখনো না, ডাক্তার।

--- তাহলে, প্লিজ বাবার কথাটা শুনো।

ডাক্তারের কথাগুলো শুনে রিয়ান থ হয়ে নিচে

বসে যায়।কেননা গত ২ বছর যাবত রিয়ানের বাবা

রিয়ানের কাছে একটা আবদারেই শুধু করছে --- বাবা

বিয়ে কর, বাবা জিবনটাকে নতুন করে শুরু কর। যখনি

রিয়ানকে মিষ্টার শামছুল হক এ কথাগুলো বলতো

তখনি রিয়ান পাগলের মতো আচরন শুরু করতো,

ঘরের জিনিস পএ সব ভেঙে ফেলতো অন্ধকার

ঘরে দোর দিয়ে দিনের পর দিন পার করে

দিতো।

রিয়ানের চোখের সামনে সেই স্মৃতি গুলো

ভেসে আসলো, সাথে আর ও একটা স্মৃতি ও

ভেসে আসলো, কয়েকদিন আগে ও মিষ্টার

শামছুল হক হঠ্যাৎ রিয়ানের ঘরে ঢুকে অঝোর

দ্বারা কেঁদে বলে উঠেছিলো--- বাবা আমি যদি

মরে ও যাই তাহলে তোর কাছে আমার দাবি ও

শেষ ইচ্ছে থাকবে ---- তুই নিজের জিবনটাকে

নতুন করে শুরু করবি এই ঘর আলো করে একটা

লক্ষী বউ ঘরে আনবি।রিয়ানের এই কথাটি মনে

পড়তেই ও বুঝে গেলো তার বাবাকে সুস্থ করার

মক্ষম উপায়টা কী।

আর এ ও বুঝে গেলো ডাক্তার তাকে কি করতে

বলছে।

--- কিন্তু ডাক্তার আপনে তো জানেন আমার পক্ষ

এটা করা সম্ভব না।

---- আমি জানি, কিন্তু তুমি কি চাও তোমার বাবাকে সুস্হ

করতে?

--- হুম।

--- তাহলে বিয়েটা করে ফেলো।

বিয়ে শব্দটা শুনতেই রিয়ান রাগান্বিত কন্ঠে

ডাক্তারকে বলে উঠলো--- নো, ডাক্তার,নো

আমি এটা কখনো করতে পারবোনা।

ডাক্তার তখন বললো --- ও রিয়ান কাম ওন, আমি তো

তোমাকে বলি নি তোমার হৃদয়ে অন্য কেউকে

স্হান দেও, আমি শুধু বলেছি তোমার বাবার সুখের

জন্য একটু অভিনয় কর। কেউকে ২ মাসের বউ

হিসাবে ভাড়া কর আন ও।

রিয়ান ডাক্তারের এমন কথায় বলে উঠলো --- কিন্তু

এমন মেয়ে কোথায় পাবো, যে দুই মাসের

জন্য আমার ভাড়াটে বউ হিসেবে অভিনয় করবে?

--- আমার কাছে আছে।

--- মানে!

--- তোমার অতো মানে জানা লাগবেনা, তোমার দুই

মাসের ভাড়াটে বউ লাগবে আর মেয়েটার ১ লক্ষ

টাকা লাগবে, ব্যস কাহীনি খতম।

আর আমার মনে হয় দু মাসের মধ্য তোমার বাবা সুস্হ

হয়ে ও যাবে সো তখন না হয় কোনো একটা

অজুহাত দিয়ে তুমি মেয়েটাকে ডির্ভোস দিয়ে দিও

ওকে।

রিয়ান ডাক্তারটির কথায় সম্মতি দেয়, কেননা রিয়ান

তাকে অনেক বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করে।

কারন এই ডাক্তারটি রিয়ানদের পারিবারিক ডাক্তার। রিয়ান

তাকে মামা বলে ও ডাকে, ধরতে গেলে রিয়ানের

সাথে তার সম্পর্কটা বন্ধুত্বের মতোই । রিয়ানে

সব খারাপ সিশুয়েশনে বন্ধু হিসেবে দুহাতে এই

ডাক্তার অথ্যাৎ সাঈফেই, রিয়ানকে আগলে

রেখেছে।

আর তাই রিয়ান সাঈফের কথামতো রাইসাকে আজ

বিয়ে করছে। চারপাশে লাল- নীল মরিচ বাতি আর

আনন্দের উল্লাসে বিয়ে হচ্ছে রিয়ান আর রাইসার।

রিয়ানের আত্মীয় - স্বজন সবাই আজ ভীষন

খুশী , আর সবথেকে বেশি খুশী মিষ্টার শামছুল

হক আর তার বউ কেননা তাদের ধারনা হয়তো

তাদের ছেলে আবার আগের মতো স্বাভাবিক

জিবন যাপন করবে। আর রাইসার মায়াবী চেহারা, রুপ

লাবন্য আর, মৃদু কথা শুনে রিয়ানের বাবা- মা ওকে বউ

হিসেবে পেয়ে এতটাই খুশী হয়েছে যে

একবার ও ভুল করে ও জিজ্ঞাসা করেনি, ও কোন

পরিবারের মেয়ে, ও কতটুকু পড়াশুনা করেছে, কিংবা

ওর মা- বাবা কোথায়।

শুধু এক মুখ হাসি নিয়ে প্রানভরে রিয়ানকে আর

রাইসাকে দোয়া করে যায়।

আর রিয়ান মা- বাবার মুখে আজ ৩ বছর পর হাসি

দেখতে পেয়ে রাইসার সাথে হাসি মুখে দিব্যি

অভিনয় করে যাচ্ছে। রাইসা রিয়ানের এই হঠ্যাৎ

বদলে যাওয়াটা দেখে নিজেই নিজেকে বলে

উঠলো --- বাবা, এই হট টেমপারেচার হঠ্যাৎ এমন

আইস কুল হলো কেন? কালকেই তো ক্যাফে

আমার সাথে এ্যাগ্রিমেন্ট সাইন করার সময় কি

গম্ভীর কন্ঠে ভাব নিয়ে কথা বলছিলো ---

লিসেন আপনাকে বিয়ে করছি শুধু আমার বাবা- মায়ের

সুখের জন্য সো একদম আমাকে ভুল করে ও তুমি

বলবেন না, মনে রাখবেন জাষ্ট আপনার সাথে

আমার ২ মাসের বিয়ে, দুই মাস পর আপনে আপনার

পথে আর আমি আমার পথে, আর হ্যা নিজের সীমা

একদম অতিক্রম করবেননা, আর ও কত কী ব্লা--

ব্লা।

আর এখন আমাকে মিষ্টি করে বলছে --- তুমি এই

অবস্থায় কমফোর্টেবল ফিল করছো, রাইসা?

যতসব।

রাইসার এই বিড়বিড়িয়ে কথা বলা রিয়ান কিছুটা বুঝতে

পেরে ভ্রু কুচকে রাইসাকে বলে উঠলো---

হ্যালো আপনে কি কিছু আমাকে বলছেন?

--- যাক বাবা একটু আগেই তো আমাকে কী সুন্দর

তুমি বলে কী ডং করলেন। এখন আবার আপনে

তে চলো গেলেন।

--- লিসেন একটু আগে আম্মু - আব্বু এখানে

ছিলো বিধায় তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য

এটা করেছি।

---- ও তাই বলুন এই জন্যইতো বলি হট টেম্পারেচার

হঠ্যাৎ আইসকুল হলো কেন ।

রিয়ান কথাটা শুনা মাএই রাগান্বিত কন্ঠে রাইসাকে বলে

উঠলো

--- এক্সকিউসমি।

রাইসা রিয়ানের চোখ মুখ দেখেই বুঝে

ফেললো ও ক্ষেপেছে তাই টপিকটা চেন্জ

করার জন্য হাসি মুখে রিয়ানকে বলে উঠলো,

আরে দেখুন সবাই আমাদের ছবিও তুলছে ওই

দিকে খেয়াল করেন, না হলে বুঝে ফেলবে ---

কুস তো গড়মিল হে।

-- বাচাল।

রিয়ানের বাচাল মন্তব্যটা শুনে রাইসা রাগান্বিত স্বরে

রিয়ানকে বলে উঠলো --- আপনে কি, হ্যা একটা

বক রাক্ষস মুখে একটু ও হাসি নেই, জিবনে কি

কখনো হাসতে শিখেননি।

রাইসার এরকম কথায় রিয়ানের হঠ্যাৎ পুরোনো সেই

স্মৃতিগুলো চোখের সামনে চলে আসলো,

একটা সময় ছিলো যখন এই মুখে হাসি ছাড়া বিষাদের

মেঘ কখনোই ঠাই পেতো না। কিন্তু আজ যে

হাসিটা দিয়েছিলো সেই কেড়ে নিয়ে অনেক

দূরে চলে গেলো।

রিয়ানের এসব স্মৃতি মনে পড়তেই ও ককর্শ

কন্ঠে রাইসাকে বললো --- ডোন্ট ক্রস ইওর

লিমিট।

কথাটি বলেই জায়গাটি ত্যাগ করে চলে গেলো।

রিয়ানের এরুপ আচরন দেখে রাইসা বলে উঠলো

--- বাবা এতো দেখছি পাগলের পাল্লায় পড়লাম,

ভাড়াটে বউ ওকে তোর সাইজ করতেই হবে।

হঠ্যা ৎ রাইসার মনে হলো, পিছন থেকে কেউ

একজন তাকে বলছে

--- মা, কোনো সমস্যা হয়েছে?

মেয়েলী কন্ঠটা পেয়ে রাইসা পিছনে তাকিয়ে

দেখে রিয়ানের মামা রাইসার মাথায় আলতো করে

স্পর্শ করে এ কথাটি বলেছে।

রাইসা রিয়ানের মাকে দেখে স্নেহ মাখা কন্ঠে

বলে উঠলো--- না, কিছু হয়নি মা।

--- তাহলে রিয়ান এভাবে চলে গেলো কেন?

--- এমনে।

--- ও এরুকুমেই ওকে একটু মা আগের জিবনে

ফিরিয়ে এনো, তাহলে আমি মা সারাজিবন তোমার

কাছে ঋনি থাকবো।

রিয়ানে মা কথাগুলো বলে চোখের জল মুছতে-

মুছতে চলে যায়।

রাইসা তখন বলে উঠলো--- এই হট টেম্পারেচার

কে কিভাবে আমি সামলাবো। আল্লাই জানে।

কাজী চলে এসেছে বিয়ে প্রায় সম্পন্ন, তবে

বিয়েটা সম্পন্ন হওয়ার পর ক্রমশ রিয়ানের চোখে-

মুখে মিথ্যে সুখের যে অভিনয় ছিলো তা

ক্রমান্বয়ে বিষাদের মেঘের কাছে হার

মেনেছে। রিয়ান বারবার রাইসাকে বলতে লাগলো

--- দেখুন ভাড়াটে বউ, আপনে কিন্তু আপনার সীমা

কখনোই ক্রস করবেনা।

রিয়ানের বারবার এই কথাটা য় রাইসা প্রচন্ড রেগে

রিয়ানকে বলে উঠলো --- আরে মশাই এই কথাটা

আর কয়বার বলবেন? লাইফে কত ছেলে

দেখেছি, কিন্তু আপনার মতো একটা গাদা ও দেখিনি।

- --- হ্যালো।

খালি ভাব দেখায় যতসব।

রিয়ান রাইসাকে কিছু বলার আগেই রিয়ানের চাচাতো

বোন মিথিলা দুজনের মাঝে ঢুকে, হাসি মুখে

রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বললো---- কি এতো

কথা ভাবি, এখনি তোমাদের এই অবস্হা।

মিথিলার এরুপ মজা রিয়ানের একদমেই পছন্দ হচ্ছেনা,

গম্ভীর কন্ঠে মিথিলাকে রিয়ান বললো--- মিথিলা

আমি এসব একদমেই পছন্দ করিনা।

রাইসা তখন রিয়ানকে একটা মুখ বেচকি দিয়ে বলে

উঠলো-- না, মিথিলা এসব বলোনা, বরং এখানে দাড়িয়ে

থেকে কারো শোকে নিরবতা পালন কর।

মিথিলা রাইসার এরুপ কথা শুনে হাসতে থাকে, যেই মাএ

রিয়ানের দিকে চোখ পড়ে অমনেই ভয়ে- ভয়ে

রিয়ানকে - স্যরি বলে চলে গেলো।

মিথিলা যাওয়া মাএই রিয়ান রাইসার হাতটাকে শক্ত করে

ধরে বললো--- বেশি বাড় বাড়বেন না হ্যা।

রিয়ান এতটাই জোরে রাইসার হাতটা ধরেছিলো যে

রাইসা প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছিলো। এতটাই পাচ্ছিলো যে

বাধ্য হয়ে সে রিয়ানকে কাতর স্বরে বলে

উঠলো- ব্যাথা পাচ্ছি আমি।

রিয়ান কথাটি শুনা মাএই হাতটা ছেড়ে চলে যায়। রাইসা

হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতটা অনেক লাল

হয়ে গেছে, প্রচন্ড ব্যাথা করছে। না চাইতে

রাইসার চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে

পড়লো।

---- কি হলো ভাবি?

গলার আওয়াজ পেয়ে রাইসা

পাশে তাকিয়ে দেখে মিথিলা, দাড়িয়ে আছে।

রাইসা অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের জলগুলো

মুছে ফেললো, এবং একটু মুচকি হাসি দিয়ে

মিথিলাকে বললো--- কিছু না।

--- তাহলে তুমি কাঁদছিলে কেন?

--- এমনেই, বাবা- মায়ের কথা একটু মনে পড়েছে।

-- থাক ভাবি একদম কাঁদবেনা আর, আর তাছাড়া আজ

থেকে আমরাই তো তোমার আপনজন, বড় মাই

তো আজ থেকে তোমার মা, আর বড় বাবা

তোমার বাবা। আর আমি একমাএ তোমার কিউট

বোন।

রাইসা মিথিলার কথাগুলো শুনে মিথিলাকে জড়িয়ে

ধরলো, আর মনে- মনে ভাবলো --- সবাই কতো

ভালো, শুধু রাক্ষসটাই খারাপ, ওর কীসের এতো

কষ্ট, কেনই বশ হঠ্যাৎ করে প্রচুর রেগে যায়।

না, আমাকে জানতেই হবে।

--- চলো ভাবি এবার তোমাকে তোমার ঘরে

নিয়ে যেতে বলেছে বড় মা।

--- হুম।

রাইসাকে নিয়ে মিথিলা ড্রইং রুমে চলে আসে।

রাইসাকে রিয়ানের মা দেখে অত্যন্ত আদর মাখা

কন্ঠে বলে উঠলো--- মা তোমার কোনো

সমস্যা হচ্ছে।

রিয়ানের মায়ের কথা শুনে রাইসা বিড়বিড় করে বলে

উঠলো --- শুধু বক রাক্ষস টাকে নিয়েই সমস্যা

হচ্ছে।

--কিছু বললে মা?

--- না।

--- ও, আচ্ছা রিয়ান কোথায়।

পিছন থেকে রিয়ান তখন বলে উঠলো --- এই যে

আমি মা।

রিয়ানের ডাক পেয়ে রাইসা পিছনে তাকিয়ে একটা মুখ

বেচকি দিয়ে বলে উঠলো --- শয়তানকা নাম লিয়া অর

শয়তান হাজির।

মিথিলা তখন রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

-- ভাবি তুমি ভাইয়াকে কি বলোছো আমি কিন্তু শুনে

ফেলেছি।

মিথিলার এই কথাটা শুনে রাইসা একটু ভয় পেয়ে যায়,

ভয়ে- ভয়ে মিথিলাকে বললো-- মানে?

--- ভয় পেওনা ভাবি আমি তোমার পক্ষ আছি। এসব

দেবদাসকে এগুলো ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

মিথিলা আর রাইসা দুজনেই রিয়ানকে নিয়ে এরুপ

মন্তব্য করতে থাকে, আর খিলখিল করে হাসতে

থাকে। রাইসা আর মিথিলার হাসি দেখে রিয়ান রাগান্বিত

কন্ঠে রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,---

আমি কী কোনো জোকার যে আমাকে

দেখে এভাবে হাসতে হচ্ছে।

রাইসা রিয়ানের প্রশ্নের উওরে হাসি মুখে বলে

উঠলো --- হয়তো তাই।

--- ইউ।

--- কী হচ্ছে এসব এখনি তোমরা জগড়া করবে

নাকি, চারপাশে কিন্তু অনেক লোক, সো ভাবি চুপ

এন্ড ভাইয়া আপাদত তুমি একটু আইসকুল হওতো।

মিথিলার কথা মতো রিয়ান নিজের রাগটাকে একটু

কন্ট্রোল করে। মিথিলার ভাই অথ্যাৎ রিয়ানের

চাচাতো ভাই রাহুল এসে রিয়ানের হাত ধরে বলে

উঠলো-- আরে ভাইয়া তুমি কী আজকে আমাদের

সময় দিবেনা, চলো বাইরে চলো, বাইরে তোমার

অনেক ফ্রেন্ড তোমার অপেক্ষা করছে।

--- হুম।

রিয়ান চলে যাওয়ার পর রাইসা মিথিলাকে জিজ্ঞাসা করে

--- আচ্চা তোমার ভাইয়া এমন কেন।

---- আস্তে- আস্তে তুমি সব বুঝতে পারবে ভাবি।

এখন ওপরে তোমার রুমে চলো,

রাইসা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মিথিলার হাত ধরে

উপরে যেতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো---

আমি কি এই হট টেম্পারেচারকে ঠিক করতে

পারবো?


ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ২

রাইসার মিথিলার সাথে রিয়ানের রুমে যেতেই, অবাক

হয়ে যায়। পুরো ঘর যেনো স্বর্গীয়র মতো,

ঘরের পশ্চিম পাশে

রাজাদের মতো পালং আর সেই পালংয়ের উপর

গোল্ডেন কালারের একটি বিছানা চাদর যেটি

রোদের কিংবা তীব্র আলোর স্পর্শে লালচে

কালার ধারন করে তার উপরে গোলাপের পাপড়ি

দিয়ে একটা লাভ আকা , বিছানাটার চারপাশে রঙ-

বেরঙের ফুল, যার গন্ধ আর সৌন্দর্য যে

কেউকে ঘরটার প্রতি আকৃষ্ট করে ফেলবে।

বিছানাটার দক্ষিন পাশে, একটা মস্ত বড় জানালা যা দিয়ে

চাঁদেরহাট দেখা যায়। পুরো ঘরে মোট চারটা জানালা,

আর চারটা জানালার মধ্যেই লাল পায়ের গোল্ডেন

কালারের পর্দা, ঘরের দেওয়ালটায় হালকা ব্লু কালার

করা, আর ঘরটার উওর দিকে মস্তবড় এক বারান্দা, যা

দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা যায়।

--- কি ভাবি পছন্দ হয়েছে ঘরটা।

--- হু, কিন্তু।

--- কিন্তু কী?

--- না, আসলে আমি এই প্রথম এতো বিলাস বহল ঘর

দেখেছি।

--- এই টুকু দেখেই তোমার এই অবস্হা। তাহলে

বাকি জিবন কী করবে?

--- মানে?

--- মানে তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে

এর চেয়ে আর ও বেশি বিলাসিতা পছন্দ করে।

যাইহোক তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও, ভাইয়া

কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।

এই কথা বলে মিথিলা চলে যায়।

মিথিলা চলে যাওয়ার পর রাইসা ঘরে ঢুকেই দরজা ভিতর

দিয়ে আটকে দেয়।

তারপর মনের আনন্দ গান- গেতে,গেতে পুরো

ঘর ঘুরে দেখলো।

--- বাহবা, রাক্ষসের দেখি চয়েজ আছে। না,

ক্ষেত টাইপের কোনো ছেলের অন্তত

ভাড়াটে বউ হয়নি।

এই কথা বলতে- বলতে রাইসা পালংটির প্রতি আকৃষ্ট

হয়ে সেটাকে কাছ থেকে দেখার জন্য তার

দিকে যেতেই হঠ্যাৎ তার চোখ পড়লো ঘরের

দেওয়াল গুলোর দিকে।

দেওয়ালের দিকে ভালো করে তাকাতেই রাইসার

মুখটায় বিষাদের কালো মেঘপুঞ্জ বাসা বাধে, রাইসা

দেখতে পেলো রিয়ানের পুরো ঘরের

দেওয়াল জুড়ে শুধু একটি মেয়ের ছবি, আর প্রতিটি

ছবির নিচ দিয়ে লেখা --- এখনো তোমায়

ভালোবাসি রিয়া, চলে গেছো তাই বলে কী

ভুলে যাবো, এখন ও মাঝরাতে তোমার জন্য বুকটা

কেপে উঠে রিয়া ।

রাইসা রিয়ানের এসব কান্ড দেখে সহ্য করতে না

পেরে বলে উঠলো--- ইশ পাগল ও আবার কাব্য ও

লিখে যতসব ডং, কিন্তু এই মেয়েটি কে।সারা ঘর

জুড়ে এই মেয়েটির ছবিই বা কেন।

রাইসা যখন এসব চিন্তাভাবনায় মগ্ন ছিলো, ঠিক তখনি

রাইসার মনে হলো দরজায় কেউ একজন নক

করছে।

দরজার নকের আওয়াজ রাইসার কানে আসতেই রাইসা

প্রচন্ড রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো--এই কে?

ওপাশ থেকে ধমক দিয়ে কেউ একজন বলে

উঠলো--- আমি ?

--- আমি কে?

--- এই বাচাল মেয়ে দরজা খুল।

রাইসা কথাটি শুনেই বুঝতে পারলো রিয়ান ছাড়া এ আর

কেউ নয়।

--- ও তাছাড়া এই ঘরটাতো বক রাক্ষসেরেই, সো

ওইতো এখন এই ঘরে আসবে।

রাইসা গিয়ে দরজাটা খুললো,খুলতেই দেখতে

পেলো রিয়ানের চোখে - মুখে রাগ, রাগ ভাব।

রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে রাইসা ভয়ে- ভয়ে

বলে উঠলো-- হাই সোয়ামি।

--- সেটাআপ। এন্ড...

--- জানি, এখন আপনে আর কী বলবেন, ---

ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।

--- তো তাছাড়া আর কী বলবো,তুমি আমার ঘরে

ঢুকে আমার অনুমতি ছাড়া দরজা লাগিয়েছো সাহস

তো তোমার কম নয়।

--- সাহসের কী দেখছেন আপনে? হুম আপনে

কী জানেন আমি কে?

রিয়ান তখন রাইসার মুখের একদম নিকটে গিয়ে বলে

উঠলো-- কে আপনে।

--- বাবা, এতো দেখছি শুধু হট হয়ে যাচ্ছে,না একে

কন্ট্রোল করতেই হবে এই বলে রাইসা খিলখিল

করে হাসতে- হাসতে রিয়ানকে বলে উঠলো --

হি,হি,, আমি? আমি কেউ না।

-- ইউ

--- আপনে এতো গরম হোন কেন হ্যা?

যাইহোক এই পুরো ঘরে দেওয়াল জুড়ে

এগুলো কার ছবি?

রাইসার এরুপ প্রশ্নে রিয়ানের আচরনের মাঝে

একটু পাগলামি ভাব দেখা গেলো,রিয়ান ছবিগুলোর

অতি নিকটে গিয়ে একটি ছবির মধ্যে হাত দিয়ে

কান্নামাখা কন্ঠে রাইসাকে বলে উঠলো-- এ আমার

সব, এ আমার ভালোবাসা, ও আমার বউ, ও ছাড়া আমার

হৃদয়ে অন্য কারো স্হান নেই আর কখনো হবে

ও না,

আর এ কথাটি মাথায় ঢুকিয়ে নিবেন ওকে, আর ভুল

করে ও কখনো এই ছবিগুলোকে ট্যাঁস

করবেননা।

--- যদি ও আপনার বউ হয় তাহলে আমাকে বিয়ে

করেছেন কেন? আর তাছাড়া ও ইবা কোথায়।

--- সেই কৈফিয়ত আপনার কাছে দিতে আমি বাধ্য নয়।

আর তাছাড়া আপনাকে আমি আমার ভাড়াটে বউ হওয়ার

জন্য জোর করেনি, আপনার টাকা লাগবে বিধায়

আপনে আমার ভাড়াটে বউ হওয়ার জন্য রাজি

হয়েছেন। সো আমার সম্পর্কে কিছু জানার একদম

চেষ্টা করবেননা ওকে.।

এই বলে রিয়ান বিছানার দিকে যেতেই দেখে

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ৩

এই বলে রিয়ান বিছানার দিকে যেতেই দেখে

ফুল,দিয়ে পুরো বিছানা সাজানো, ফুল দেখতেই

রিয়ান ক্রমশ আর ও বেশি রেগে যায়।

রাইসার কাছে গিয়ে রাইসাকে বলে উঠলো-- এই

ঘর ফুল দিয়ে কে সাজালো, হ্যা কে সাজালো।

রাইসা রিয়ানের আচরন দেখে খুব বেশি ভয়

পেয়ে যায়,ভয়ে- ভয়ে রিয়ানের প্রশ্নের উওর

দিলো --; আমি জানিনা।

ওকে ফাইন আজ থেকে জেনো রাখুন --লিসেন,

আমি পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ফুলকে

অপছন্দ করি। আর এসব হয়তো মিথিলার কাজ, যতসব,।

রিয়ান রাইসাকে এই কথা বলে, বিছানার কাছে গিয়ে

পুরো বিছানার চারপাশের ফুলগুলোকে ক্রমশ

ছিড়ে ফেলে দিতে লাগলো আর বলতে

লাগলো--- I don't like flower.

রাইসা রিয়ানের এরুপ ভয়ংকর আচরনে খুব ভয় পেয়ে

যায়,

তারপর ভয়ে- ভয়ে রিয়ানকে থামানোর জন্য ও

রিয়ানের কাছে যায় । রিয়ানের কাছে যেতেই রিয়ান

ওকে জোরেশোরে একটা ধাক্কা মারে, ফলে

রাইসা নিচে পড়ে গিয়ে হাতে প্রচন্ড ভাবে ব্যাথা

পায়।

রিয়ান রাইসার ব্যাথাটাকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না

করে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

রিয়ানের এরুপ নিষ্ঠুরতার আচরন দেখে রাইসা খুব

বেশি কষ্ট পায় --- এতো নিষ্ঠুর কীভাবে একটা

মানুষ হয়, ব্যাথা পেয়েছি অথচ একবার ও

দেখলোনা। এমন কেন ওনি।

তারপর, রাইসা আস্তে- আস্তে

উঠে দাড়ালো, অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে

ধীরে-ধীরে বারান্দার কাছে গিয়ে বাহিরের

দিকে তাকিয়ে রইলো,আর ভাবলো ---

নিচে নিয়ন আলোয় ব্যস্ত শহরের পথগুলো এখন

কেমন নির্জন আর এই নির্জনতায় দিনের আলোয়

সুখী হওয়া মানুষগুলো এখন একটু- একটু করে

নিজেদের কষ্ট গুলোকে আকড়ে ধরবে, আর

সাথে কিছু যাযাবর আবেগ আর ক্ষত -বিক্ষত

স্মৃতিকে।

--- বাহ, বাচাল হলে ও ভালোইতো কথা বলতে

পারেন।

--- কে?

এই বলে রাইসা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে রিয়ান

দাড়িয়ে রয়েছে, একটু অভিমানী কন্ঠে রাইসা তখন

বলে উঠলো --- ও আপনে, হট টেম্পারেচার।

--- আমার উপর অভিমান হয়েছে, কিন্তু তাও আমাকে

হট টেম্পারেচার বলাটা গেলো না ?

রাইসা রিয়ানের প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে,

মুখটাকে নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।

রাইসার এই নিরবতা দেখে রিয়ান চুপচাপ অনেকক্ষণ

বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর একটু-

আমতাআমতা করে বলে উঠলো --- আসলে আমি

দুঃখিত তখন আপনাকে ও ভাবে ধাক্কা দেওয়ার জন্য।

রাইসা রিয়ানের এই অপরাধী বোধ দেখে একগাল

হাসি দিয়ে সব অভিমানকে আড়ালে রেখে রিয়ানকে

বলে উঠলো --- হি,হি,কোনো সমস্যা নেই বক

রাক্ষস।

--কী?

-- না, মানে, রিয়ান সাহেব।

-- আপনে তো ভারী অদ্ভুত মেয়ে, একটু

আগেই তো দেখলাম একরাশ অভিমান, আর এখন

নিমিষেই সব উদাও।

--- ও আমি এরকুমেই।

--- ওকে ফাইন আমার সাথে আসুন।

এই বলে রিয়ান রাইসার হাতটি আলতো করে ধরে

রাইসাকে বারান্দা থেকে ঘরে বিছানায় নিয়ে বসায়,

তারপর --- রাইসার হাতের মধ্যে মলম লাগিয়ে দেয়।

---রাইসা রিয়ানের এই কান্ড দেখে নিজেই,

নিজেকে বলে উঠলো--- কি অদ্ভুত ছেলে, এই

গরম, এই আবার ঠান্ডা। এতো অদ্ভুত কেন ওনি।

--- কিছু ভাবছেন আপনে?

--- ভাবছি কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।

--- হে মানে?

--- মা,মা,মানে আমি বলছি আমি এখন লুডু খেলবো।

--- কী?

--- আস্তে- আস্তে কানের পর্দাটা তো ফেটে

গেলো, আমার।

---বাজে কথা বলা বন্ধ করুন আর ঘুমিয়ে পড়ুন।

এই কথা বলে রিয়ান উঠে দাড়াতেই রাইসা রিয়ানের

হাতটা শক্ত করে ধরে বললো--- সব মেয়ে

বিয়ের রাতে স্বামীর কাছে চাদ দেখার ইচ্ছা

প্রকাশ করে, আর স্বামী ও এমনভাবে বউকে চাদ

দেখায় যে মনে হয় জিবনে এই প্রথম চাদ

দেখেছে, আবার কোনো মেয়ে ছাদে

যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, আর আমি আপনার ভাড়াটে

বউ দেখে আপনার কাছে লুডু খেলার আবদার

করেছি আর আপনে তা পূরণ করবেন না?

-- না, আমি এসব আলতু- পালতু আবদার পূরণ করিনি।

--- কী করবো বলুন আমিই মানুষটাই তো আলতু-

পালতু।

রাইসার এমন কথায় রিয়ানের ওর প্রতি একটু মায়া জাগ্রত

হয়, তাই রিয়ান সহানুভূতিশীল কন্ঠে রাইসাকে বলে

উঠলো--- সবেইতো বুঝলাম বাট স্যরি আমার কাছে

লুডু নেই।

-ঘুমান।

--- আর আপনে কী করবেন? কোথায় ঘুমাবেন,

আমার সাথে নাকি।

--- আজ্ঞে না, আর কী করবো আমি? মেয়ে

মানুষ বিধায় আপনাকে বিছানায় ঘুমোতে দিলাম আর

আমি সোফায় গিয়ে ঘুমালাম।

--- দূত কার পাল্লায় যে পড়লাম।

রিয়ান রাইসার কথায় কোনো পাওা না দিয়ে সোজা

গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। রিয়ানের এই অবস্থা

দেখে রাইসা বলে উঠলো --- আমি লুডু খেলবই,

এই বলে নিজে- নিজে চিল্লাতে লাগলো--- চক্কা,

হুররে।

--- পাচ, পাচ ইয়েস।

রাইসার চক্কা- পাচ চিল্লানিতে রিয়ান সোফায় বসে

পড়লো তারপর বলে উঠলো --- এই আপনে কী

পাগল হয়ে গেছেন, আর লুডুর কোর্ট নেই,

চক্কা- পাচ পাইছেন কই।

--- হি,হি, মনের ভিতর লুডু কোর্টের ছবি একে

খেলছি।

--- উফ, প্লিজ দয়া করে আমায় একটু ঘুমোতে দিন।

--- ওকে যেহুতো দয়া চেয়েছেন তাই আর কথা

বলবোনা।

-- ধন্যবাদ।

এই বলে রিয়ান শুয়ে পড়লো।

রাইসা ও আর কোনো কথা বললোনা।

রিয়ানের মনে হলো রাইসা ঘুমিয়ে পড়েছে,

তাই রিয়ান মনে - মনে বলে উঠলো---

যাক বাবা বাচাল ঘুমিয়ে পেরেছে, যাইহোক আমি ও

এখন একটু ঘুমাই।

এই বলে রিয়ান ঘুমিয়ে পড়লো।

আদঘন্টা পর রিয়ানের মনে হলো তার মুখের উপর

কারো একজনের নিশ্বাস পড়ছে, কেউ একজন

তার মুখের একদম নিকটে এসে জোরে-

জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে।

এই অনূভুতিতে একটু চমকে গিয়ে রিয়ান চোখ

খুলতেই দেখে --- রাইসা।

ভয়ে রিয়ান যেই মাএ বসতে যাবে, অমনেই রাইসা

রিয়ানকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলো।



ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ৪

রিয়ান থাপ্পড়টা খেয়ে কিছুসময় রাইসার

পানে তাকিয়ে

রইলো তারপর সিংহর মতো গর্জন করে

বলে

উঠলো --- আপনি কী পাগল,

-- কে, কে কেন?

--- কেন মানে আমাকে থাপ্পড় মেরে

আবার

কেন বলছেন।

--- আসলে কী বলুন তো আমার না, ঘুম না

আসলে

যাকে সামনে পাই কিংবা আমার

আশেপাশে পাই তাকে

ইচ্ছেমতো মারতে থাকি।

--- আজিব মানুষ তো আপনে,

তো ঘুমান আপনাকে কী কেউ বলেছে রাত

জাগতে?

--- মানেটা কী? কীভাবে আমি ঘুমোবো।

--- কেন চোখ বন্ধ করে ঘুমাবেন।

--- আরে আমি সেটা বলিনী, আমি বলছি

আপনে

তো পুরো বিছানায় ফুল ছিড়ে এক অবস্থা

করে

রেখেছেন, ও গুলো পরিষ্কার না করলে

আমি

কিভাবে ঘুমোবো।

--- তা পরিষ্কার করে ফেলুন।

--- ইশ শখ কত, শুনুন যে ফুল ছিড়েছে তারেই

পরিষ্কার করতে হবে।

--- মানেটা কী?

--- দেখুন, না পরিষ্কার করলে কিন্তু এখন

আপনে

আর ও একটা থাপ্পড় খাবেন, তখন কিন্তু

আমায়

দোষ দিতে পারবেননা।

--- ওকে ফাইন আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি

, বাট আমার

একটা শর্ত আছে।

--- কী শর্ত।

--- বিছানা পরিষ্কার করে দেওয়ার পর এক

মিনিট ও

দেরি না করে আপনে ঘুমিয়ে যাবেন।

--- ঠিক আছে।

রাইসা চুপচাপ বসে থাকে আর,

রিয়ান প্রচন্ড তাড়াতাড়ি করে

বিছানাটা পরিষ্কার করে

ফেলে।

তারপর রাইসাকে গম্ভীর কন্ঠে বললো-- এই

যে

ম্যাডাম - পরিষ্কার করে দিয়েছি,এবার

দয়া করে গিয়ে

একটু ঘুমান,আর আমাকে ও একটু শান্তি দিন।

--- কিন্তু স্যার আমার যে ঘুম পাড়ানির

গান না শুনলে ঘুম

আসেনা।

--- সেটাআপ, আপনে কিন্তু এবার আমাকে

অতিরিক্ত

বিরক্ত করছেন। দেখুন আমার এগুলো একদম

পছন্দ না।

--- আপনে তো একটা ছাগল, এগুলো আপনার

পছন্দ হবে কী করে, যতসব।

এই বলে রাইসা মুখটাকে ভার করে

বিছানায় গিয়ে

শুয়ে পড়ে।

রিয়ান ও তখন আর কোনো কথা না

বাড়িয়ে শুয়ে

পড়ে।

আর অবাক দৃষ্টিতে দেওয়ালের সেই

ছবিগুলোর

পানে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ,

তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠে---

রিয়া

কেন আমায় ছেড়ে চলে গেছো আমি যে

বড্ড বেশি একা হয়ে গেছি,বড্ড বেশি।

রোজ

রাতে রিয়ান এক হাতে নিকোটিন আর

আরেক হাতে

মদের বতল নিয়ে রিয়ার ছবির দিকে

তাকিয়ে এরকম

নানা কথা বলতে থাকে,কখনো বা

চোখগুলো

কষ্টের স্পর্শে লাল করে ছবিগুলোর দিকে

তাকিয়ে থেকে এক- একটা রাতকে

বেহিসাবেই

পার করে দেয় ।

কেননা রিয়ান যখন ছবিগুলোর দিকে

তাকিয়ে থাকে

কিংবা ছবিগুলোর সাথে কথা বলে তখন

ওর

মনে হয় ফ্রেমে বন্ধ থাকা ছবিটির

মানুষটি ও নিশ্চুপ

ভাবে ওর কথাগুলো শুনছে,ওর জন্য

কাঁদছে।

আজ ও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি,

সারারাত নির্ঘুম চোখে ছবির পানে

তাকিয়ে থাকার

কারনে ভোরের দিকে রিয়ানের চোখে

একটু

ঘুম নেমে আসে।

কিন্তু ঠিক ৫.৩০ হাল্কা পানির স্পর্শে

রিয়ানের সেই

ঘুমটা ও ভেঙ্গে যায়,

একটু অস্বস্তিকর ভাব নিয়ে চোখ কচলাতে

--

কচলাতে তাকাতেই রিয়ান দেখতে

পেলো,

রাইসা এক হাতে পানির গ্লাস নিয়ে

দাড়িয়ে আছে।

---এসব কী?

---- স্যরি, দেখুন

এতো বেলা অবদি মুসলিমজাতির ঘুমোতে

নেই,

আর তাছাড়া আপনাকে সেই কখন থেকে

আমি

ডাকছি কিন্তু আপনার কোনো সাড়াশব্দ

নেই তাই

বাধ্য হয়ে এটা করতে হয়েছে।

এবার দয়া করে যান গিয়ে ওজু করুন তারপর

নামাজ

পড়তে যান।

রাইসার কথায় রিয়ান কোনো উওর না

দিয়ে বিছানা

থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।

রিয়ানকে ওয়াশরুমে যেতে দেখে

রাইসার

চোখে- মুখে আনন্দোৎসব নেমে আসে।

কিন্তু পরক্ষণে তা নিমিষেই আবার

মেঘের কাছে

হার মানে।

রিয়ান ওয়াশরুম থেকে এক জগ পানি এনে

সোজা

রাইসার মাথায় ঢেলে দেয়।পানিটা

এতোটাই ঠান্ডা

ছিলো যে তার স্পর্শে রাইসা কাঁপতে

লাগলো।

কিন্তু রিয়ান রাইসার কাঁপুনিকে গুরুত্ব

না দিয়ে অনায়াসে

রাইসাকে বলে উঠলো-- ভাড়াটে বউ

হিসেবে

এসেছেন, ভাড়াটে বউ হয়ে থাকুন, একদম

আমার

উপরঅধিকার ফলাতে চাইবেন না, আর

হ্যা ভুল করে

ও দ্বিতীয় বার এসব কাজ করার আগে

একবার হলে

ও ভাববেন যে আপনে কার সাথে এসব

করছেন,

Understand.

এই বলে,

চোখে - মুখে একরাশ রাগ নিয়ে,

রিয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আর

রাইসা রিয়ানের

চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে -,

তারপর চোখ

থেকে এক ফোটা বৃষ্টি জড়িয়ে বলে

উঠলো --

আসলে পৃথিবীর মানুষগুলো বড়ই অদ্ভুত,

এদের

চেনা বড় দায়। এরা যখন - তখন বদলে

যেতে

পারে, যখন, তখন।

এই বলে রাইসা অঝোর দ্বারা কাঁদতে

লাগলো,

কিন্তু পরক্ষনে রাইসার কান্নাটা হঠ্যাৎ

বন্ধ হয়ে যায়

একটা কথাই ভেবে-- আসলে আমাদের

উচিত

মানুষের বদলে যাওয়াটা না দেখে তার

বদলে যাওয়ার

কারনটা খোজা। আর আজ থেকে সেটাই

আমি

করবো।

চোখের জলগুলোকে মুছে মুখে একগাল

হাসি

নিয়ে রাইসা লাকেজ থেকে জামা-

কাপড় বের

করলো,

মেরুন কালারের একটা শাড়ি নিয়ে

ওয়াশরুমে গিয়ে

চেন্জ করে।

তারপর নামাজ পড়ে, পুরো ঘরটাকে

পরিপাটি করে

সাজাতে শুরু করলো, আলমারিতে তাকের

একপাশে

নিজের জামাকাপড়গুলো, অন্যপাশে

রিয়ানের শার্ট-

প্যান্ট গোছাতে লাগলো, হঠ্যাৎ রাইসার

চোখে

পড়লো রিয়ানের শার্ট- প্যান্টের নিচে

তিনটে

মদের বতল।

বতলগুলো পেয়ে রাইসা অবাকদৃষ্টিতে

বতলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর

নিজেই

নিজেকে বলে উঠলো-- মানুষ নাকি

সৃষ্টির

সেরাজীব, অথচ এই সম্মান পাওয়ার পর ও

এরা সামান্য

কষ্টতে কেন এভাবে ভেঙ্গে পড়ে, ক্রমশ

নিজেকে কেন এভাবে শেষ করে দেয়,

কিন্তু

একবার কী তাদের মাথায় এটা আসেনা

যে--- জিবন

মানে সমস্ত সিশুয়েশনের সাথে

নিজেকে মানিয়ে

নেওয়া, জিবন মানেই এক- একটা আঘাত

থেকে

নতুন করে শিক্ষা নেওয়া।

না, এই ভাবে শেষ হতে আমি আপনাকে

দিবোনা

রিয়ান সাহেব, এই বলে রাইসা মদের

বতলগুলো

আলমারি থেকে সরিয়ে ফেলে।

--- ভাবি, ভাবি।

--- কে?

--- আমি।

--- ও মিথিলা এসো ভিতরে এসো।

মিথিলা ঘরে ঢুকতেই একগাল হাসি

নিয়ে রাইসাকে

বলে উঠলো-- ভাবি প্রথমদিনেই তো তুমি

বাজিমাত

করে ফেলেছো।

--- মানে?

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ৫

--- ভাবি তুমি আবার মানে জানতে চাও,

তুমি জানো ভাইয়া আজকে ভোরে বড়

বাবার সাথে ফজরের নামাজ পড়তে

গেছে।

--- কী বলছো তুমি এসব?

--- হ্যা ভাবি আমি ঠিকেই বলছি, কেননা

আমি নিজ চোখে দেখেছি ভাইয়া টুপি

পড়ে বড় বাবার সাথে মসজিদে যাওয়ার

জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে। আজ এতো

বছর পর এই প্রথম আমি আবার বড় বাবাকে

হাসতে দেখেছি, ভাবি এতো ভালো

একটা কাজ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ

দিয়ে ছোট করবো না।

-- এই মিথিলা তুমি সত্যি বলছো তো?

--- হুম কেন ভাবি।

--আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না এই তুমি

আমাকে একটা চিমটি কাটোতো।

--- ওকে ফাইন।

এই বলে মিথিলা মুচকি হাসতে- হাসতে

রাইসাকে ইচ্ছে করে জোড়েশোরে একটা

চিমটি মারে।

চিমটিটা খেয়ে রাইসা চিৎকার দিয়ে

বলে উঠে --- উহ! মিথিলা চিমটি দিতে

বলেছি বলে এতো জোরে দিবে।

-- স্যরি ভাবি।

কিন্তু রাইসা মিথিলার স্যরি কথাটি না

শুনে আনমনে চিন্তা করতে লাগলো--- সেই

তো নামাজ পড়তে গেলো তাহলে আমার

সাথে কেন এমন আচরন করলো?

আসলে পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা

নিজেদের কষ্ট, অনুভূতি আর নিজের

ভিতরের আসল মানুষটাকে সবার থেকে

লুকিয়ে রাখে, সেই মানুষ গুলোকে চেনা

ও বড় দায়।

এই মানুষটা ও বোধ হয় তাদের তালিকার

একজন হবে।

রাইসার এরুপ রোবটের মতো দাড়িয়ে

চিন্তার জগতে মগ্ন থাকতে দেখে

মিথিলা একটু বিরক্তিকরভাব নিয়ে

রাইসার হাত স্পর্শ করে বলে উঠলো --- কী

এতো ভাবছো ভাবি।

--- না কিছুনা।

--- ও

এই বলে মিথিলা নিজের হাতটা গুটিয়ে

নিতে ব্যস্ত হতেই হঠ্যাৎ ওর মনে হলো

রাইসার শরীরটা কেমন জানি গরম হয়ে

আসছে, একটু অবাক কন্ঠে মিথিলা

রাইসাকে বললো--- ভাবি তোমার শরীর

দেখি গরম হয়ে আসছে।

রাইসা মিথিলার কথা ঘুরানোর জন্য

হাসিমাখা কন্ঠে বলে উঠলো--- আরে

আমার ননদিনী ও কিছুনা। এখন তুমি বল

এতো সকালে আমার ঘরে কেন আসছো।

মিথিলাও তখন রাইসাকে উদ্দেশ্য করে

বলে উঠলো--তোমাকে নিচে মা, বড় মা

ডাকছে চলো। আর তাছাড়া কতক্ষন পর

পাড়ার লোকজন আসবে তোমায় দেখতে।

-- আমায় দেখতে, কিন্তু কেন?

--- বা রে তুমি আমার ভাইয়ের বউ, এ

পাড়ার সব থেকে ধনী শামছুল হক

সাহেবের একমাএ পুএ রিয়ান হকের বউ,

তো তোমাকে দেখতে আসবে না কি

আমাকে দেখতে আসবে, আর তাছাড়া তুমি

নতুন বউ না, সবাই দেখবে না আমার

ভাবিটা কত সুন্দর।

মিথিলার কথায় রাইসা একটু অন্যমনস্ক

হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো-- নতুন বউ,

ভাবি, সবকিছু শুধুমাএ দুই মাসের জন্য। দুই

মাস পর সবকিছু শেষ হয়ে যাবে, সবকিছু।

--- ভাবি তুমি কিছু বললে?

--- হ্যা, না মা,মানে আমি বলেছি,

তাড়াতাড়ি নিচে চলো সবাই আমাদের

জন্য অপেক্ষা করছে।

--- হুম যাবো কিন্তু এখন না।

--- কেন?

--কারন তোমাকে তো এখন ও আমি

সাজালামেই না, বড় মা বলেছে

তোমাকে অনেক সুন্দর করে সাজাতে।

--- এতো সাজ দিয়ে কী হবে।

--- বারে আমার ভাইয়াকে তোমার প্রেম

ফাঁসাতে হবেনা।

রাইসা মিথিলার কথাটার কোনো উওর

না দিয়ে অট্টহাসি দিয়ে মিথিলার

দিকে তাকিয়ে রইলো।

---- ভাবি তুমি ঘরে বসো আমি একটু

আসছি।

--- কোথায় যাচ্ছ?

--- এসে বলবো, জাস্ট পাচমিনিট আর হ্যা

ভাবি এই পাচমিনিট তুমি একদম চুপটি

করে এখানে দাড়িয়ে থেকো।

এই বলে মিথিলা ঘর থেকে বেরিয়ে

যায়।

আর রাইসা অন্যমনস্ক হয়ে বিছানার উপর

বসে ভাবতে লাগলো--- আমি কী এদের

ঠকাচ্ছি, এরা যখন জানতে পারবে আমি

দুই মাসের ভাড়া করা বউ, দুই মাস পর

নিজের ঠিকানায় চলে যাবো তখন এরা

কী করবে। আর , আর হয়তো অনেক কষ্ট ও

পাবে। কিন্তু আমিই বা কী করতে পারি।

আমি যা করছি সব তো.....

--- আসবো।

রাইসা একটু চমকে বলে উঠলো--- কে?

রিয়ান কোনো জবাব না দিয়ে ভদ্র

ছেলের মতো রুমে ঢুকে যায়। রাইসা

রিয়ানকে দেখতে পেয়ে বিছানার

বালিশগুলোকে ঠিক করতে লাগলো।

রিয়ান ও দাড়িয়ে রাইসার বালিশ ঠিক

করার দিকে তাকিয়ে রইলো।

রিয়ানের এভাবে অসহায়ত্ব ভাবে

দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাইসা বালিশ

ঘুচিয়ে একটু শান্ত কন্ঠে রিয়ানকে বললো

--- আপনে কী কিছু বলতে চান?

--- না, মা, মা মানে?

--- কী এতো আমতা - আমতা করছেন। কী

বলবেন বলে ফেলুন এই বলে রাইসা

বিছানাটা ঝারতে লাগলো ।

রিয়ান তখন আস্তে- আস্তে রাইসার কাছে

এসে বলে উঠলো--- হাতটা পাতুন দেখি।

রিয়ানের এমন কথা শুনে রাইসা বিছানা

ঝারা বন্ধ করে বলে উঠলো--- কেন?

--- আরে পাতুন না।

--- ওকে।

একটু অস্বস্তিকর ভাব নিয়ে রাইসা হাত

পাততেই রিয়ান রাইসার হাতে এক পাতা

প্যারাসিট্যামল দিয়ে প্রচন্ড রাগী মাখা

কন্ঠে বলে উঠলো--- এই নিন আগেভাগেই

এখান থেকে ঔষুধ খেয়ে ফেলুন কারন বলা

যায় না সকালের পানিগুলো অনেক

ঠান্ডা ছিলো ওগুলোর স্পর্শতার কারনে

আবার জ্বর না চলে আসে তখন কিন্তু আবার

সব দোষ তো আমার ঘাড়ে এসেই পড়বে।

নিন খেয়ে নিন।

এই বলে রিয়ান নিজের আবেগটাকে

লুকানোর জন্য রাইসার থেকে এক প্রকার

পালিয়ে চলে যেতে লাগলো, ঠিক তখনি

রাইসা একটু হেসে রিয়ানকে বলে উঠলো

--- অল্প জ্বরকেই যদি সহ্য করতে না পারি

তাহলে জিবনের ঝড়কে কীভাবে face

করবো। আর তাছাড়া অসুস্থ না হলে বুঝবেন

কী করে একজন অসুস্থ মানুষের কতটা কষ্ট।

রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান থমকে

গিয়ে রাইসাকে আচমকা কন্ঠে বলে

উঠলো--- মানে?

--- মানে! আপনে বোধ হয় লাইফে কখনো

crisis face করেননি কী তাইনা?

---- তা বলতে পারেন এক প্রকার হ্যা,

আসলে ছোটবেলা থেকে মা -- বাবার

ছায়ার নিচে থেকে মানুষ হয়েছি তো ,

এর জন্য কখনো রিয়েল লাইফের জটিলতার

মুখোমুখি হতে হয়নি।

--- এর জন্যই এই অবস্থা। কিন্তু কী জানেন

আমি face করেছি, প্রতিদিন সত্যিকারের

বাস্তবতাকে, নিজের চোখের সামনে

দেখেছি মর্গে একসাথে স্বামী, ছেলে,

মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে ও দেখে একটি

মেয়ে দমে যায়নি, জিবনটাকে নতুন করে

শুরু করেছে, আমি দেখেছি রোজ চাকরী

খুজতে যাওয়া বেকার সেই ছেলেটি যে

একদিন হঠ্যাৎ করে অ্যাকসিডেন্ট হয়ে

নিজের পা টাকে হারিয়ে ফেলে তবুও

জিবনের কাছে হার মানে নি।

আমি দেখেছি প্রতিদিন শকুনদের কাছে

নিজেকে শপে দেওয়া অসতী পাড়ার

সেই মেয়েটি যে নিজের শরীরের

বিনিময় মা- বাবা , সংসারের আর

বোনের পড়ার খরচ চালায়, অথচ এতোকিছুর

পর ও একটিবারের জন্য ও আত্মহত্যা নামক

পাপের কথা ভুল করে ও চিনতে করেনা।

রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান অবাক

দৃষ্টিতে রাইসার পানে তাকিয়ে থাকে,

তারপর বলে উঠে ---- আমার অনেক কাজ

আছে আমি আসি।

রাইসা ও রিয়ানকে কোনো বাধা

দিলোনা, কেননা রাইসা বুঝতে পেরেছে

--- এই মানুষটি প্রত্যহ নিজের থেকে,

নিজের কাছের মানুষগুলোকে থেকে

পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হয়তো একদিন এই

পালানোর সমাপ্ত হবে।

--- শুনুন একটা কথা ছিলো?

গলার আওয়াজটি পেয়ে রাইসা দরজার

দিকে তাকাতেই দেখে রিয়ান

দাড়িয়ে রয়েছে।

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ৬

---- জ্বি বলুন।

--- না, আসলে আপনার কথা গুলো শুনে আমার মনে

হচ্ছে আপনে যেটা আসলে আপনে সেটা নয়?

--- মানে?

--- না কিছুনা, আসলে মাঝে- মাঝে আপনাকে আমার

খুব রহস্যময় লাগে, খুব।

রিয়ানের এরুপ বক্তব্য শুনে রাইসা আমতাআমতা

করতে লাগলো। ঠিক সেই সময় মিথিলা রিয়ানের

শার্ট পিছন থেকে টেনে ধরে বলে উঠলো---

কী হচ্ছে এসব ভাইয়া?

--- কে, ও মিথি।

--- হুম, তুমি এখানে কী করছো?

--না, মানে...

---- এতো মানে, মানে না করে এখান থেকে যাও

তো আমি এখন ভাবি কে সাজাবো।

মিথিলার কথায় রিয়ান কোনো জবাব না দিয়ে বলতে

গেলে এক প্রকার পালিয়ে চলে যায়।

রিয়ান চলে যাওয়া মাএই মিথিলা রাইসার রুমে ঢুকেই

বিছানার উপর তিনটে বক্স আর একটা শাড়ি রেখে

অতঃপর রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। মিথিলাকে রুমে

ঢুকতে দেখেই রাইসা ঔষুধের পাতাটি বালিশের

তলে লুকিয়ে ফেলে, অতঃপর বিছানার উপর রাখা

গহনার

বক্সগুলো আর শাড়িটা দেখে একটু অবাক ভাবে

মিথিলা কে উদ্দেশ্য করে রাইসা বলে উঠলো---

এসব কী মিথিলা।

--- কেন ভাবী , শাড়ী, গহনা।

--- সে তো আমি ও দেখছি। কিন্তু এতো গরজিয়াছ

শাড়ী, আবার এতো গহনা কার জন্য।

---- কেন তোমার জন্য ভাবি।

--- দেখ আমি এতো গহনা, গরজিয়াছ শাড়ী পড়াতে

অভ্যস্ত নয়।

--- তো কী হয়েছে ভাবী, এখন থেকে

অভ্যাস কর। বিকজ তোমাকে এগুলোই পড়তেই

হবে বড় মায়ের কড়া নির্দেশ।

--- পড়তেই হবে?

--- হুম।

--- কী আর করার পড়া ও তোমার যা ইচ্ছা তাই কর।

--- Thank you ভাবি। এই বলে মিথিলা বিছানার উপর

থেকে শাড়ীটা নিয়ে রাইসার হাতে দদিয়ে

বললো,

--- এই নাও ভাবী এটা পড়ে আস ও ।

--- ঠিক আছে।

রাইসা ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ীটা পড়ে আসে।

রাইসা যখন ওয়াশরুম থেকে শাড়ীটা পড়ে বের হয়

মিথিলা তখন রাইসাকে দেখে পুরো থ হয়ে যায়।

অবশ্য হবেই বা না কেন। একটি মায়াবী চেহারাযুক্ত

মেয়ে যার হরিনের মতো চোখ, রক্ত জবা

ঠোট,তার উপর ঠোঁটের ডানপাশে একটি কালো

তিল আর মাথায় মেঘবরণ কেশ, সে যদি একটি গাড়

নীল গোল্ডেন পুথি দিয়ে কাজ করা

শাড়ী পড়ে, তাহলে তো তার দিকে তাকিয়ে

থেকে যে কেউই এক যুগ ও হয়তো পার করে

দিতে পারে।

--- কী গো ননদী আমার এমন ভাবে কী

দেখছো?

--- উফ! ভাবী এই শাড়ীটা পড়ে তোমাকে

এতোটাই সুন্দর লাগছে যে আমিই তোমার

প্রেমে পড়ে গেলাম, এবার গহনা পড়ালে আর

সাজালে তোমাকে না জানি কত সুন্দর লাগবে,

দেখবে আজকে ভাইয়া তোমার দিক থেকে

চোখ ফেরাতেই পারবেনা।

--- হ্যা তোমার ওই হট টেম্পারেচার ভাই আগে

আমার দিকে তাকালে তো চোখ ফেরাবেনা।

--- তাকাবে,ভাবী তাকাবে। দেখইনা তোমাকে কত

সুন্দর করে সাজাই।

মিথিলা রাইসাকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসিয়ে,

প্রথমে গহনা পড়াতে লাগলো, তারপর নাকে নত

পড়ালো, চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল-খয়রী

লিপস্টিক, আর চুল খোপা করে তার মধ্যে ফুল

গেঁথে দিলো। তারপর রাইসার মুখটাকে হাত দিয়ে

আলতো করে স্পর্শ করে মিথিলা বলে উঠলো--

দেখ ভাবী কেমন সাজালাম তোমায় ?

রাইসা আয়নার মধ্যে নিজের চেহারাটা দেখে, একটু

গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো--- আসলে মিথিলা

আমি না এতো সাজগোজ একদমেই পছন্দ করিনা,

আমার কেমন জানি অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।

--- এতো সুন্দর করে সাজালাম আর তুমি এই বলছো

ভাবী, একটা দিনেই তো আর তাছাড়া তুমি তো নতুন

বউ, তোমাকে তো সাজতেই হবে।

--- দূত ভালো লাগেনা।

--- এসব বললে আর হবে,

এই বলে মিথিলা হাসতে - হাসতে নিচে বসে

রাইসাকে জুতো পড়াতে লাগলো।

রাইসা তখন একটু লজ্জাকর ভাবে মিথিলাকে

বললো--- মিথিলা কী করছো তুমি?

--- ও কিছুনা ভাবী তোমাকে জুতোটা পড়িয়ে

দেই তবেই তো সাজটা পারফেক্ট হবে।

এই বলে মিথিলা রাইসাকে জুতা পড়াতে লাগলো, রাইসা

তখন মিথিলাকে ভয়ে- ভয়ে বলে উঠলো--- মিথিলা,

আমি না উচু জুতো পড়ে হাটতে পারিনা।

এটা না পড়িয়ে অন্য একটা নরমাল জুতো পড়ালে

হয়না?

--- আরে কিছু হবেনা ভাবী আমি আছিনা ধরে -

ধরে নিয়ে যাবো। আর তাছাড়া পড়ে যাও যদি তাহলে

ভাইয়া আছেনা।

--- অ্যাঁ।

--- অ্যাঁ নয় বলো হ্যা সিনেমাতে দেখোনা নায়িকা

পড়ে যেতে লাগলে নায়ক এসে তখন ধরে। উফ!

কী রোমান্টিক সিন।

--- কিন্তু মিথিলা এটা সিনেমা নয় বাস্তব জিবন, আমি

সত্যিই উচু জুতো পড়ে কমফোর্টেবল নয়।

--- ও কোনো সমস্যা নয় পড়ে যেতে লাগলে

ভাইয়া এসে তোমাকে ধরবে। আর পারলে প্লিজ

ইচ্ছে করেই পড়ে যেও।

--- মিথিলা, আমিই মরছি টেনশনে আর তুমি আমার সাথে

মজা করছো।

--- আচ্ছা স্যরি, ভাবী এখন

চলো, নিচে চলো সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা

করছে।

--- যাবো?

--- হুম। তো কী তুমি থাকবা।

--- কিন্তু জুতোটা চেন্জ করবোনা।

--- ওফ ভাবি চলোতো বললাম না আমি আছি।

--- আমি কিন্তু সত্যিই হাটতে পারবোনা, আমাকে

কিন্তু ধরে নিয়ে যেতে হবে।

--- আচ্ছা ঠিক আছে।

এই বলে মিথিলা রাইসাকে ধরে- ধরে উপর থেকে

নিচ অবদি নিয়ে আসলো। নিচে আসতেই মিথিলা

একটু অবাক হয়ে গেলো, কেননা পুরো

ড্রইংরুমে কেউই নেই, একটু বিস্মিত কন্ঠে

নিজেই নিজেকে বলে উঠলো-- কী ব্যাপার

সবাই কোথায়? আমিই কী একটু বেশিই দেরি করে

ফেলেছি।

--- তাই নয়তো কী হ্যা , যে সাজটা সাজালেইনা

দেরি তো আলবাত হয়েছে। দেখ সবাই হয়তো

যে যার কাজে চলে গেছে।

--- আরে কোনো সমস্যা নেই ভাবী, এখনি আমি

সবাই ডাকছি।

এই বলে মিথিলা সামনের দিকে যেতেই দেখতে

পেলো

রিয়ান সোফায় বসে গভীর মনোযোগ সহকারে

পেপার পড়ছে। রিয়ানকে দেখতে পেয়ে মিথিলা

রাইসা দুজনের চোখে- মুখে হাসির জলকানি দেখা

যায়।

মিথিলা রিয়ানকে দেখা মাএই রাইসাকে ছেড়ে

রিয়ানের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে পেপারটা

কেড়ে নেয়। মিথিলার এরুপ কান্ডতে রিয়ান প্রচন্ড

রাগে দাড়িয়ে গেলো, তারপর মিথিলাকে বললো---

- কী হলো মিথি তুই পেপারটা কেড়ে নিলি কেন?

--- সারাদিন পেপারে মুখ ঘুচে আর কতদিন থাকবি

ব্রো এবার একটু আমার ভাবীর দিকে তাকা।

--- মানে?

রাইসা তখন খিলখিল করে হাসতে- হাসতে রিয়ানকে

বলে উঠলো

--- হাই সোয়ামি।

রাইসার

গলার আওয়াজ রিয়ানের কানে আসতেই রিয়ান সামনে

দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সিড়ির পাশে

রাইসা দাড়িয়ে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

রিয়ান রাইসাকে নতুন রুপে কিংবা এতো সুন্দর সাজে

দেখে ও ভালো করে ওর দিকে তাকালো না বরং

মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো --- এসব

কী হচ্ছে মিথি?

--- কী হচ্ছে মানে, তোর জন্য দেখ

ভাবীকে আমি এতো সুন্দর করে সাজালাম আর তুই

কোথায় প্রশংসা না করে বলছিস কী হচ্ছে এসব?

মিথিলার কথায় রিয়ান তখন হাসতে- হাসতে বলে

উঠলে-- মিথি কামওন তুই বোধ হয় ভুলে গেছিস

পেত্নীকে যতই সুন্দর করে সাজায় না কেন

পেত্নীকে পেত্নীই লাগে।

রিয়ানের এমন মন্তব্যে রাইসা প্রচন্ড ক্ষেপে যায়,

এতটাই ক্ষেপে যায় যে কিছুক্ষণের জন্য ও

ভুলে ও যায় যে ওর পায়ে উচু জুতো আছে,

প্রচন্ড রাগে রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে

উঠলো--- কী আপনে আমাকে পেত্নী

বলছেন দেখুন আপনার আমি কী হাল করি। এই

বলে দ্রুত হেটে রিয়ানের কাছে আসতেই ঠাস

করে পড়ে যেতে গেলেই, রিয়ান তৎখনাত গিয়ে

ধরে ফেলে।

রিয়ান নায়কের মতো রাইসাকে গিয়ে ধরায় মিথিলা

আনন্দজনক ভাবে বলে উঠলো--- ওয়া! ও কী

সুন্দর, ভাইয়া ফাটিয়ে দিয়েছিস পুরোই সিনেমার

মতো।

রাইসা মিথিলার কথা শুনে রিয়ানের চোখে - চোখ

রেখে একটু লজ্জিত স্বরে বলে উঠলো---

Thank you মেরা সোয়ামি।

কথাটি শুনা মাএই রিয়ান --- হিহি করে হাসতে- হাসতে

রাইসাকে বললো----Welcome পেত্নী।

এই বলে হাসিটাকে বন্ধ করে অন্য দিকে তাকিয়ে

নিজের হাত দুটো গুটিয়ে ফেললো, ব্যস আর

রাইসা তখন ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।

রাইসাকে পড়ে যেতে দেখে মিথিলা দৌড়ে এসে

রিয়ানকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো--- ভাইয়া

এটা কিন্তু সিনেমাতে হয়না, তুমি দেখি ওকে

বাচানোর বদলে উল্টে ফেলে দিয়েছ।

--- উহ মা, কী ব্যাথাটাই পেলাম, মিথিলা এই বক

রাক্ষসের সাথে কথা না বলে আমাকে প্লিজ উঠা ও।

-- হ্যা ভাবী।

এই বলে মিথিলা রাইসাকে উঠাতে লাগলো।

রিয়ান তখন মুচকি হেসে- হেসে রাইসাকে বলে

উঠলো--- আহারে খুুব বেশি লেগেছে তাইনা,

কী করবো বলুন আপনার মতো একটা চাউলের

বস্তার ভার আমার মতো বাচ্চা কী নিতে পারে?

--- কী আমি চাউলের বস্তা, দাড়ান দেখুন কী করি

আপনার, দূত এই জুতোটা আর পড়বোই না, এই

বলে রাইসা জুতো দুটো ছুড়ে ফেলে দেয় ,

তারপর রাগে গাল দুটো ফুলিয়ে আগ্নেয়গিরি

চোখে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাইসার এই অবস্থা দেখে রিয়ান উচ্চস্বরে হাসতে

লাগলো, মিথিলা তখন টেবিলের উপর থেকে কফির

মগটা নিয়ে আসে, অতঃপর রাইসার হাতে দিয়ে বলে

উঠে--- ভাবী নিজের সম্মান বাচাও।

--- ইয়া নদদীনি, এই বলে মিথিলার হাত থেকে কফির

মগটা নিয়ে রাইসা রিয়ানের মাথায় পুরো কফিটা ঢেলে

দেয়।

ব্যস কফির স্পর্শে রিয়ানের হাসি মুখ আবার রাগের

চেহারায় পূর্ন হয়।

--- What the.....

---- চুপ একদম কথা বলবেননা, আমাকে পেত্নী

বলা তাইনা, ইচ্ছে করছে আপনাকে, আপনাকে গলা

টিপে ধরি।

--- কী?

রিয়ান রাইসার এরুপ জগড়ায়

প্রচন্ড অন্যমনস্ক হয়ে রিয়ানের মা অথ্যাৎ মিসেস

শায়লা বেগম রান্না ঘর থেকে ড্রইং রুমে আসতেই

দেখে, রিয়ানের মাথায় কফি, মুখে প্রচন্ড রাগের

ছায়া আর অন্য পাশে মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে রাইসা

আর তার সাথে মিথিলা মেনি বিড়ালের মতো দাড়িয়ে

আছে।

মিসেস শায়লা বেগম রিয়ানকে এই অবস্থায় দেখে

বলে উঠলো--- এ কী রিয়ান এই অবস্থা কেন

তোমার কী হয়েছে?

--- কী আর হবে মম, তোমাকে দেখে যে

মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে সে

আর মিথি আমার মাথায় কফি ঢেলে দিয়েছে। কথাটি

শুনে

মিসেস শায়লা বেগম কিছু বলার আগেই মিথিলার মা,

অথ্যাৎ শিলা বেগম উপর থেকে নিচে নামতে-

নামতে বলে উঠলো--- এসব কী মিথি, ও না

তোমার বড় ভাই ফাজলামির একটা সীমা আছে।

শিলা বেগমের গলার আওয়াজ পেয়ে মিথিলা একটু

ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলে, মিথিলা প্রচন্ড রকম

ভাবে শিলা বেগমকে ভয় পায়, অবশ্য ভয় পাওয়ারেই

কথা একেই তো দানবের মতো চেহারা তার

উপরে একটু রগচটা মানুষ হিসেবে সবার কাছে

পরিচিত।

রিয়ানের মা হয়তো সম্পর্কে এবং বয়সে শিলা

বেগমের বড় কিন্তু স্বভাব আচরন আর চলাফেরা,

কর্থাবাতায় সবাই শিলাকে বড় বউ হিসেবে মনে

করে। আর শিলা বেগমের সাথে বাড়ির কেউই

সহজে কথা বলেনা, বলার আগে অত্যন্ত ১ বার

হলে ও ভাবে কিন্তু একমাএ রিয়ান যে শিলা

বেগমের চোখের মনি, রিয়ানের সমস্ত আবদার

শিলা বেগম অনায়াসে পূরণ করার চেষ্টা করে।

মিথিলা মাকে নিচে নামতে দেখে, রাইসাকে ফিশফিশ

করে বলে উঠলো --- ভাবী, সাবধান যে নামছে

তার সামনে না একদম ভাইয়াকে নিয়ে মজা করোনা, না

হলে কিন্তু..

--- এই মিথি কী ফিশফিশ করছিস রে।

--- না মা কিছুনা।

--- কিছুনা, দাড়া দেখ তোর অবস্থা আমি কী করি,

সোনা মা ও সোনা মা।

ডাকতে- ডাকতে রিয়ান শিলা বেগমের কাছে গিয়ে

বলে উঠলো--- দেখ আমার কী অবস্থা

করেছে।

--- এ কী তোর এই অবস্থা করেছে কে?

--- কে আর করবে, ওই যে ওই একহাত ঘোমটা

দিয়ে মেনি বিড়ালের মতো এখন যে দাড়িয়ে

রয়েছে।

রিয়ানের এমন কথা শুনে শিলা বেগম প্রচন্ড

গম্বীর কন্ঠে বলে উঠলো,

--- বিয়ে হয়েছে একদিন না হতেই এখনি এই

অবস্থা?

শিলা বেগমের এমন উক্তিতে রাইসা নিচু স্বরে শিলা

বেগমকে বলে উঠলো--- কী করবো বলুন

কেউ যদি আমাকে চাউলের বস্তা বলে তাহলে

আমি কী তাকে ছেড়ে দিবো?



ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ৭

--- চাউলের বস্তা বলেছে তো কী হয়েছে

তাই বলে তুমি ওর মাথায় কফি ঢেলে দিলে, সাহস

তো তোমার কম নয়।

শিলা বেগমের চোখে- মুখে প্রচন্ড রাগের ছায়া

দেখে মিথিলা ফিসফিস করে রাইসাকে বললো---

ভাবী বললাম না কথা বলোনা, এই ক্ষেপলো

বলে।

---- হুম, দাড়া ও দেখনা কী করি।

এই বলে রাইসা কাঁদতে লাগলো জোরে-

জোরে, রাইসার কান্না দেখে সবাই অবাক হয়ে ওর

পানে তাকিয়ে রইলো। শিলা বেগম আর রিয়ানের মা

শায়লা বেগম বিস্মিত কন্ঠে রাইসাকে জিজ্ঞাসা

করলো --- এই তুমি কাঁদছো কেন?

প্রশ্নটি শুনে রাইসা কান্নাটা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে -

ফুঁপিয়ে শিলা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলতে

লাগলো --- আমি আপনার সম্মান বাচানোর জন্য এমন

করলাম আর আপনে আমাকে বকা দিচ্ছেন?

----- মানে? আমার সম্মান বাচানোর জন্য?

--- ভাবী এবার কিন্তু তুমি কেস খাবে।

--- চুপ,

--- এই মেয়ে কী ফিসফিস করছো, কই

বললেনাতো আমার সম্মান বাচানোর জন্য মানে।

--- আসলে কী সোনা মা, ওনি আমাকে চালের

বস্তা বলেছে, আমি তো একটা মেয়ে তার মানে

একটা মেয়েকে চালের বস্তা বলা মানে তো ও

পুরো মেয়ে জাতটাকেই চালের গুদাম, দূততরি

চালের বস্তা বলেছে।

রাইসার এমন কথা শুনা মাএই শিলা বেগম, মিথিলা, শায়লা

বেগম একসাথে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে

প্রচন্ড ক্ষেপে উঠলো--- এই কথা তো আগে

ভাবিনি, রিয়ান।

তিনটে মেয়ে মানুষের এভাবে অগ্নিময়

চোখের স্পর্শে রিয়ানের পুরো শরীর ভয়ে

আর রাইসার প্রতি রাগে ক্রমশ ঘামাতে লাগলো, রিয়ান

সোনা মায়ের দিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করে

বলতে লাগলো--- সোনা মা আমি কিন্তু এভাবে

ভেবে বলিনি, ও তোমাকে মিথ্যে বলছে।

এই বলে রিয়ান দ্রুত রাইসার সামনে গিয়ে ওকে

চেঁচিয়ে বলে উঠলো--- এই মেয়ে তুমি কী

বলছো এসব?

রিয়ানের কথাটি শুনে রাইসা মুচকি হেসে রিয়ানকে

চোখ টিপ দিয়ে বলে উঠলো-- কেমন দিলাম

আমার হট টেম্পারেচার জামাই?

--- ও তার মানে এসব তুমি ইচ্ছে করে করছো,,

আমি, আমি তোমাকে দেখে নিবো।

হঠ্যাৎ রিয়ানের মনে হলো পিছন থেকে কেউ

একজন তার শার্টের কলার ধরে টানছে,

কৌতুহলবর্শে পিছনে তাকাতেই দেখে রাগান্বিত

ভাবে সোনা মা --- এই তুই ওর সাথে কী বলছিস

আমার সাথে কথা বল। তুই মেয়েদের অপমান

করছিস?

--- ইয়ে মা,মা, মানে না সোনা মা ও মিথ্যে বলছে

দেখ ও চোখ টিপ দিচ্ছে।

--- চুপ।তুই আমার সাথে একদম আর কথা বলবিনা।

এই বলে শিলা বেগম দানবের মতো হাটতে-

হাটতে উপরে চলে গেলো।

রিয়ান কিছুসময় বক রাক্ষসের মতো রাইসার দিকে

তাকিয়ে থেকে তারপর কিছুনা না বলেই নিজের

ঘরের দিকে চলে গেলো।

রিয়ান চলে যাওয়ার পর শায়লা বেগম রাইসার কাছে

গিয়ে আলতো করে ওর মুখে হাতটা রেখে

স্নেহমাখা কন্ঠে বললো--- এই সংসার আর আমার

ছেলেটাকে আগলে রেখো।

রাইসা তখন সম্মানজনক ভাবে শায়লা বেগমকে সালাম

করলো, শায়লা বেগম তখন হাসিমুখে রাইসাকে

বললো --- তুমি এখানে বসো মা, আমি সবাইকে

ডেকে আনছি মা, আর হ্যা মিথিলা তুই ওর সাথে থাক।

--- হুম বড় মা।

মিসেস শায়লা বেগম ড্রইং রুম থেকে যেতেই

মিথিলা আর রাইসা একজন আরেক জনের দিকে

তাকিয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।

--- ভাবী তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছো।

--- তা তো বুঝলাম, কিন্তু সোনা মা তো রিয়ানকে

অনেক ভালোবাসে তাহলে আমার এই সামান্য কথায়

ওর প্রতি এতো ক্ষেপে গেলো কেন?

--- আরে ভাবী তোমার আন্দাজি ডিলটাই তো গিয়ে

গাছে লেগেছে।

--- মানে?

--- মানে মা পৃথিবীতে সবথেকে বেশি অপছন্দ

করে কেউ যদি মেয়েদের অসম্মান করে,

কোনোভাবে যদি কারো কাজে মেয়েদের

অসম্মানের ইংঙিত থাকে, ব্যস তার আর রক্ষে

নেই,

সেই হিসেবে তো ভাইয়াকে কিছুই বললোনা।

--- তাই নাকি আগে বলবেনা তাহলে তো কাটা গায়ে

নুনেরছিটেটা একটু বেশিই দিতাম।

--- ভাবী এবার কিন্তু আমি তোমার বিপক্ষে চলে

যাবো, আমার ভাইয়াকে কিন্তু অতো খারাপ নয় যে

এমন করতে হবে বুঝছো।

--- কী বুঝবে দাদুভাই।

এতো সুন্দর করে ডাক আর স্নেহমাখা কন্ঠের

আওয়াজ পেয়ে রাইসা আর মিথিলা সামনে তাকাতেই

দেখে শায়লা বেগম একজন বৃদ্ধ মহিলাকে ধরে-

ধরে রাইসার কাছে নিয়ে আসছে। বৃদ্ধ মহিলাটিকে

দেখে মিথিলা মুখে একরাশ হাসি নিয়ে মহিলাটির কাছে

যেতে লাগলো আর বলতে লাগল--- দিদুন, তুমি

এসো, এসো।

এই বলে মিথিলা আর শায়লা বেগম দিদুনকে ধরে-

ধরে রাইসা সামনে আনতেই রাইসা সম্মানোত্তর

ভাবে দিদুনকে সালাম করলো,

সালাম করে দাড়িয়ে দিদুনের দিকে তাকাতেই, দিদুন

জলচোখে শায়লাকে উদ্দেশ্য করে বলে

উঠলো--- বড় বউ এতো দেখছি একেবারে রিয়ার

মতো লক্ষীমন্ত্র, বেচে থাক দাদু ভাই।

দিদুনের মুখ থেকে রাইসা রিয়া নামটি শুনা মাএই আবার ও

ওর মনে প্রশ্নরা বাসা বাধলো-- কে এই রিয়া, এই

বাড়ির দেওয়াল, এই বাড়ির মানুষদের মুখে তাদের

মনে শুধু রিয়া কে ও?

রাইসাকে এমন চিন্তার জগতে থাকতে দেখে

মিসেস শায়লা বেগম বলে উঠলো --- কী

ভাবছো মা?

শায়লা বেগমের গলার আওয়াজে রাইসা ভাবনার জগত

থেকে বাস্তবতা ফিরে আসলো তারপর অত্যন্ত

সেন্হমাখা কন্ঠে বললো--- কিছু না মা।

--- ও আচ্ছা, এস ও তোমার সাথে বসে দুদন্ড কথা

বলি।

তারপর,

রাইসা, দিদুন, মিথিলা আর মিসেস শায়লা বেগম একসাথে

বসে জমিয়ে গল্প করতে লাগলো, ঠিক এমন সময়

শামছুল হক দুই ব্যাগ বাজার নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে-

ঢুকতে বলতে লাগলো--- কই আমার নতুন বউ মা

কই।

শামছুল হকের গলার আওয়াজে সবাই দাড়িয়ে

গেলো, রাইসা চোখে - মুখে একরাশ খুশী

নিয়ে দরজার সামনে যেতে অগ্রসর হলেই

মিসেস শায়লা বেগম তখন রাইসাকে বলে উঠলো--

তোমার যাওয়া লাগবেনা মা, আমি যাচ্ছি ।

-- না মা আমিই যাবো।

--- হ্যা আমার বউ মা কে এই দিকে আসতে দেও

দেখি।

রাইসা দরজার কাছে গিয়ে হাত থেকে বাজারের

ব্যাগগুলো নিতে-লাগলো আর গম্ভীর কন্ঠে

শামছুল হককে বললো -- বাবা আপনার এই শরীর

নিয়ে কিন্তু বাজারে যাওয়া একদম উচিত হয়নি।

--+ আরে শরীরের কথা বাদ দেও তো মা কতদিন

পর এই হক বাড়িতে আবার খুশীর বর্না বইছে।

এই বলে শামছুল হক রাইসার হাত দুটো আলতো

করে ধরে বললো--- মারে আজ থেকে এই

সংসার তোর তুই আবার রিয়ার মতো চলে যাস না।

বারবার এদের এসব কথায় রাইসার মনটা মায়ার বাধনে

নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে কিন্তু এটা কখনো

সম্ভব নয়, না আমাকে চলে যেতেই হবে আমার

সময় শেষ হলে।

--- কীরে কী ভাবছিস মা,

--- না কিছুনা আসুন বাবা।

--- হুম।

ঘরে ঢুকতেই শামছুল হকের উপরের দিকে

চোখ পড়তেই দেখলো রিয়ান উপর থেকে

নিচে নামছে।

রিয়ানকে দেখা মাএই শামছুল হক অট্টহাসি হেসে

রিয়ানকে বললো-- আরে মাই সন, আয় নিচে আয়

আমার সাথে একটু বস, তোর সাথে আজ আমি গল্প

করবো, দেখ আজ আমি নিজে বাজার করেছি শুধু

তোর জন্য।

রিয়ান সামছুল হকের কথাগুলোকে না শুনেই উল্টে

শামছুল হকের মুখের উপর বলে দিলো-- বাবা আমি

বের হচ্ছি।

রিয়ানের এমন কথায় সবার মুখের হাসিটা মেঘের ছায়ায়

ঢেকে গেলো, বিশেষ করে রাইসার চোখে

আপছা- আপছা জল ও চলে আসলো। আজকে

বিয়ের পরের দিন, একটু পরেই অনেক লোকজন

আসবে অথচ ও ই থাকবেনা, তা কী হয়। মানুষ যদি

জিজ্ঞাসা করে তখন কী বলবো, অন্তত নিজের

বাবা- মায়ের খুশীর জন্য ও তো আজকের দিনটায়

ও একটু অভিনয় করে না হয় কাটিয়ে দিতে পারতো।

--- বের হবি মানে কোথায় যাবি?

শামছুল হকের প্রশ্নটা শুনে রিয়ান একটু অস্বস্তিকর

ভাবে বললো--- কেন বাবা তুমি জাননা আমি কোথায়

যাবো?

--- ভাইয়া আজকের দিন ও তুই এভাবে চলে যাবি।

--- কেন আজকের দিন কী, একটা কথা সবাই মাথায়

ঢুকিয়ে রেখ ও আমি জাস্ট তোমাদের জন্য

বিয়েটা করেছি তাছাড়া আর কিছুই নয় ।

এই বলে রিয়ান চলে যায়।রাইসা অবাক দৃষ্টিটে

রিয়ানের চলে যাওয়াটার দিকে তাকিয়ে রইলো --

মানুষ বুঝি কষ্টের স্পর্শে ধীরে- ধীরে নিষ্ঠুর

হয়ে যায়।

রিয়ানের এভাবে চলে যাওয়ায় শামছুল হক প্রচন্ড

ভাবে ভেঙে পড়ে, রাইসার দিকে তাকিয়ে কান্নামাখা

কন্ঠে বললো--- আমি ভেবেছিলাম ও বদলে

গেছো মা কিন্তু না ও শুধু আমার জোরে বাধ্য

হয়ে তোকে বিয়ে করলো, তার মানে ও

কোনো দিন ও বদলাবে না, এই জিবন থেকে

বেরিয়ে আসবেনা।

রাইসা বুঝতে পারলো না ও কী বলবে কিন্তু ওর

মুখের সামনে অসহায়ত্ব আর এক বুক ভালোবাসা

নিয়ে এমন কিছু মানুষ দাড়িয়ে রয়েছে যাদের

মধ্যে কেউ তার হারানো সন্তানকে ফিরে

পেতে চায়, এক বৃদ্ধ অসহায় তার নাতিনকে চায়

ফিরে পেতে, আর এক বোন তার ভাইয়াকে ব্যস

রাইসা আর কোনোকিছু না ভেবেই মুখগুলোর

দিকে কিছুসময় তাকিয়ে বলে উঠলো-- ধৈর্য

হারাবেননা বাবা আপনার ছেলেকে আমি আবার তার

আগের জিবন ফিরিয়ে আনবোই।

রাইসার এমন কথায় সবার মুখে একরাশ হাসি আর

চোখে রাইসার প্রতি অগাধ বিশ্বাসের ছায়া দেখা

গেলো।

সারাদিন নানা লোকজন প্রতিবেশী রাইসাকে

দেখতে আসলো, তাদের সামনে মেকাআপের

আবরনে নিজের কষ্টটাকে লুকিয়ে মুখে দিব্যি হাসি

রেখে দিনটা পার করে দিলো, অনেক গেস্ট

শামছুল হককে যতবারেই রিয়ানের কথা বলেছে

ততবারেই তিনি কোনো একভাবে এড়িয়ে চলে

যায়।

রিয়ান সারাদিন একবার ও বাড়িতে না আসায় রাইসার চেহারায়

ক্রমশ চিন্তা ছায়া চলে আসতে লাগলো।

মিথিলাকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে লাগলো-- তোমার

ভাইয়া কোথায়?

--- ভাইয়া প্রতিদিন যেখানে যায়, সেখানেই গেছে।

--- মানে?

--- সময়ের সাথে- সাথে সব বুঝে ফেলবে,

যাইহোক টেনশন করোনা দেখবে চলে

আসবে।

রাত ১২ টায় রিয়ান বাড়ি ফিরলো, রিয়ানকে রুমে

ঢুকতে দেখেই রাইসা তার সামনে গিয়ে শান্ত

কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো --- এই যে মিষ্টার সারাদিন

কোথায় ছিলেন?

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ৮

কিন্তু রাইসার উওরে রিয়ান কোনো জবাব,না দিয়ে

নিশ্চুপ ভাবে দাড়িয়ে রইলো। ব্যাপারটা রাইসার খুব

বেশি খারাপ লাগে, একটু আবেগীপ্রবন হয়ে,

রাইসা বিছানার উপর বসে অন্যমনমনস্ক হয়ে মুখ

ফসকে রিয়ানকে বলে ফেললো--- টাকার জন্য

বিয়ে করেছি বিধায় কী বন্ধু হিসেবে ভেবে ও

একটি বার ও বলা যায়না কোথায় গিয়েছেন।

রাইসার এমন প্রশ্নে রিয়ানের চোখে- মুখে একটা

ছায়া নেমে আসে যে ছায়া রাইসাকে অনেক কথা

বলতে চাচ্ছে কিন্তু কোথায় যেনো কথাগুলো

বারবার হারিয়ে যাচ্ছে, অনেকক্ষণ অবদি রাইসা

রিয়ানের মায়াযুক্ত মুখের পানে তাকিয়ে রইলো,

আর রিয়ান হয়তো একটি বারের জন্য ভুলে

গিয়েছিলো যে --- রাইসা ওর ভাড়া করা বউ তাই বোধ

হয় ও রাইসার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো

কিছুসময় তারপর হঠ্যাৎ রাইসাকে বলে উঠলো---

আচ্ছা আপনি বলতে পারবেন, ভালোবাসার

মানুষগুলো কেন হারিয়ে যায়?

রিয়ানের এই প্রশ্নটার কোনো উওর রাইসা দিতে

পারেনি কেননা রাইসা জিবনে কখনোই কারো

ভালোবাসা পায়নি তাই বোধ হয় জানে ও না

ভালোবাসার মানুষগুলো হারিয়ে গেলে কিংবা দূরে

চলে গেলো কতটা কষ্টে একটা মানুষ এমন

আজগুবি প্রশ্ন করে।

রিয়ান রাইসার থেকে এই প্রশ্নটার উওর না পেয়ে

গম্ভীরতর ভাবে বারান্দার দিকে চলে যেতে

লাগলো, ঠিক তখনি রাইসা টপটপ করে চোখের পানি

ছেড়ে রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে

উঠলো--- রাগ করেছেন? কী করবো বলুন

কেউ তো কখনো ভালোবাসেনি, তাই জানিনা

ভালোবাসার মানুষগুলো কেন হারিয়ে যায়। তবে এই

টুকু বলতে পারি যে ভালোবাসার মানুষগুলো

কখনোই হারিয়ে যায়না বরং তারা সময়ের সাথে- সাথে

আমাদের শরীরের প্রতিটি শিরায়- শিরায় ও মিশে যায়,

হয়তো বাস্তবতার খাতিরে তাদের অস্তিত্বটা

সময়ের সাথে সাথে আমাদের ছেড়ে কোনো

কারনে চলে যায়, কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের যে

অনুভূতি, ভালোবাসা তা কখনো চলে যায়না। আর

আমাদের প্রতিটা নিশ্বাস আর প্রশ্বাস বারবার আমাদের

বলে এইতো সে আমার নিকট অতি নিকট।

রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান রাইসার অতি নিকটে

এসে রাইসার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে

উঠলো--- আপনে কে বলুন তো?

রিয়ানের প্রশ্নে রাইসা আবারো আমতাআমতা

করতে লাগলো

--- কী ব্যাপার কথা বলছেন না কেন? আপনার

চোখে- মুখে বারবার কিছু একটা লুকানোর চেষ্টার

ছায়া দেখা যাচ্ছে, কে আপনে?

--- আমি, আমি মানুষ।

রাইসার উওরটা শুনে রিয়ান আবার রেগে যায় --- আবার

আপনে সেই আলতু- পালতু কথা বলছেন? আসলে

আপনার সাথে কথা বলা মানে নিজের সময় নষ্ট করা।

এই বলে রিয়ান ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।

কিছুসময় পর ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রিয়ান

রুমে আসতেই দেখে রাইসা বিছানার উপর

অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। রিয়ান একটু অবাক

হয়ে বিস্মিত কন্ঠে রাইসাকে বললো-- কী ব্যাপার

আপনে এখন ও জেগে আছেন কেন?

ঘুমিয়ে পড়ুন।

রিয়ানের প্রশ্ন রাইসা আকুতি ভাবে রিয়ানকে বললো

-- ঘুম যে আসছেনা?

--- কেন?

--কিছু খাইনি তো তাই ক্ষুদায় ঘুম আসছেনা?

--- তো আপনে খাননি কেন?

--- আপনার জন্য ।

রাইসার উওরে রিয়ান বিরক্তিকর ভাবে বললো--- এসব

বাজে কথা বলা একদম বন্ধ করুন আর আমার জন্য

আপনাকে কেউ না খেয়ে থাকতে বলেছে?

আর তাছাড়া , আমি রাতে খাই না। আর আপনে

দেখেন না বাড়ির কেউ আমার জন্য খাবার নিয়ে

ওয়েট করা কিংবা আমাকে নিয়ে চিন্তা করে না।

তবে, মা একটা সময় করতো কিন্তু এখন আর

করেনা কারন মা বুঝে ফেলেছে আমার জন্য

ওয়েট করা মানে বৃথা সময় নষ্ট করা। সো

আপনাকে ও বলে দিচ্ছি আজকের পর যেনো

এই ভুল কখনো আর না করেন। যান গিয়ে

খেয়ে নিন।

এই বলে,

রিয়ান বারান্দায় চলে আসে, অপলক দৃষ্টিতে

দূরে আকাশপ্রদীপের আলোকে উজ্জ্বল

আকাশের মনোরম দৃশ্যর দিকে তাকিয়ে থাকে।

হঠ্যাৎ রিয়ানের অনুভূতি হলো কেউ একজন পিছন

থেকে তার শার্ট ধরে টানছে।

পিছনে তাকাতেই রিয়ান দেখলো রাইসা দাড়িয়ে

রয়েছে.

--- কী ব্যাপার আপনে?

--- আসলে আমার না ভীষন ক্ষুদা লেগেছে।

--- আজিব তো কয়বার বলবো খেয়ে নিন।

--- আমাকে একটু খায়িয়ে দিবেন।

রাইসার এমন আবদারে শুনে রিয়ান বলে উঠলো--

মানে? আমি আপনাকে খায়িয়ে দিবো এই প্রশ্নটা

করার সাহস পেলেন কী করে?

--- প্লিজ রাগ করবেন না, আসলে হাতে অনেক

ব্যাথা পেয়েছিলাম সেদিন আপনে যখন হাত

চেপে ধরেছিলেন,

তার উপরে আজকে পড়ে গিয়ে ব্যাথাটা আর ও

বেশি বেড়ে গিয়েছে।

রাইসার এমন আকুতি কন্ঠের কথাগুলো শুনে রিয়ান

একটু নিজেকে অপরাধী মনে করে রাইসাকে নিচু

স্বরে বলে উঠলো--- খুব বেশি লেগেছে

তাইনা ?

--- হুম।

--- স্যরি আসলে রাগ হলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।

--- কী এখন খায়িয়ে দিবেন না?

--- ইয়ে মানে।

--- ওকে দরকার নেই খায়িয়ে দেওয়ার, আমি

ঘুমোতে গেলাম।

রাইসা বারান্দা থেকে অভিমান করে চলে যেতে

চাইলে রিয়ান হাতটা ধরে বললো--- এতো অভিমান

করার কী আছে আর তাছাড়া না খেয়ে শুয়ে

পড়লে তো পরে

বলবেন ভাড়াটে বউ বলে খাবার ও দেইনি , আসুন,

আসুন খায়িয়ে দিচ্ছি।

এই বলে রিয়ান রাইসার হাতটা ধরে.......

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ৯

এই বলে রিয়ান রাইসার হাতটা ধরে ওকে বিছানার

উপরে নিয়ে বসায়, তারপর টেবিলের উপর

থেকে খাবারটা নিয়ে রাইসার মুখের সামনে খাবার

তুলতেই মেয়েটি নিজের চোখের

জলগুলোকে হাজারো আটকাতে চেয়ে ও

পারেনি। রিয়ান রাইসার চোখে পানি দেখে এক

প্রকার রাগান্বিত স্বরে বললো-- এতে কান্নার কী

হলো, কেউকী কখনো খায়িয়ে দেয়নি।

--- না, কখনো কেউ খায়িয়ে দেয়নি।

--- আপনার বাবা- মা ও কখনো আপনাকে খায়িয়ে

দেয়নি।

---- বাবা- মা থাকলে তো খায়িয়ে দিবে।

--- এই কী বলছেন আপনি।

--- ইয়ে না মানে কিছুনা, আসলে ইমোশন হয়ে

গেছি তো একটু তাই আবোলতাবোল বলছি ,

যাইহোক মুখের সামনেই কী খাবারটা ধরে

রাখবেন খাওয়াবেন না?

রাইসার আবদারে,চলাফেরায়য়,আর কথাবার্তায় রিয়ান

বারবার রিয়াকে খুজে পাচ্ছে, একটুকরা সুখ পাচ্ছে,

যেই সুখটা তিন বছর আগে তার থেকে হারিয়ে

গিয়েছিলো।

কোনো কথা না বলে রিয়ান সমস্ত জড়তাকে দূর

করে রাইসাকে খায়িয়ে দিলো।

তারপর বললো--আপনে ঘুমান।

---- আপনে?

--- আমার কথা বাদ দিন, আর রাত আমার জন্য বড্ড বেশি

যন্ত্রনাদায়ক ও আমাকে ঘুমোতে দেয়না।

---- আপনার কীসের এতো কষ্ট।

--কষ্ট আর আমি, হা,হা আসলে আমার কোনো কষ্ট

নেই শুধু হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষকে ফিরে

পাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা হয় আর কী বলুন তো,

রাত যত গভীর হয় আমার এই খামখেয়ালী ইচ্ছাটা

ক্রমশ আর ও বেড়ে যায়।

--- কাকে হারিয়ে ফেলেছেন যে ফিরে

পেতে চান?

রিয়ান তখন রিয়ার ছবিটাকে ইশারা করে বললো--- ওই

যে ফ্রেম বন্ধ মানুষটাকে যে একগাল হাসি নিয়ে

আমার দিকে চেয়ে আছে ।

রাইসা অবাক দৃষ্টিতে তখন রিয়ার ছবিটার দিকে তাকিয়ে

রইলো, আর নিজের অজান্তে বলে ফেললো--

তুমি অনেক লাকি, অনেক, অনেক বেশি।

রাত ১ টায় রাইসা শুয়ে পড়ে, বাইরে তখন প্রচন্ড

বাতাস বইছিলো, আর সেই বাতাস জানালা দিয়ে

প্রবেশ করে রাইসার শরীরকে বারবার শিহরিত

করছে, রিয়ান তখন সোফায় বসে কী যেনো

গভীর চিন্তায় মগ্ন রইলো আর কিছুসময় পর, পর

রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখছে ও ঘুমিয়েছে কিনা?

এই ভাবে দেড়টা অবদি পার করার পর হঠ্যাৎ রিয়ান

উঠে দাড়ালো, তারপর ড্রয়ার থেকে এক প্যাকেট

সিগারেট বের করে টেবিলের উপর রাখলো,

অতঃপর আলমারিটা গিয়ে খুললো।রিয়ানকে আলমারি

খুলতে দেখেই রাইসা বুঝতে পারলো, ও কেন

আলমারী খুলেছে,রাইসা উঠে বসলো তারপর

রিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো--- আপনে কী এখন

ড্রিংক করবেন?

--- তা জেনে আপনার কী করবেন , আর তাছাড়া

আপনে এখন ও ঘুমান নি কেন?

এই বলে রিয়ান ব্যস্ত হয়ে গেলো, মদের বতল

গুলো খুজতে।

ঠিক তখনি রাইসা বললো--- আপনে যা খুজছেন

সেটা ওখানে নেই।

রিয়ান রাইসার এরুপ কথায় প্রচন্ড রেগে যায়, ধুম

করে আলমারিটা লাগিয়ে রাইসার কাছে এসে উচুগলায়

বলতে লাগলো-- আপনার সাহস কিভাবে হলো,

আমার জিনিসে হাত দেওয়ার, ওগুলো আমাকে দিয়ে

দিন বলছি।

--- না, আমি দিবোনা, দেখুন এগুলো খাওয়া...

--- সেটআপ জাস্ট সেটাআপ এন্ড প্লিজ আমাকে

ওগুলো দিয়ে দিন।

--- আমি বলছিনা, আমি দিবোনা।

--- ওকে ফাইন দেওয়া লাগবেনা।আমি এখনি বাইরে

যাবো, বাইরে তো আর আপনে আটকাতে

পারবেননা।

রিয়ানের এরুপ অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে রাইসা একটা মদের

বতল নিয়ে এলো, তারপর রাগান্বিত স্বরে রিয়ানকে

জিজ্ঞাসা করলো-- আপনে কী সত্যিই এখন এসব

ছাইপাস খাবেন।

-- হ্যা।

--- আমি লাস্ট বার জিজ্ঞাসা করছি সত্যিই খাবেন।

--- আমি ও লাস্ট এন্ড ফাইনাল আনসার বলছি ইয়েস,

ইয়েস। understand.

রিয়ান কথাটা বলার পর রাইসা মুচকি হাসতে লাগলো,

তারপর বলতে লাগলো-- আপনে এটা খাবেন

তাইতো, ওকে দেখি আপনে খান কী করে।

এই বলে রাইসা মদের বতলটা খুলে বললো ---

আপনে যদি এটা খান তাহলে আমি ও খাবো।

রিয়ান অট্টহাসি হেসে বললো,--- কী! আপনে

খাবেন, দেখি সাহস থাকলে খেয়ে দেখান তো।

--- আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই খাবো।

--- খান না, আপনাকে মানা করছে কেউ।

কথাটি বলা মাএই রাইসা মদের বতল টা খুলেই

একডোক মুখে নিয়ে নিলো,অতঃপর না খেয়ে

গালদুটো ফুলিয়ে অবাকভাবে রিয়ানের দিকে

তাকিয়ে রইলো।

রিয়ান রাইসার এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে

গেলো-- একি আপনে সত্যি,সত্যিই,..... নিন এবার

গিলুন তো দেখি খেতে পারেন কিনা।

--- রাইসা রিয়ানের কথাগুলো শুনা মাএই মুখে যেটুকু

মদ নিয়েছিলো তা পুরোটাই রিয়ানের মুখে ছুড়ে

ফেললো।

----- ইয়াক কী বিশ্রী গন্ধ, কী বিশ্রী স্বাদ

আপনে এটা খান কী করে?

--- হে ইউ কী করলেন আমার মুখে ছুড়ে

মারলেন তা ও আবার আপনার মুখের টা।

এই বলে রিয়ান প্রচন্ড ক্ষেপে রাইসার হাত টাকে

চেপে ধরতেই দেখে রাইসা হাসছে।

--একি আপনে হাসছেন কেন?

রাইসা রিয়ানের শার্টের কলার টেনে ধরে বলে--

এই হট টেম্পারেচার আমার মাথাটা কেমন জানি বনবন

করে ঘুরছে।

-- এই এসব কী বলছেন,?

-- আমি, আমি এটা খাবো, এই বলে রাইসা বতলটা নিয়ে

গড়গর করে খেতে লাগলো, রিয়ান রাইসার হাত

থেকে বতলটা নিয়ে কোনো ভাবে ওকে

সামলালো,বতলটা নিতেই অমনে অবুঝ শিশুর মতো

রাইসা রিয়ানকে শক্ত করে দুহাত দিয়ে ধরে বলে

উঠলো--- এই ছেলে তুই এমন কেন, সারাদিন

এতো রাগ করিস কেন?

-- এ কী আপনে আমাকে তুই বলছেন, গেছে,

গেছে কেন যে খেতে বললাম, এ তো দেখি

সত্যিই, সত্যই খেয়ে ফেললো.

--- হি,হি।

,---- হাসছেন কেন পাগলের মতো।

রাইসা রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো--- হাসবোনা,

এই তুই জানিসনা বউকে আপনে বলতে নেই তুমি

বলতে হয়।

--- না, একে আর বেশিক্ষন এভাবে রাখা যাবেনা,না

হলে পরে বিপদ পড়তে হবে।

রাইসা রিয়ানের গালে আলতো করে একটা থাপ্পড়

দিয়ে, খিলখিল করে হাসতে লাগলো, রিয়ান ও তখন

ওকে কন্ট্রোল করার জন্য ও পাগলের মতো

হাসতে লাগলো।

রাইসা বাচ্চাদের মতো কাঁদতে -- কাঁদতে তখন

বললো---এই টেম্পারেচার তুই সকালে আমায়

চাউলের বস্তা বলে ফেলে দিয়েছিস এখন তুই

আমায় কোলে নিবি।

-অ্যাঁ।

---- অ্যাঁ নয় হ্যা নাহলে আমি, আমি।

--আপনে কী করবেন?

--- আমি, হিহি, আমি এখন সোজা মায়ের কাছে চলে

যাবো।

--- এই না, নিচ্ছি কোলে নিচ্ছি।

রিয়ান বিরক্তিকর ভাবে নিজেই নিজেকে বলতে

লাগলো --- বুঝ রিয়ান চাউলের বস্তা বলায় এখন কতটা

কষ্ট করতে হচ্ছে

এই বলে রিয়ান রাইসাকে কোলে নিলো, রাইসাকে

কোলে নেওয়া মাএই রাইসা উচ্চস্বরে হাসতে

লাগলো আর বাচ্চাদের মতো ন্যাকামি করতে --

করতে বললো--+ এই, এই ছেলে তোার

কীসের এতো কষ্ট তুই কেন এসব খাস।

রাইসার প্রশ্নটা শুনে রিয়ান অনেকক্ষণ রাইসার দিকে

তাকিয়ে রইলো, তারপর বললো-- জানিনা, ব্যস

বুকের মাজখানটায় ব্যাথা করে বিধায় খাই।

-- একটু তোর কষ্টের ভাগটা আমায় দিবি।

রিয়ান কোনো উওর দিলো না শুধু বারবার রাইসার

দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর রিয়ান রাইসাকে গিয়ে

বিছানায় শোয়ালো, -- দেখুন আপনে....

কথাটি বলা মাএই রাইসা একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো-- এই

ছেলে আবার আপনে।

-- হিহি, তুমি। তা আমি বলিকি তুমি একটু এখন ঘুমা ও।

আর হ্যা সকালে তোমার সাথে আমি কথা বলবো।

ঠিক আছে।

--- ওকে আমি ঘুমাই।

রাইসা রিয়ানের কথায় মানিয়ে যাওয়ায় রিয়ান দীর্ঘনিশ্বাস

ফেলে বলে উঠলো-- যাক বাবা বাচলাম।

কিন্তু পরক্ষনে রিয়ানের দীর্ঘনিশ্বাসটা নিস্তব্ধ

হয়ে যায়, নিচের দিকে তাকাতেই রিয়ান দেখে রাইসা

ওর হাটুতে মাথা রেখে ওর হাতটাকে শক্ত করে

আকড়ে ধরে ঘুমের দেশে ডুব দিয়েছে।

বাইরে তখন ঝিঝিপোকার ডাক, আর হিমহিম বাতাস,

নিস্চুপ পরিবেশ রিয়ানকে ও বাধ্য করলো রাইসার

এভাবে ঘুমিয়ে থাকাটাকে উপভোগ করতে। রিয়ান ও

তখন মায়ার দৃষ্টিতে রাইসার মুখের দিকে চেয়ে

রইলো, বাইরে তখন আকাশে চাঁদেরহাট

বসেছিলো আর সেই চাদের হাটের চাদটার

আলো জানালা দিয়ে একদম রাইসার মুখের উপর

এসে পড়লো, সেই চাদের আলোয় যেনো

মেয়েটিকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে, আর

এতটাই সুন্দর লাগছিলো যে কিছুসময়ের জন্য রিয়ান

হয়তো নিজের বাস্তবতার কাছ থেকে কল্পনা

আকাশে ডুব দেয়, যেই আকাশ মানুষকে

একটুকরো সুখ দেয় আর মানুষ ও সুখ বিলাসী

হয়ে সেই সুখটাকে হাত পেতে নেয়।



ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ১০

---ভাবি ঘুম থেকে উঠ আর কত ঘুমোবে।

রাইসা হঠ্যাৎ মিথিলার গলার আওয়াজ পেয়ে

লাফ দিয়ে উঠে বসে তারপর চোখ কচলাতে-

কচলাতে মিথিলার দিকে তাকাতেই

মিথিলা বলে উঠলো--- আর কত পড়ে- পড়ে

আজকে ঘুমোবে বলোতো, তুমি জানো কয়টা

বাজে।

--- কয়টা?

--- ৯ টা।

--- অ্যাঁ কী বলছো? আমি আজকে এতো বেলা

অবদি ঘুমোলাম।

এই বলে,

রাইসা বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে

গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে তারপর মিথিলাকে

বলে উঠলো--- আচ্ছা বাড়ির সবাই উঠে গেছে

তাইনা।

--- হুম, ইভেন ভাইয়া ও আজকে খুব তাড়াতাড়ি

ঘুম থেকে উঠে গেছে, নিচে ব্রেকফাস্ট ও

করতে চলে গেছে।

---- কী বলছো?

--- সত্যি বলছি, বিশ্বাস না হলে নিজ চোখে

দেখবে চলো।

--- হুম।

রাইসা খুব তাড়াতাড়ি মাথায় ঘোমটা দিয়ে

মিথিলার হাতটা ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে

নিচে নেমে আসলো।

রাইসা আর মিথিলা নিচে নামতেই, রাইসার

চোখ প্রথমে গিয়েই রিয়ানের উপর পড়ে,

রিয়ান রাইসাকে দেখা মাএই অন্যদিকে মুখ

ফিরিয়ে নেয়।

--- কী ব্যাপার ওনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন

কেন,? কালকে রাতে আমি কী কিছু করেছি?

আর তাছাড়া ওনার মুখে ও আমার প্রতি

অনেক ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

রাইসাকে এভাবে দাড়িয়ে চিন্তা করতে

দেখে মিসেস শিলা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে

উঠলো---এই যে মেয়ে ওখানে দাড়িয়ে কী

ভাবছো, বাড়ির বউ হয়ে বেলা অবদি ঘুৃমানো

এখন আবার দাড়িয়ে ধ্যান করা, তোমার জন্য

কী আমরা না খেয়ে বসে থাকবো আজকে?

উচু গলায় শিলা বেগমের এমন বকাবকিতে

রাইসা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়, মিসেস শায়লা

বেগম রাইসার চোখে- মুখে ভয়ের ছায়া

দেখে শিলাকে ধমক দিয়ে বললো--- আহ!

ছোট

এমন করছিস কেন, আর তাছাড়া ওকে আমরা

কেউই এ বাড়ির বউ ভাবিনা বরং মেয়ে

ভাবি সুতারং তুই ও তাই ভাবতে চেষ্টা কর।

এই বলে মিসেস শায়লা বেগম রাইসাকে

উদ্দেশ্য করে বললো--- তুমি ওর কথায় কিছু

মনে করোনা, এস ও মা খেতে এস ও।

রাইসা এদের এতো ভালোবাসা, স্নেহ আর

অগাধ ভরসার ছোয়ায় বারবার নিজেকে

দমিয়ে দিতে চাইছে, বারবার তার মন বলছে

--- না এভাবে আর আমি এদের ঠকাতে

পারবোনা।

--- কী হয়েছে তোমার ভাবী আস ও।

--- ও হ্যা, আসছি।

খাওয়ার টেবিলে রাইসা রিয়ানের পাশে

বসতেই রিয়ান মুখের মধ্যে প্রচন্ড রাগ আর

ক্ষোভ নিয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে

থাকে।

রিয়ানের এই অবস্হা দেখে রাইসা ওর দিকে

আড়চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে,

এক পলকের জন্য রিয়ানের ও তখন রাইসার

দিকে চোখ পড়ে কিন্তু পরক্ষণে ও মুখ

ফিরিয়ে নেয়।

রাইসা তখন বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।

--- কী হলো এর আবার? কে জানে,

টেম্পারেচার তো, তাই ক্ষনে -ক্ষণে হয়তো

বদলে যায়।

সবার ব্রেকফাস্ট শেষ হওয়ার আগেই রিয়ান

উঠে চলে যায়। রিয়ানের চলে যাওয়া

সবাইকে ভাবায় কেননা ও ঠিক করে

ব্রেকফাস্টটা ও করেনি বরং চামচ নিয়ে

বসে থেকে চিন্তারজগতে মগ্ন ছিলো।

রিয়ানের না খেয়ে এভাবে চলে যাওয়ায়

মিষ্টার শামছুল হক একটু হতাশায় ভুগে শামছুল

হকের ক্লান্তি বোধের চেহারা দেখে

রাইসা শামছুল হককে শান্তনা দেওয়ার জন্য

বললো--- বাবা, আপনে চিন্তা করবেন না,

আমি এখনি খাবারটা নিয়ে ওকে দিয়ে

আসছি হয়তো এখানে আমার সাথে খেতে

বসে ও অস্বস্তি ফিল করছিলো তাই বোধ হয়

চলে যায়।

--- হ্যা মা, তুই তাই কর।

রাইসা ব্রেকফাস্ট নিয়ে উপরে যেতেই একটু

ভয় পেয়ে যায়, রিয়ান ঘরে বিছানার উপর

বসে মুখটাকে এমনভাবে করে রেখেছে যে

এখন যাকে সামনে পাবে তাকেই মেরে

ফেলবে।

একটু ভয়ে - ভয়ে রাইসা রুমে ঢুকেই বলে

উঠলো-- কী হলো আপনে না খেয়ে চলে

আসলেন কেন?

রিয়ান কোনো উওর না দেওয়ায়, রাইসা

খাবারটা টেবিলের উপর রেখে, রিয়ানকে

বললো --- কী হলো আপনার, আমাকে বলুন।

রাইসা কথাটি বলা মাএই রিয়ান উঠে

দাড়ালো, চোখে- মুখে একরাশ রাগ আর

অভিযোগ নিয়ে রাইসার দিকে ক্রমশ এগিয়ে

যেতে লাগলো, রিয়ানের এভাবে এগিয়ে

আসতে থাকা আর ওর চোখে মুখে রাগ দেখে

রাইসা আবারো ও ভয়ে - ভয়ে বললো--- আপ,

আপনার কী হয়েছে, কী করছেন আপনে।

রাইসা রিয়ানের ভয়ে এক পা- এক পা করে

পিছাতে- পিছাতে হঠ্যাৎ দেওয়ালের সাথে

ঘেসে যায়।

তারপর নিচু স্বরে রিয়ানকে বললো-- আপনে

কেন আমার দিকে এগিয়ে আসছেন, কী

হয়েছে আপনার।

রাইসা কথাটি বলা শেষ না করতেই রিয়ান

শক্ত করে ওর হাতটা চেপে ধরে জোরে

চিৎকার দিয়ে বলল--চুপ, একদম চুপ।

রিয়ান এতটা জোরেই রাইসার হাতটা চেপে

ধরলো যে পচন্ড ব্যাথায় রাইসা কান্না করে

দিলো --- দেখুন আমি ব্যাথা পাচ্ছি প্লিজ

ছাড়ুন।

--- পান, আমি চাই আপনে যন্ত্রণা পান তাহলে

বুঝবেন অন্যকে যন্ত্রণা দিলে তার কত কষ্ট

হয়।

রিয়ানের এমন আজগুবি কথায় রাইসা কাদো-

কাদো স্বরে রিয়ানকে বললো--- কী বলছেন

আপনে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।

--- আর কত অভিনয় করবেন, হ্যা কেন এমন

করলেন আমার সাথে, কেন?

--- মানে?

--- আপনে আবার মানে জানতে চাচ্ছেন,

আচ্ছা আপনে আমাকে কেন বিয়ে করেছেন?

--- কেন আবার, আ,আমার বাবার চিকিৎসার

জন্য টাকা লাগবে যা আমাদের সামর্থ্যের

বাইরে তাই...

--- মিথ্যে কথা বলছেন আপনে, মিথ্যে কথা,

জাস্ট সেটাআপ বিকজ আপনার এই মিথ্যে

কথায় কোনো লাভ হবেনা। আমি সব জেনে

ফেলেছি।

রিয়ানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে ভয়ে- ভয়ে

রাইসা বলে উঠলো--- কী,কী জেনে

ফেলেছেন?

---- আমি জেনে ফেলেছি, যে আপনে সাঈফ

মামার একমাএ ভাগনি।

--- কী বলছেন এসব, ওনিতো আমাকে শুধু

টাকার জন্য আপনাকে বিয়ে করতে সাহায্য

করেছে, তাই আমি ওনিকে এমনেই মামা বলে

ডাকি, যেমন আপনে ও ডাকেন।

--- ও তাই তাহলে ওনির নাম্বার আপনার

ফোনে মামা দিয়ে সেভ করা কেন এন্ড ওনি

কেন আপনাকে সকালে ফোন দিয়ে বলবে ---

রাইসা মা একটু হসপিটালে আয়, একজন Patient

ব্যাপারে তোর সাথে কথা আছে। আপনে যদি

ওনার কেউ না হন তাহলে কেন আপনার সাথে

এভাবে আচরন করবে আর একজন patient এর

ব্যাপারে আপনার সাথে আবার কীসের কথা

যদি আপনে একজন গরীবলোকের মেয়ে

হোন

যে বাবার চিকিৎসার টাকার জন্য আমাকে

বিয়ে করেছেন? fortunately ফোনটা পিক

করায় আপনার রহস্যের আমি উদঘাটন করতে

পেরেছি।

--ইয়ে মা, মানে?

--- আর মানে, মানে করবেন না, আপনে কে

বলুন,প্লিজ।

রিয়ানের এমন আকুতিতে রাইসা অবাক

দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর

দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে উঠে --- হ্যা আপনে

ঠিকেই ধরেছেন আমি ডক্টর সাঈফের একমাএ

ভাগনি, রাইসা, আর এ ছাড়া ও আমার

আরেকটা পরিচয় আমি পেশায় একজন

সাইকলোজিস্ট।

রিয়ান রাইসার হাতটা ছেড়ে দেয়, রাইসার

কথাটা শুনে যেনো রিয়ানের পুরো পৃথিবীটা

অন্ধকার হয়ে যায়, নিচের দিকে তাকিয়ে

থাকে তারপর রাইসাকে বললো---

কেন তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন?

রাইসা রিয়ানের এই অবস্থা দেখে অনেক

আবেগময় ভাবে বললো--- ছোটবেলায় মা-

বাবা মারা যাওয়ার পর মামাই আমার সব,

মামার আদর, নৈতিকতার শিক্ষায় আমি বড়

হয়েছি , ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষকে

রিয়েলাইজ করার চেষ্টা করতাম, ইভেন

সবসময় চাইতাম মানুষের হতাশার কারনটা

উদঘাটন করা আর তা নিঃশেষ করার। আর

তাই পেশাটাকে নিজের কৌতুহলের সাথে

খাপ খায়িয়ে বেচে নিলাম। আমার মামা

হচ্ছে, সত্য,সততার পথের মানুষ আর তার

নিজের পেশাটা তার কাছে নিজের

জিবনের চেয়ে বেশি সম্মানের, আর patient

রা হচ্ছে তার কাছে তার প্রাণ তাই patient

এর সমস্যায় সে নিজের জিবনটা ও দিতে

দ্বিধা করবেন না। আমার মামা শুধু একমাএই

আপনাদেরেই পারিবারিক ডাক্তার আর সেই

কারনে আমার মামা আপনাদের নিজের

আত্মীয় হিসেবে মনে করে। আপনার তিন বছর

ধরে এভাবে হতাশায় ভুগার কথা প্রত্যহ মামা

আমাকে গিয়ে বলতো, কিন্তু কখনো এটা

বলেনি কীসের জন্য এতো হতাশা আপনার,

সেদিন যখন আপনার বাবা অসুস্থ হয়ে যায়,

তখন মামা আমাকে ফোন দিয়ে তার

চেম্বারে ডাকে আমি আসলে মামা সব খুলে

বলে তারপর বলে আপনাকে বিয়ে করতে,

অতঃপর একটু- একটু করে আপনাকে বুঝাতে

লাইফ টা থেমে থাকার জন্য নয়, একজন প্রিয়

মানুষের জন্য আর ও প্রিয় মানুষগুলোকে দূরে

ঠেলে দেওয়ার জন্য নয়,

কী করবো বলুন আমি চেয়েছিলাম আপনাকে

সোজাভাবে বুঝাতে কিন্তু মামার থেকে

জানতে পারলাম আপনে অনেক রগচটা ছেলে

নিজের মা- বাবারেই কথা শুনেনা আর থাক

অন্য কারো, আর তাই আমাকে আর মামাকে

এই পথটা বেচে নিতে হয়েছে, আপনার সাথে

থেকে আপনাকে বুঝতে এবং আপনার

কষ্টাকে দূর করতে, নিজেকে যাতে এভাবে

শেষ না করেন তা বুঝাতেই আমি আপনাকে

বিয়ে করেছি।

---ব্যস, এনাফ ইজ এনাফ,।

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ১১

--ব্যস, এনাফ ইজ এনাফ,।

রিয়ান রেগে আবারো গিয়ে রাইসার হাতটা

চেপে ধরে বলে-- কাজটা কিন্তু আপনে ঠিক

করলেন না, আর কালকের রাতের কাজটা ও

ঠিক করেননি? আচ্ছা বলুনতো কালকে রাতে

কেন এমন করলেন?

--- কী করেছি আমি কালকে রাতে? ও মনে

পড়েছে ড্রিংক করেছি তাইতো কিন্তু সেটা

তো আপনার জন্যইতো, আর তখন তো আমার হুশ

ছিলোনা তাই কী করতে কী করে ফেলেছি,

আমি নিজে ও জানিনা।

--- আর কত অভিনয় করবেন হ্যা , আপনে

কালকে রাতে মাতালের অভিনয় করে এখন

ভাব দেখাচ্ছেন।

--+ কী বলছেন আপনে তখন থেকে।

,--- কী বলছি তাহলে শুনুন,আপনে কালকে

রাতে ড্রিংক করেন নি, কারন ওই বতলে মদ

ছিলো না কোল্ডড্রিংকস ছিলো।

--- ইয়ে মা, মা মানে আপনে জানলেন কী

করে?

--- কী করে আবার আপনে যখন আমার মুখে

কোল্ড ড্রিংকস টা ছুড়ে ফেললেন তখনেই

কেমন জানি সন্দেহ লাগলো, পরক্ষনে ভোরে

আপনে যখন গভীর ঘুমে বিভর ছিলেন ঠিক

তখনি নিজের সন্দেহটা ঠিক কিনা তা পরোখ

করতে আমি বতল থেকে একটু পান করি আর

বুঝতে পারিযে এটা মদ নয় কোল্ড ড্রিংকস।

কেন এমন করলেন কীসের জন্য?

রাইসা রিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে

মায়ার দৃষ্টিতে বললো

----- ভালোবেসে ফেলেছি যে আপনাকে তাই

একটু খামখেয়ালী পনায় এসব করেছি।

রাইসার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটি শুনা

মাএই রিয়ান প্রচন্ড রাগান্বিত স্বরে বললো

---জাস্ট সেটাআপ, ভালোবাসা আপনাদের

মেয়েদের মুখে এটা মানায় না, তিন বছর

একটি মেয়ে যদি কারো সাথে থেকে পরে

বলতে পারে যে সে তাকে ভালোবাসেনা

আর আপনে সেখানে মাএ দুদিনে আমার

সাথে থেকে ভালোবাসার কথা বলছেন।

আসলে কী বলুন তো আপনারা মেয়েরা না খুব

স্বার্থপর , আর আপনে একটু বেশিই তাই আমার

সাথে এতো বড় নাটক করতে পারলেন। আমি

পৃথিবীতে সবথেকে বেশি মিথ্যে কথা বলা

অপছন্দ করি আর আপনে সেটাই করেছেন।

এই বলে রিয়ান নিচে বসে পড়ে, টপটপ করে

চোখের জল ফেলে নিচের দিকে তাকিয়ে

থাকে।

রিয়ানের চোখে কান্না দেখে রাইসা

নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগলো --- কেননা

রাইসা জানে যে রিয়ান কাঁদতে পারেনা।

প্রচন্ড কষ্টে ও রিয়ান চোখে পানি আসেনা,

তাহলে কতটা কষ্টে রিয়ান আজ কান্না

করছে।

এই ভেবে

রাইসা রিয়ানের পাশে বসে রিয়ানের কাধে

আলতো করে হাত দিতেই রিয়ান চিৎকার

দিয়ে বললো--- ডোন্ট ট্যাচ মি, ডোন্ট আর

আজকের ভিতরেই আপনে এই বাড়ি ছেড়ে

চলে যাবেন, আপনার আর আমার

এ্যাগ্রিমেন্টার এখানেই সমাপ্তি, I JUST

HATE YOU.

--- না, এটা করবেন,না, শুনুন আমার কথা।

কিন্তু রিয়ান রাইসার কথার কোনো গুরুত্ব না

দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।

রাইসা নিচে বসে অঝোর দ্বারা কাঁদতে

লাগলো।

অতঃপর রিয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে

গেলো।

রিয়ানের বাড়িতে থেকে ধুম করে বেরিয়ে

যাওয়া দেখে মিথিলা রিয়ানের ঘরে আসে।

এসে দেখে রাইসা কাঁদছে,

রাইসাকে নিচে বসে কাঁদতে দেখে মিথিলা

আশ্চর্যজনক ভাবে বললেন --- ভাবী তোমার

কী হয়েছে? আর ভাইয়া এভাবে বাড়ি ছেড়ে

চলে গেলো কেন?

রাইসা মিথিলার প্রশ্নের উওর না দিয়ে বরং

চোখের জলগুলো মুছে ফেলে মিথিলাকে

উদ্দেশ্য করে বললো--- আচ্ছা মিথিলা

আমাকে বলোতো তোমার ভাইয়া কেন এমন,

কেন মেয়েদের স্বার্থপর বলে, কেন এমন

নিষ্ঠুর হয়ে যায় মাঝেমাঝে।

--- আমার ভাইয়া এমন ছিলোনা ভাবী, যাকে

পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ভালোবেসেছে

সেই তাকে এমন নিষ্ঠুর করে ফেলেছে।

--- মানে?

--- মানে হলো...

এই বলতেই হঠ্যাৎ মিথিলার রাইসার হাতের

দিকে চোখ পড়তেই দেখে রাইসার হাতে

আঙ্গুলের তিনটে দাগ--- একি ভাবী তোমার

হাতে কী হয়েছে।

--- ও কিছুনা। তুমি আগে বলো তোমার ভাইয়া

কোথায়?

--- কোথায় আবার যেখানে প্রতিদিন গিয়ে

বসে থাকে সেখানে, বিগ বস রেস্টুরেন্টের

পাশে তিন রাস্তার মোড়ে বসে আছে।

ওখানেই তো সারাদিন থাকে কারন ওখানে

বসেই ওই ছবিটিতে যে মেয়েটিকে দেখছো

তার অস্তিত্বটা অনুভব করতে পারে, একমুঠো

সুখ আর পুরোনো সুখময় অতীতের স্মৃতি

খুজে

পায়। দিনটা এভাবে প্রতিদিন পার করে দেয়

ভাইয়া, তারপর দিনশেষে রাতে চার

দেওয়ালের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রাখে।

গত তিনবছর ধরে এটাই ভাইয়ার জিবনের

ইতিহাস। ও তুমি ভেবোনা দিনশেষে ঠিকেই

কালকের মতো বাড়ি ফিরে আসবে।

কিন্তু তোমার কী হয়েছে আর তাছাড়া

ভাইয়াকে যাওয়ার সময় চোখ- মুখ এতো লাল

দেখেছি কেন।

--- কিছুনা, মিথিলা প্লিজ আমাকে একটু একা

থাকতে,দেও, প্লিজ।

--- হুম।

মিথিলা চলে যাওয়ার পর রাইসা একা ঘরে

অনেকসময় বসে থাকে, প্রচুর কান্না ও করে

কিন্তু কেন সে নিজেও জানে না কার জন্য

কাদে, রিয়ানের জন্য, যে অন্য কারো

ভালোবাসার আবেশে নিজেকে আবিষ্ট করে

রেখেছে।

না, একে নিয়ে একদম ভাববোনা এতো একটা

স্বার্থপর শুধু আমাকে কষ্ট দিচ্ছে তাহলে

কেন ভাববো ওর কথা ?

রাইসা এরকম নানা কথা বলে নিজেকে

কোনো এক ভাবে কন্ট্রোল করে রুম

থেকে

বেরিয়ে এলে তারপর বাড়ির সবার সাথে

হাসি- খুশীতে দিনটা পার করে দিলো, একটি

বারের জন্য কেউকে বুঝতে দিলোনা ওর

কষ্টটা কেননা রাইসা এই মানুষগুলোর মুখের

হাসিটা দেখে তার কষ্টটাকে আড়াল করে

রাখে , শুধু একটা ভাবনাই রাইসার, রিয়ানের

সেই কথাটি --- আজকের ভিতরে চলে যেতে,

তাহলে আমি কী হেরে গেলাম, বাবাকে যে

বলেছিলাম ওকে আবার আগের জিবনে

ফিরিয়ে দিবো তা আর আমি কী করতে

পারবোনা।

, সারাদিন রিয়ানের ভাবনা করতে- করতে

রাইসা দিনটা পার করে দিলো।

দিনের আলো ডুবে আকাশে রাতের তারা

দেখা দিয়েছে, কিন্তু রিয়ানের তা ও

কোনো খোজ নেই , ঘড়ির কাটার দিকে

তাকিয়ে,তাকিয়ে রাত আট টা অবদি পার

দিলো রাইসা কিন্তু রিয়ানের তা ওকোনো

খবর নেই,

ফোন দিলো রিয়ানের নাম্বারে রাইসা,

কিন্তু বার- বার সুইচ অফ বলছে।

রাইসা ভয়ে- ভয়ে বিড়বিড় করে বলতে

লাগলো---

ওনি আবার কিছু করে বসে নি তো, না

আমাকে ওনার কাছে যেতে হবে। ওনাকে

বাড়িতে ফিরিয়ে আনতেই হবে।

এই বলে রাইসা খুব দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে

গেলো।

মিথিলার কাছ থেকে অ্যাড্রেসটা নিয়ে

গাড়িতে উঠে গেলো,

অতপঃর ড্রাইভারকে কাঁদতে - কাঁদতে

বললো-- মামা তাড়াতাড়ি একটু চালিও।

--- না, আমাকে ওনাকে বাচাতে হবে, আচ্ছা

ওনি আবার আবেগের বর্শে কিছু করে বসবেন

নাতো?

সারারাস্তায় এসব আলতু ফালতু চিন্তা করতে-

করতে

রাত ঠিক ৯ টায় রাইসা সেই জায়গাটায়

গিয়ে পৌছায়, গাড়ি থেকে নামতেই রাইসার

শরীর শীতল বাতাসের স্পর্শে কাঁপতে

লাগলো, কিন্তু রাইসা সে দিকে খেয়াল না

করে চারপাশে রিয়ানকে খুজতে তাকাতেই

একটু ভয় পেয়ে যায়। অবশ্য ভয় পাওয়ারেই

কথা মাঝ রাস্তায় একা একটা মেয়ে

দাড়িয়ে, তারউপর চারপাশটা অনেক নির্ঝুম

অন্ধকার আর তার মাঝে কিছুই দেখা

যাচ্ছেনা।

রাইসা ভয়ে - ভয়ে, রিয়ানকে ডাকতে

লাগলো, হঠ্যাৎ দেখতে পেলো রোডের

ওপারে কেউ একজন রাস্তার কীনারায় বসে

আছে।

অন্ধকার আর দূরত্বটা বেশি হওয়ায় বুঝা

যাচ্ছেনা কে বসে আছে, তাই রাইসা রাস্তা

পার হয়ে ওপারে গিয়ে ওই লোকটির কাছে

যেতেই রাইসা দেখতে পেলো রিয়ান এক

হাতে নিশার বতল আর মুখে অভিশাপ

নিকোটিন দিয়ে বসে আছে ।

রাইসা রিয়ানের এই অবস্থা দেখে কাঁদতে -

কাঁদতে ওর মুখ থেকে সিগারেটটা টান দিয়ে

ফেলে দেয় তারপর ওকে ধমক দিয়ে বলে --

কী

ভাবেন নিজেকে দেবদাস শুনুন আমার সামনে

একদম এসব খাবেননা,আর সারাদিন বাড়ি

ফিরেননি কেন?

রিয়ান রাইসার কথাগুলো শুনে অট্টহাসি

হেসে রাইসার মুখে আলতো করে হাত দিয়ে

বললো-- আচ্ছা বলতে পারুন ও আমাকে ছেড়ে

কেন চলে গেছে, আমার ভালোবাসায় কী

কমতি ছিলো, দিনের পর দিন কেন আমাকে

মিথ্যে কথা বলেছে কেন আমার সাথে

ভালোবাসার অভিনয় করেছে। ও বুঝেনা

আমার ওর জন্য খুব কষ্ট হয়।

---- কে? কার জন্য কষ্ট হয় আপনার, আমাকে

বলুন। আপনার কীসের এতো কষ্ট?

--- কষ্ট, হা,হা, আপনে শুনতে চান, তাহলে শুনুন,

আমার ঘরে ফ্রেমে বন্ধি থাকা যে মানুষটার

ছবি দেখছেন, জানেন ওই মানুষটাকে আমি

বড্ড বেশি ভালোবাসতাম এতো বেশিই

ভালোবাসতাম যে ওর জন্য নিজের জিবনকে

ও বাজি রাখতে দিদ্ধা বোধ করতাম না। দু

বছরের রিলেশন ছিলো রিয়ার সাথে

আমার,ওও না আমাকে অনেক ভালোবাসতো,

দুই বছর পর ফ্যামিলির মতনুযায়ী আমাদের

বিয়ে হয়। যেদিন আমাদের বিয়ে হয় সেদিন

দিন পৃথিবীতে বোধ হয় নিজেকে সব থেকে

বেশি সুখী মানুষ মনে হয়েছিলো, কিন্তু

ধীরে- ধীরে সে সুখটা হারিয়ে যায়, বুঝতে

পারিনি যে চাদের আলো শুধু রাতের জন্য,

দিনে তার কোনো স্হান নেই। ১ বছর না

যেতে- যেতেই ওর আমার সাথে ছোটখাটো

ব্যাপার নিয়ে জগড়া করতে লাগলো, কিন্তু

আমি সেই জগড়াটাকে চারদেওয়ালের ঘরের

মাঝে আবদ্ধ করে রাখতাম, জানতে দেয়নি

কেউকে কিন্তু বেশিদিন এভাবে আর

মানিয়ে নিয়ে চলতে পারলাম না, একদিন ওর

সাথে আমার প্রচুর জগড়া হয় ও তখন আমার

কাছ থেকে ডির্ভোস চায়, ইভেন এটাও বলে

ও আমাকে,

ও অন্য কেউকে ভালোবাসে সো তার সাথে

সে সংসার করতে চায়।

কথাগুলো শুনে সেদিন থমকে গেলাম, বুঝতে

পারছিলাম না ওকে কী বলবো, শুধু ভাবলাম

একী সেই রিয়া যে আমাকে ছাড়া কিছুই

বুঝতোনা, এ কী সে যে আমাকে সবথেকে

বেশি ভালোবাসতো।

অনেকবার নিজের কষ্টটাকে কন্ট্রোল করে

ওর সাথে মানিয়ে নিলাম,

ওর কাছে বারবার মাথা নিচু করে বললাম---

প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা, কিন্তু ও

শুনলোনা আমাকে একা ছেড়ে চলো গেলো,

একটি বারের জন্য ও ফিরে তাকালোনা। আর

সেই যে গেলো

আর ফিরে আসলোনা, কিন্তু আমি ওর

অপেক্ষায় আজ আছি।

রোজ ওর জন্য এখানে বসে থাকি, কেননা

আমাদের যখন রিলেশন ছিলো তখন আমরা

এখানেই সব থেকে বেশি সময় কাটাতাম।

আচ্ছা আপনে বলুন তো মেয়েরা কেন এমন হয়

আর সময়ের- সাথে- সাথে ভালোবাসাটা

কেন কমে যায়।

রিয়ানের কথাগুলো শুনে রাইসা চুপচাপ

রিয়ানের পাশে বসে রইলো, তারপর নিজের

চোখের পানিগুলো মুছে বলে উঠলো---

হাতের

পাচটা আঙ্গুল যেমন সমান নয় ঠিক তেমনি

একটি মেয়ের কারন সব মেয়েকে আপনে এক

বলতে পারেননা,না,

যদি বলেন তাহলে আপনার মা ও তার

তালিকায় পড়বে, আপনার বোন ও তার

তালিকায় পড়বে ইভেন আপনাদের বাসায় যে

মেয়েটি রোজ দুই বেলায় কাজ করে নিজের

পঙ্গু স্বামীর ঔষুধের খরচ চালায় , সে ও তার

তালিকায় পড়বে।

লিসেন এভাবে জিবনটাকে ভাববেননা,

একজনের জন্য দশজনকে খারাপ ভাববেন না,

রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কলেজ যাওয়া

মেয়েটিকে যখন রাস্তার বখাটে ছেলেরা

ইভটিজিং করে তখন সেই মেয়েটি যদি ভাবে

সব ছেলে এক তাহলে রোজ এসে যেই বাবার

কোলে বসে নিজের সারাদিনটা কেমন

গেছে তা প্রকাশ করে তাকেও সে ওই

বখাটেদের তালিকায় ভাবতো। আর

ভালোবাসা? তা কখনোই সময়ের সাথে

কমেনা বরং একটু- একটু করে বাড়ে, আর কী

বলেন তো, আসলে ভুলগুলো আমাদেরেই হয়

আর তা আমরা অন্য কারো উপরে চাপিয়ে

দেই, আসল আমরা যখন সত্যিকারেরর

ভালোবাসি কেউকে,

তখন আমরা নিজেদের অজান্তেই

ভালোবাসার মানুষটাকে নির্বাচন করতেই

ভুল করে ফেলি আর এই ভুলের কারনেই আমরা

পরশেষে কষ্ট পাই যেমন আপনে এখন

পাচ্ছেন। আর কেন জিবনটাকে এমন ভাবে

থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন মনে রাখবেন

ছোটবেলায় যখন হাটতে গিয়ে হোচট খেয়ে

পড়ে যেতেন তখন হয়তো অনেকে এসে

হাতটি

বাড়িয়ে দিতো উঠে দাড়াবার জন্য কিন্তু বড়

হওয়ার সাথে সাথে এখন পারলে সেই

মানুষগুলোই আপনাকে ফেলে দিতে চাইবে

কিন্তু উঠতে হবে আপনার নিজেকে একাই।

আর কার জন্য আপনে নিজেকে শেষ করছেন

যে আপনাকে ছাড়া দিব্যি সুখে আছে,

একবার তাদের কথা ভাবুন যারা আপনার

চিন্তায় ক্রমশ নিজেদের সুখটাকে হারিয়ে

ফেলছে।

রিয়ান নিশ্চুপ ভাবে রাইসা কথাগুলোকে

কোনো গুরুত্ব না দিয়ে ক্রমাগত মদ খেতে

লাগলো।

রাইসা রিয়ানের এই অবস্থা দেখে রিয়ানকে

রাগীমাখা কন্ঠে বলল--- এতো কিছু বলার পর

ও আপনে এসব খাচ্ছেন, ছাড়ুন।

এই বলে রিয়ানের হাত থেকে রাইসা মদের

বতলটা নিতে চাইলে রিয়ান রাইসাকে

জোরেশোরে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে

উঠলো-- প্লিজ আপনে এখান থেকে চলে যান,

প্লিজ।

--- না আমি যাবোনা, আর আপনে যদি এখন এই

মদের বতলটা না ফেলে দেন তাহলে আমি

সারাজিবনের জন্য চলে যাবো, আর ফিরে

আসবোনা।

--না আমি ফালাবো না, আর চলে যান আপনে

চলে গেলেআমার কিছু যায় আসেনা ।

--- ঠিক বলছেন তো, আমি কিন্তু

সারাজিবনের জন্য চলে যাবো।

--- যান প্লিজ লীভ মি অ্যালোন।

এই বলে রিয়ান মদ খেতে লাগলো, রাইসা এক

পা, এক পা করে পিছিয়ে চলে যেতে

লাগলো।

তারপর রাইসা কান্না মাখা কন্ঠে রিয়ানকে

বললো-- ভালো থাকবেন ।

কিন্তু রিয়ান রাইসার কথাটি না শুনার ভান

করে মদ খেতে লাগলো ক্রমশ, হঠ্যাৎ সব

নিশ্চুপ হয়ে গেলো, আবহাওয়া ভারী হয়ে

গেলো,

শুধু একটু দূর থেকে একটা গাড়ির হর্ন

বাজানোর আর একটি চিৎকারের শব্দ

রিয়ানের কানে আসলো। পিছনে ফিরে

তাকাতেই রিয়ান দেখতে পেলো, রাইসা

নিচে পড়ে আছে, প্রচন্ড রক্ত চারপাশে আর

একটা গাড়ি খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে, দৃশ্যটি

দেখে রিয়ান মদের বতলটা হাত থেকে

ফেলো দিলো

অবাক দৃষ্টিতে দূর থেকে রাইসার মুখের

দিকে চেয়ে রইলো আর বারবার রিয়ানের

যেনো মনে হলো বাতাসটাও তখন তাকে

বলছে- ভালো থাকবেন।

ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ১২

অদ্ভুত দৃষ্টিতে রিয়ান রাইসার দিকে তাকিয়ে ধুম

করে বসে পড়লো, আর বারবার বুকটাকে

চেপে ধরলো,

পাগলের ন্যায় ক্রমাগত বলতে লাগলো --- না, এটা

হতে পারেনা, এ চলে যেতে পারেনা, একে

বাচতে হবে, বাচতে হবে।

রিয়ান চোখের জলগুলো মুছে বসে না

থেকে, দৌড়ে- রাইসার কাছে গিয়ে ওকে

কোলে নিলো , কাপা- কাপা কন্ঠে বারবার

বলতে লাগলো--- এই মেয়ে চোখ

খোলো, এই দেখ আমি তোমাকে

কোলে নিয়েছি আজকে আর চাউলের বস্তা

বলে ফেলে দিবোনা। প্লিজ চোখ

খোলো, আরে আমাকে তোমার ঠিক

করতে হবেনা? তোমার যে এখনো অনেক

কাজ আছে এভাবে চলে যেয়ো না। কিন্তু

রাইসার কোনো সাড়া না পেয়ে ধীরে -

ধীরে ছেলেটি নিশ্চুপ হয়ে গেলো।

বুঝে ফেললো --- মেয়েটি ওর কথাটা রাখার

জন্য দূরে চলে গেলো।

চারপাশের আবহাওয়া ধীরে- ধীরে আর ও

অন্ধকারের আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে, আকাশ বারবার

আর্তনাদ করছে, বৃষ্টির স্পর্শের জন্য, প্রকৃতির

মাঝে গম্ভীরতা প্রকাশ পাচ্ছে,

এমতাবস্থায় রিয়ান নিজের আবেগকে কন্ট্রোল

করে, চারপাশে তাকিয়ে বলতে লাগলো -- না

এভাবে আর দাড়িয়ে থাকলে হবেনা, আমি ওকে

নিয়ে হসপিটালে যাবো, ওকে বাচতেই হবে।

এই বলে,

রিয়ান তাড়াতাড়ি রাইসাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে, বারবার

ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো---

এই তুমি তাড়াতাড়ি চালাও, প্লিজ। ওকে, ওকে আমি

কোথা ও যেতে দিবোনা। হে ইউ আমার

সাথে জগড়া করবেনা, লিসেন আমার ভুল

হয়েছে প্লিজ ফিরে এসো।

ড্রাইভার ও রাইসার এই অবস্থা দেখে খুব দ্রুত গাড়ি

চালাতে লাগলো, কিন্তু রিয়ানের মনে হচ্ছে

পথটা যেনো আজ শেষ হচ্ছে না, আসলে

আমাদের লাইফে আমরা এমন কিছু সিশুয়েশন

পড়ি যখন আমাদের অপেক্ষারর

প্রহরটা অধীক হয় কিন্তু অপেক্ষা করার ইচ্ছাটা

সল্প থাকে তাই তখন আমাদের মনে হয় সময়টা

খুব ধীরগতির।

যাইহোক,

অবশেষে রিয়ানের অপেক্ষার প্রহরটা শেষ

হয়,

রাইসাকে নিয়ে হসপিটালে আসতেই দূর

থেকে সাঈফ রিয়ানের কোলে রাইসাকে

দেখা মাএই দৌড়ে আসলো, তারপর চিৎকার দিয়ে

রিয়ানকে পাগলের মতো জিজ্ঞাসা করতে

লাগলো--- ওর কী, কী হয়েছে, ওর

শরীরে এতো রক্ত কেন?

নার্স, নার্স।

সাঈফের এরুপ চিৎকারে

রাইসাকে নার্সরা এসে কেবিনে নিয়ে

গেলো,

আর রিয়ান অবাক দৃষ্টিতে হাতের মধ্যে লেগে

থাকা রাইসার রক্তগুলোর দিকে তাকিয়ে

চোখের জলগুলো টপটপ করে ছেড়ে

দিলো, নিজের চোখের জলগুলো যখন গাল

বেয়ে নিচে পড়তে লাগলো তখন ও বিস্মিত

কন্ঠে নিজেকে বলতে লাগলো,

--- আমি কাঁদছি?,

আমি রিয়ান হক কাঁদছি। এই মেয়ে কই তুমি, তুমি

সফল হয়েছো,দেখ এই রিয়ান হককে তার

জমাটবদ্ধ কষ্ট থেকে এক পশলা বৃষ্টির স্পর্শে

আজ মুক্ত পেয়েছে। কই তুমি, কই। প্লিজ কাম

ব্যাক।

রিয়ানের পাগলের মতো এরুপ আচরন আর ওর

চোখ জল দেখে সাঈফ অনেক বেশি অবাক

হয়, রিয়ানের কাছে এসে ওর মাথায় হাত দিয়ে

বলে উঠলো----

রিয়ান ওর কী হয়েছে, ওর কী হয়েছে,

রাইসা, কেন কথা বলছেনা,।

রিয়ান সাঈফের প্রশ্নগুলোর কোনো উওর না

দিয়ে নিরবতার আড়ালে বসে শুধু অঝোর দ্বারা

চোখের জল ফেলাতে লাগলো।

সাঈফ রিয়ানের এই অবস্থা দেখে ওর সাথে আর

কথা না বলে সোজা রাইসার কাছে চলে

গেলো। আর এদিকে রিয়ান নিজেকে

কোনো ভাবে কন্ট্রোল করে মিষ্টার শামছুল

হককে ফোন দিলো এবং রাইসার

অ্যাকসিডেন্টের ব্যাপারটা বললো।

আদঘন্টার ভিতরে রিয়ানের বাড়ির সবাই চলে

আসলো। মিথিলা এসেই রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে

কাঁদতে - কাঁদতে বললো--- ভাইয়া কীভাবে

ভাবীর এই অবস্থা হয়েছে।

রিয়ান মিথিলার প্রশ্নটির কোনো উওর দিতে

পারলোনা, অবশ্য দিবেই কিভাবে কেননা সত্যটা

জানলে তো মিষ্টার শামছুল হক এখন আবার

হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।

রিয়ান মিথিলার প্রশ্নটিকে অবহেলা করে

দেওয়ালের সাথে ঘেসে বসে রইলো আর

ভাবতে লাগলো----

কেন আমি এতো ভেঙ্গে পড়ছি , কীসের

জন্য, কার জন্য, কে হয় ও আমার, আমি কেন কাঁদছি,

আমি তো কখনো কাঁদতে পারতাম না, ইভেন

সেদিন ও তো একফোঁটা ও চোখের জল

পড়েনি যেদিন রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে

গিয়েছিলো, তাহলে আজ কেন চোখ দুটো

আমার এতো কষ্ট দিচ্ছে, কেন?

কিছুসময় পার হওয়ার পর,

সাঈফ রিয়ানের কাছে আসলো, রিয়ান সাঈফকে

দেখামাএ মুখটাকে নিচু করে ফেললো কেননা

বারবার তার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।

সাঈফ আসা মাএই সবাই জিজ্ঞাসা করতে লাগলো --

রাইসা এখন কেমন আছে?

সাঈফ কোনো উওর না দিয়ে রিয়ানের দিকে

তাকিয়ে এক প্রকার কষ্টের হাসি হেসে

রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো--- সবাই তো

জিজ্ঞাসা করলো রাইসার কথা, কই তুমি তো রিয়ান

জিজ্ঞাসা করলে না, কী জানতে চাইবেনা ওর

কথা, নাকি আজ ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে যাবে।

রিয়ান তখন ও কোনো কিছু বললো না।

মিথিলা তখন বলতে লাগলো--- ডক্টর ভাইয়া এখন

স্বাভাবিক নয়, প্লিজ বলুননা ভাবী কেমন আছে?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাঈফ বললো

--- কিছু বলা যাচ্ছে না, মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত

পেয়েছে, ওকে অটিতে নিয়ে যেতে

হবে।

কথাটা শুনা মাএই রিয়ান সাঈফের সামনে গিয়ে দুহাত

তুলে করুনার দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো,

রিয়ানের এরুপ দৃষ্টিতে সাঈফ বুঝে ফেললো

এর আড়ালে কতো ইতিহাস আর কতো না বলা কথা

লুকিয়ে আছে ,

সাঈফ মুচকি হাসি দিয়ে,

রিয়ানের হাত দুটোকে আকড়ে ধরে শান্ত

কন্ঠে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে উঠলো---

চিন্তা করোনা।

রিয়ান এমন একটা সিশুয়েসনে ও সাঈফকে এমন

শান্ত মানুষ রুপে দেখে বুঝতে পারলো,

পৃথিবীতে এখন ও কিছু মানুষ আছে যারা নামে নয়

শুধু,

কর্মে ও একজন সত্যিকারের হিউম্যান।

সাঈফ রাইসাকে অটিতে নিয়ে যাওয়ার সময় রিয়ান ওর

চেহারার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,

ওর মায়াবী, নিস্পাপ চেহারাটা যেনো রিয়ানকে

তখন ও বলছিলো--ভালো থাকবেন

অটিতে নিয়ে যাওয়ার পর রিয়ান অটির সামনে

দাড়িয়ে বারবার ভাবতে লাগলো --- আমার কেন

এতো কষ্টে হচ্ছে, ও তো আমার কেউ নয়

তাহলে কেন বারবার ওর খামখেয়ালী পনাগুলো

আমার চোখের সামনে ভাসছে।

অটির দরজার লাল বাতিটার দিকে তাকিয়ে রিয়ান

অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো, আর বুঝতে

পারলো কিছু সময় আমরা খারাপ পরিস্হিতি তে পড়ি

আমাদের নিজেদের কারনে আর আমরা সবসময়

সেই মানুষগুলোকে অবহেলা করি যারা আমাদের

জন্য ভাবে, যারা আমাদের সুখের জন্য সব

করতে পারে,সব।

অনেকক্ষণ পর,

অটির লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো,লাইটটা বন্ধ

হতেই রিয়ানের বুকের মাঝে একটা স্বস্তি

অনুভব হলো,

এই ভেবে যে শেষ অবদি আমার অপেক্ষার

প্রহরটা সমাপ্তি হলো।

সাঈফ অটি থেকে বের হতেই রিয়ান সাঈফের

হাতটা আকড়ে ধরে বলে উঠলো --- ডক্টর

রাই,রাইসা কেমন আছে।

লোকটির চোখেমুখে এতোক্ষণ নিজের

কষ্টটাকে লুকিয়ে রাখার যে শক্তি ছিলো তা

ধীরে -ধীরে চুপসে গেলো,

বিষাদের ছায়া নেমে আসলো লোকটির মুখে

আর তা দেখে রিয়ানের চিন্তা আর বেশি

বেড়ে গেলো, --- কী হলো কিছু

বলছেন না কেন?

সাঈফ তাও কোনো জবাব দিলোনা, মিথিলা তখন

আর নিজেকে সামলাতে না পেরে সাঈফের

সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো --- কী হলো

আপনে কথা বলছেন না কেন, ভাবী এখন

কেমন আছে?

-সাঈফ তখন চোখের পানিগুলো ছেড়ে দিয়ে

বললো ---- ওর অপারেশনটা successful

হয়েছে, বাট ও অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার সময়

অতিরিক্ত কষ্ট পাওয়ার কারনে

ও কোমায় চলে গেছে, ও রেসপন্স

করছেনা, আর

--- আর কী?

সাঈফ তখন আর চোখের জলগুলো ধরে

রাখতে পারলোনা, কান্নামাখা কন্ঠে মিথিলাকে

বললো-- আর কখনো রেসপন্স,

করবে কীনা সন্দেহ আছে।

সাঈফের কথাগুলো শুনতেই রিয়ানের বুকটা

কেপে উঠলো, কেন সে জানেনা, শুধু

মনে হলো বুকের মাঝে কিছু একটা আর্তনাদ

করছে।

রিয়ান ঠাস করে নিচে বসে পড়লো।

কিছুসময় পর কী একটা ভেবে অটিতে গিয়ে

রাইসার কাছে গিয়ে ওর কানে ফিসফিস করে

বলতে লাগলো--- এই মেয়ে তোমাকে

উঠতে ই হবে,আজ না হয় কাল, একদিন তুমি ঠিক

উঠবেই।

আ,আর তোমার শেষ কথাটি আমি রাখবো, আর

আমার বাবাকে দেওয়া তোমার ওয়াদার ও বেখালাফ

হবেনা।

এই বলে রিয়ান অটি থেকে বের হয়ে

গেলো।

সেদিন থেকেই রিয়ান আবার নতুন করে বাচার

অনুপ্রেরণা পেলো, সবকিছু নতুন করে শুরু

করলো।



ভাড়াটে বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পর্ব ১৩

চারপাশের বাড়িটা আজ আলোক সজ্জায়

সাজানো,

হলুদ, নীল, আর লাল বাতির স্পর্শে পুরো

বাড়িটা

আজ একটু বেশিই আলোকিত দেখাচ্ছে।

বাড়ির

মানুষগুলো ও আজ অনেক ব্যস্ত, কিন্তু

কীসের এতো ব্যস্ততা।

কীসের এতো আয়োজন?

মিসেস শায়লা বেগম আর শিলা রান্না ঘর

থেকে

যেনো আজ বের হতেই পারছেনা, সামছুল হক

বাড়ির কোথা ও কোনো ক্ষুদ আছে কিনা তা

ঘুরে- ঘুরে দেখছে,আর

মিথিলা একগাল হাসি মুখে রেখে উপরে

যেতে লাগলো, আর চেঁচিয়ে - চেঁচিয়ে

রিয়ানকে ডাকতে লাগলো--- ভাইয়া, এই

ভাইয়া।

অতঃপর

রিয়ানের দরজার সামনে গিয়ে নক করতে

লাগলো আর বলতে লাগলো --- কীরে ভাইয়া

আজকের দিন ও কী তুই এতো বেলা অবদি

ঘুমোবি।

ওপাশ থেকে তখন উওর আসলো-- একটু দাড়া

বোন আসছি।

গলার আওয়াজটি শুনতে পেয়ে মিথিলা শান্ত

হয়ে

গেলো, কিছুসময় পর রিয়ান দরজা খুললো,

রিয়ান

দরজা খুলতেই মিথিলা চমকে গেলো

রিয়ানকে

দেখে, পরনে নীল, গোল্ডেন

শেরোয়ানি,

--- বেশ লাগছে ভাইয়া তোকে।

--- ধন্যবাদ মাই ডিয়ার সিস্টার।

--- বাট ভাইয়া তুই আজ ও এতো বেলা অবদি

ঘুমোলি।

---- আরে না, রুম সাজাচ্ছিলাম।

--- রুম সাজাচ্ছিলি কিন্তু কার জন্য।

--- বাহ! রে তুই জানিস না বুঝি কার জন্য?

মিথিলা রিয়ানের মুখ থেকে বাক্যটি শুনা

মাএই নিশ্চুপ

হয়ে রইলো, কিছুসময় পর রিয়ানকে শান্ত

কন্ঠে

বলতে লাগলো---আর কতকাল অপেক্ষা করবি

ভাইয়া, কতদিন আর এভাবে ঘর সাজাবি, কত

দিন আর

মিথ্যে আশা নিয়ে মরা লাশটির কাছে

যাবি।

--- চুপ, চুপ মিথিলা এসব বলতে নেই, আর কে

মরা

লাশ, ও আমার সাথে অভিমান করেছে তাই

হয়তো

এভাবে আছে।

তুই দেখিস ও আজ আমার সাথে আসবে,আমার

সাথে কথা বলবে।

---; প্রতিদিনেই তো তুই এই কথাটি বলিস।

--- এই আশাটিয়েই তো আমার সব মিথি।

যাইহোক

আমি তাহলে এখন বের হই।

--- মানে কী, তুই এখনেই হসপিটালে যাবি।

--- হুম,

--- খেয়ে যাবিনা।

--- এসে খাবো

এই বলে রিয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে

গেলো,নিচে নামতেই মিসেস শায়লা বেগম

রিয়ানকে দেখা মাএই ওর কাছে এসে ওর

মাথায়

হাত দিয়ে বলে উঠলো -- বাবা যার কাছে

যাচ্ছিস,

সে যেনে আজ সুস্থ হয়ে যায় তোর

অপেক্ষার যেনো অবসান ঘটে।।

--- দোয়া করো মা।

--- প্রতিদিনেই তো এই দোয়াটি করি আর

প্রতিদিন

তুই আসার অপেক্ষায় থাকি এই ভেবে যে এই

বুঝি তুই হাসি মুখে ওর হাতটা ধরে এই ঘরে

ফিরবি ।

রিয়ান মায়ের কথার কোনো উওর না দিয়ে

ছলছল চোখে বাড়িতে থেকে বের হয়ে

গেলো। মনের মাঝে নানা আশা আর স্বপ্ন

নিয়ে হসপিটালের দিকে অগ্রসর হতে

লাগলো,

তারপর ৩৪৫ নাম্বার কেবিনে গেলো, গিয়ে

দেখে সাঈফ বসে আছে সাঈফকে দেখা

মাএই রিয়ান বললো--- মামা, চলে এসেছি।

--- এই তোমার আসার সময়,

সেই অনেক্ষণ অবদি তোমার জন্য বসে আছি।

-- স্যরি মামা আসলে জ্যামের কারনে আসতে

একটু দেরি হয়ে গেছে।

--- ব্যাপার না, এবার তুমি তোমার ওয়াইফের

সাথে

থাক, আমি চললাম।সাঈফ চলে যেতেই রিয়ান

ক্রমশ কেবিনের কাছে গেলো, তারপর

রাইসার

মাথায় হাত দিয়ে ছলছল চোখে বলতে

লাগলো---আজকের দিন ও এভাবে নিশ্চুপ হয়ে

শুয়ে রইবে, উঠবেনা তুমি জানো আজকে

কী?

আজ আমাদের First Anniversary, এ দিনেই তো

তুমি এই ইডিয়েট ছেলেটাকে ঠিক করার জন্য

ওর হাতটা ধরেছো।

আর এ দিন ও তুমি আমার সাথে কথা বলবেনা,

একটা

লাশের মতো শুয়ে থাকবে, তুমি জানো আজ

আমি তোমার জন্য পুরো বাড়িটা সাজিয়েছি,

মাকে

বলে এসেছি আজ তোমাকে আমি আমার

সাথে

নিয়ে যাবো। অবশ্য প্রতিদিনেই মাকে এই

আশ্বাসটা দিয়ে আসি তবে আজকে অন্তরের

অন্তস্থল থেকে কথাটা বলে এসেছি।

উঠোনা, আমার সাথে কথা বলোনা।

হঠ্যাৎ রিয়ান নিশ্চুপ হয়ে গেলো, তারপর

কিছুক্ষণ

চুপ থেকে বলে উঠলো-- এতো অভিমান

তোমার যে একটা বছর পেরিয়ে গেলো,

অথচ তুমি এখন সেই পুতুলের মতো নিশ্চুপ

হয়ে শুয়ে আছ ও।

তুমি জানো? প্রতিদিন বাবা ভাবে এই বুঝি

তুমি সুস্থ

হয়ে বাবাকে বলবে -- আপনে কোনো চিন্তা

করবেননা বাবা, আপনার ছেলে আবার আগের

মতো ঠিক হয়ে যাবে। মিথি প্রত্যহ ভাবে এই

বুঝি তুমি ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে। আর

আমি

তোমার সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় প্রত্যহ

দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলি। কিন্তু তুমি?

আমাদের অপেক্ষাটার অবসানেই ঘটাচ্ছনা,

আচ্ছা

তোমার এতো অভিমান, এতো আমার উপর রাগ

যে সেদিন সেই যে বললাম --- চলে

যেতে তাই আজ ও নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে।

গত এক বছর ধরে প্রতিদিন তোমার কাছে

এসে

তোমার সাথে আমি নিজেই শুধু কথা বলি

কিন্তু তুমি

একবার ও আমার সাথে কথা বলোনা, তুমি

বুঝো না

রাইসা এতে আমার খুব কষ্ট হয়।

আচ্ছা রাইসা তোমার এভাবে শুয়ে থাকতে

কষ্ট

হয়না, প্লিজ রেসপন্স কর, প্লিজ।

রিয়ানের কথাগুলো শুনে রাইসার চোখ জলে

টলটল করতে লাগলো, রিয়ান তা দেখে

অভিমানী কন্ঠে বললো--- এতই যখন আমার

কষ্ট দেখে তোমার কষ্ট হয় তাহলে কেন

উঠছো না, কেন আমার হাতটা আকড়ে ধরছো

না,

রাস্তায় হাটতে গিয়ে যখন হোচট খেলাম তখন

তুমি আমার হাতটা আকড়ে ধরে আমাকে পথ

দেখিয়েছো আর এখন মাঝপথে ছেড়ে

দিয়েছো, তাহলে তোমার আর রিয়ার মধ্যো

কী পার্থক্য রইলো।

রাইসার অশ্রু তখন গড়িয়ে রিয়ানের হাতে

পড়লো, রিয়ান তখন বললো-- না তুমি ভেবোনা

আমাকে নিয়ে রাইসা, সেদিন যখন ডক্টর

বলছিলো তুমি কোমায় চলে গেছো, তুমি

কখনো আর রেসপন্স করবে কীনা সন্দেহ

আছে, কথাটি শুনে সেদিন হয়তো আমি

ক্ষণিকের জন্য ভেঙ্গে পড়েছিলাম, কিন্তু

পরক্ষণে আমি নিজেকে বুঝিয়েছি এই বলে

যে--- যারা অন্যদের বাচার অনুপ্রেরণা দেয়

তার

কখনোই এতো সহজে মরে যায় না। আর এই

বিশ্বাসে, দেখতে- দেখতে একটা বছর পার

করে দিলাম।

তুমি তো জানো রাইসা আমি এখন আর

সিগারেট

খাইনা,এখন আর মদ খাইনা এখন আর রাত ও

জাগিনা, আর

ওই তিন রাস্তার মোড়ে ও বসে থাকিনা।

কেন

জানো?

কারন তোমার শেষ কথাটি ছিলো --- ভালো

থাকবেন।

আর সেই কথাটিই আমাকে নতুন করে জিবন শুরু

করতে বাধ্য করেছে,

আর ভালো থাকার ও চেষ্টা করছি,এবং

নিজের

কাছের মানুষগুলোকে ও ভালো রাখার

চেষ্টা

করছি। জানো রাইসা এখন আমি অনেক কিছু

বুঝে

গিয়েছি সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে

শিখে গেছি।

যখনি এখন আবেগের বর্শে আবার জিবনকে

থামিয়ে দিতে চায় মন,

তখনি তোমার কাছে চলে আসি তোমার এই

নিস্পাপ চেহারা দেখে আমি আবার বাচার

অনুপ্রেরণা পাই। সেদিন হয়তো রাইসা আমি

তোমার কথাগুলোর মূল্য বুঝতে পারিনি কিন্তু

এখন বুঝতে পেরেছি।

আসলে আমরা সত্যিকারের যখন কেউকে

ভালোবাসি তখন ভালোবাসার মানুষটিকেই

ভুল

নির্বাচন করি। আর যখন কেউ আমাদের

সত্যিকারের ভালোবাসে তখন আমরা না তার

ভালোবাসাটা বুঝিনা, , বুঝতে পারি তখনি

যখন সে

আমাদের ছেড়ে দূরে চলে যায়। যেমন এখন

আমি বুঝতে পেরেছি তোমার নিরবতার

কারনে

আর রিয়া ও হয়তো বুঝতে পেরেছে

তাইতো কয়েকদিন আগে আমাকে ফোন

দিয়ে কাঁদতে - কাঁদতে বললো-- ও আমার

কাছে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু এ কথাটি

শুনে না

সেদিন আমি ও একটু ও খুশী হয়নি, তিনটা বছর

যার

জন্য মরা লাশের মতো ছিলাম সে আমাকে

ফোন দিয়েছে, সেই অনুভূতিটা আমার ভিতর

কাজ

করেনি কেন জানো বিকজ আমার সব অনুভূতি

আর

আবেগ, ভালোবাসা শুধু তোমায় ঘিরে। আসলে

আমাদের জিবনে সুখকর অনুভূতির ঘাটতি

থাকে

বিধায় আমরা জিবন পথ চলতে গিয়ে বারবার

ভালোবাসাটাকে খুজি, আর ভালোবাসা

প্রথম,

দ্বিতীয়, তৃতীয় বলতে কিছু নেই, যেই

ভালোবাসায় হাজার কষ্টের মাঝে ও আমরা

সুখকর

অনূভুতি খুজে পাই সেটাই প্রথম এবং শেষ

ভালোবাসা, আর বাকি সবকিছু আবেগ

কিংবা একটু

ভালোলাগা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আজ মনে হচ্ছে সেদিন রিয়া আমাকে ছেড়ে

চলে গিয়ে অনেক ভালো করেছে, কেননা

এই পৃথিবীতে এমন অনেক স্বামী- স্ত্রী

আছে যাদের ভিতর ভালোবাসা শব্দটি নেই

কিন্তু

সমাজ, বাস্তবতার কারনে একজন

আরেকজনের

সাথে মিথ্যে অভিনয় করে জিবনটা পার করে

দিচ্ছে। কিন্তু রিয়া আমার সাথে সে

নাটকটা

করলোনা, যদি করতো তাহলে কখনোই

জানতেই পারতাম না যে ও আমাকে কখনোই

ভালোবাসেনি, আমি শুধু মাএ ওর আবেগ

ছিলাম যার

মেয়াদ ছিলো তিন বছর। আর ভালোবাসা

জিনিসটা

কখনো সময়ে সাথে- সাথে কমেনা বরং একটু

একটু করে বাড়ে।

যা মানুষকে আর দীর্ঘ দিন বাচার অনুপ্রেরণা

দেয়। আর সেই অনুপ্রেরণা নিয়েই তো দুজন

একসাথে হাতে - হাত রেখে জিবনের সমস্ত

জরা- জীর্ণতা আর বাধা অতিক্রম করে।

--- আর কত ওই পুতুলের সাথে কথা বলবে

রিয়ান?

সাঈফের গলার আওয়াজটি পেতেই রিয়ান

নিশ্চুপ

হয়ে গেলো,কিছুসময় রাইসার দিকে তাকিয়ে

থেকে বলে উঠলো--- যতদিন ও রেসপন্স না

দেয়।

--- ওর আর রেসপন্স, এই আশা নিয়ে তো এক

বছর পার করেই দিয়েছো। যাও বাড়ি যাও।

এই বলে সাঈফ চলে গেলো।

রিয়ান তখন রাইসার চোখের জলগুলো মুছতে

লাগলো, আর নিলিপ্ত স্বরে বলতে লাগলো---

আজকে ও খালি হাতে ফেরাবে।

তারপর রিয়ান রাইসার কপালে হাত বুলিয়ে

বলে

উঠলো--- আসি।

কথাটি বলে রিয়ান দাড়িয়ে চলে যাওয়ার

জন্য পা

দিতেই মনে হলো কেউ ওর হাতটাকে শক্ত

করে ধরে রেখেছে।

নিছক কল্পনা কিংবা স্বপ্ন মনে করে রিয়ান

আবারো

চলে যেতে গেলেই সেই অনুভূতিটটা

আবারো ফিল হলো।

রিয়ানের চোখ- মুখে সুখের আমেজ

নেমে আসলো, পিছন ফিরে তাকালো,

তাকাতেই দেখে রাইসা হাতটা আকড়ে

ধরেছে,

রিয়ান ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারলোনা,

তাই রাইসার

মাথার পাশে গিয়ে বসে, চোখ দুটো বন্ধ

করলো নিছক স্বপ্ন ভেবে, হঠ্যাৎ মনে

হলো কেউ তাকে বলছে--- নিয়ে যাবেনা

আমায় তোমার সাথে।

কৌতুহল বর্শে চোখ খুলতেই রিয়ান দেখলো,

রাইসা ওকে কথাটি বলছে।

ব্যাপারটা দেখে রিয়ান জোরে,জোরে

শ্বাস

ছাড়লো, আর সেই এক একটা শ্বাস যেনো

রিয়ানের এক বছরের অপেক্ষার প্রহর গুনার

প্রমান।

রিয়ান রাইসার কপালে আলতো করে একটা

চুমু

দিয়ে বললো---

একটা বছর পর আমার অপেক্ষার সমাপ্তি

হলো,

রাইসা আমি কী কোনো স্বপ্ন দেখছি।

রাইসা তখন আস্তে- আস্তে বললো--- আমি

রিয়া

নয় যে হোচট খেয়েছো বলো মাঝপথে

তোমায় ছেড়ে চলে যাবো। তাইতো

মরতে- মরতে ও বেচে গেলাম।

রিয়ান এতোক্ষণ পর বুঝতে পারলো যে এখন

যা ও দেখছে বা ওর সাথে হচ্ছে সব সত্য,

রিয়ান

কিছুসময় চুপ থেকে অতঃপর জোরে চিৎকার

দিয়ে ডক্টরকে ডাকতে লাগলো--- ডক্টর ও

রেসপন্স করেছে,ও রেসপন্স করেছে।

তারপর উচ্চস্বরে হেসে বলতে লাগলো--

এই ভাড়াটে বউ তুই আমার সাথে বাড়ি

যাবিনা?

--- না,

--- কিন্তু কেন?

--- কারন এই যে তুই বললি আমি তোর ভাড়াটে

বউ,

যার ২ মাস ফুরিয়ে গেছে।

--- রিয়ান তখন হাসতে - হাসতে বললো, হ্যা

তো তুই আমার ভাড়াটে বউ তো, তবে ২

মাসের জন্য নয় সারাজিবনের।

এই বলে রাইসার হাতটা আর ও শক্ত করে

আকড়ে

ধরলো আর যাতে হারিয়ে না যায়।

তারপর রিয়ান কাঁদতে লাগলো, রিয়ানের

কান্না

দেখে রাইসা বলে উঠলো-- এ মা রিয়ান হক

কাঁদছে।

--- কী করবো বল, তুই য়ে তো কাঁদতে

শিখিয়ে দিলি, আমায় ছেড়ে চলে যাস না

প্লিজ।

--- কখনো না, এই যে হাতটা ধরলাম মৃত্যু অবদি

শক্ত করে ধরে রাখবো।

( সমাপ্ত).

( এই যে আপনাদের বলছি যারা রিয়ানের

মতো

এমন কেউকে ভালোবেসে জিবনটাকে

থামিয়ে দিতে চাইছেন তাদের বলছি, থমকে

যাবেননা, সমস্ত কষ্টকে উপেক্ষা করে

সামনে হাটতে থাকুন দেখবেন এমন কারো

দেখা পাবেন যে আপনে মাঝ পথে হোচট

খেয়ে পড়ে গেলে ও ছেড়ে চলে

যাবেনা

যাইহোক,

ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে,ভুল- হলে

ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।


সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url