১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস | শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা | শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে
আজ ১৪ ই ডিসেম্বর - শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস । দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তে বাংলাদেশের জয় যখন সময়ের ব্যাপার মাত্র ঠিক তখনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর আল বদর, আল শামস, রাজাকাররা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বেছে বেছে হত্যা করে শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক চিকিৎসক সহ বরেন্য বুদ্ধিজীবীদের । নরপিচাশদের বর্বরতা থেকে রেহাই পাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষকরাও ।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ছাড়াও অনেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে তা জানার জন্য গুগলে ১৪ ই ডিসেম্বর অনেক আনুষ সন্ধ্যান করে থাকেন । আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা বিস্তারিত ইতিহাস জানতে পারবেন । একাত্তর সালে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার ঘটনায় মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোট ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছিল, ট্রাইব্যুনালের রায়ে সব কটি প্রমাণিত হয়েছে। ১৮ জন বুদ্ধিজীবী হলেন দৈনিক ইত্তেফাক–এর তৎকালীন কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন, পিপিআইয়ের (পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনাল) প্রধান প্রতিবেদক সৈয়দ নাজমুল হক, দৈনিক পূর্বদেশ–এর প্রধান প্রতিবেদক এ এন এম গোলাম মোস্তফা, বিবিসির সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীন, দৈনিক সংবাদ–এর যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সিরাজুল হক খান, ড. মো. মুর্তজা, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ক্লিনিক্যাল মেডিসিন ও কার্ডিওলজির অধ্যাপক ফজলে রাব্বী ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আলীম চৌধুরী। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই বুদ্ধিজীবীদের অপহরণের পর হত্যা করা হয়। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের মরদেহ পরে রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে পাওয়া গেছে। অবশেষে আমরা ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয়ী হই ।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অনেক কর্মসূচি পালিত হয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্টানে । ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে থাকায় স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ সনাক্ত করেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা
শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা জানতে চান অনেকে । বাংলাপিডিয়া হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা নিম্নরূপ:
- শিক্ষাবিদ ৯৯১
- সাংবাদিক ১৩
- চিকিৎসক ৪৯
- আইনজীবী ৪২
- অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) ১৬
শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা নিয়ে উপরে সংক্ষেপে দেওয়া হলেও , নিছে বিস্তারিত নিহত বুদ্ধিজীবীদের তালিকা দেওয়া হলো উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহিত ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র)
- মুনীর চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)
- মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)
- আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য)
- আবুল খায়ের (ইতিহাস)
- জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য)
- সিরাজুল হক খান (শিক্ষা)
- এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা)
- হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য)
- রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য)
- সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা)
- ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান)
- এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)
- এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা)
- শরাফত আলী (গণিত)
- এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা)
- অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা)
- এম সাদেক (শিক্ষা)
- এম সাদত আলী (শিক্ষা)
- সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস)
- গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস)
- রাশীদুল হাসান (ইংরেজি)
- এম মর্তুজা (চিকিৎসক)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ)
- শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত)
- মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)
চিকিৎসক
- মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)
- আব্দুল আলিম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)
- শামসুদ্দীন আহমেদ
- হুমায়ুন কবীর
- আজহারুল হক
- সোলায়মান খান
- আয়েশা বদেরা চৌধুরী
- কসির উদ্দিন তালুকদার
- মনসুর আলী
- মোহাম্মদ মোর্তজা
- মফিজউদ্দীন খান
- জাহাঙ্গীর
- নুরুল ইমাম
- এস কে লালা
- হেমচন্দ্র বসাক
- ওবায়দুল হক
- আসাদুল হক
- মোসাব্বের আহমেদ
- আজহারুল হক (সহকারী সার্জন)
- মোহাম্মদ শফী (দন্ত চিকিৎসক)
অন্যান্য
- শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক)
- নিজামুদ্দীন আহমেদ (সাংবাদিক)
- সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক)
- সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক)
- আ ন ম গোলাম মুস্তফা (সাংবাদিক)
- আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার)
- ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ)
- রণদাপ্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর)
- যোগেশচন্দ্র ঘোষ (শিক্ষাবিদ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক)
- জহির রায়হান (লেখক, চলচ্চিত্রকার)
- মেহেরুন্নেসা (কবি)
- আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ)
- নজমুল হক সরকার (আইনজীবী)
- নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক)
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ১৪ ই ডিসেম্বর । প্রতিবছর এ দিবস পালিত হয় । ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। ডিসেম্বরের ৪ তারিখ হতে ঢাকায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ হতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হতে থাকে। মূলত ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনার মূল অংশ বাস্তবায়ন হয়। অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখক-সহ চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরেরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেদিন প্রায় ২০০ জনের মতো বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা হতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় । সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত । তারপ থেকে পালিত হয় ১৪ ই দিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ।