নবীর প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা প্রবন্ধ - nobi prem o valobasa
নবীর প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা প্রবন্ধ -নিয়ে আজকের এই নিওটেরিক আইটির নতুন পর্ব ।
নবীর প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা
প্রেম বা ভালোবাসা শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। এর মধ্যে এক প্রকারের প্রেম হলো আল্লাহর সাথে। আর আরো এক প্রকার হলো রসূলের সাথে। মুসলিম ঘরে জন্ম নেওয়া প্রায় প্রতিটি শিশুই জানে তাদের উচিত নবী কে ভালোবাসা। কিন্তু তারা জানে না সেই প্রেমের গভীরতা কতটা! আসলে তাদের বাবা মায়েরাও জানেনা। তারা যতটুকু জানে এর বাইরে আর বাচ্চাদের জানাবেই কি!
জন্মের পর যখন থেকে বুঝতে শিখি দেখি মা আমাদের জন্য অনেক করেন, অসুস্থ হলে মাথার কাছে রাত জেগে মা কেই বসে থাকতে দেখি। বাবাকে দেখি পছন্দের খাবারগুলি কেমন না চাইতে এনে দেন। জামা কাপড় লাগবে, বই খাতা লাগবে বাবাকেই বলি। পছন্দের একটা খাবার খেতে ইচ্ছে করছে মা কে বলি। আর দেখি কতটা কষ্ট করে হলেও তারা তা ঠিকই ম্যানেজ করে দেন। তাই ছোট বেলা থেকে সবথেকে কাকে ভালোবাসো জিজ্ঞেস করলে এই বিষয় টা কনফ্লিক্ট হয় দুইজনের মধ্যে তারা হলে বাবা অথবা মা। এদেও বাইরেও আরো কেউ থাকতে পারে আমাদের ভাবনাতেও আসে না। কারন ছোটবেলায় এর বাইরে আমরা যদি আর কাউকে দেখি আমাদেরকে ভালোবাসতে সেটা হতে পারে নানু-দাদু, দাদা-নানা, ভাইবোন প্রমুখ। কিন্তু চৌদ্দশত বছর আগে কেউ আমাদের কে ভালোবেসে গেছেন সেটা রয়ে যায় আমাদের দৃষ্টি ও ভাবনার আড়ালে। অন্য অনেক মেকি ভালোবাসার আড়ালে তা ঢাকা পড়ে রয়। অথচ তাঁকেই কিনা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা উচিত।
ভালোবাসতে হলে তো তাঁর সম্পর্কে আমাদের কে জানতে হয়। অথচ তাঁর সম্পর্কে আমাদের জানার গন্ডি শুধু ওই ক্লাস টেন অব্দি ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের একটা চ্যাপ্টারের কিছু অংশ। কি করে সম্ভব ভেবে দেখুন তো এমন একজন মহামানবের জীবনী অতটুকু একটু জায়গায় তুলে ধরা। পৃথিবীর সমস্ত সাগরের পানি যদি কালি হতো সমস্ত গাছ কেটে যদি কলম বানানো হতো তবুও তো এই মহামানবের জীবনীর এক অংশও লিখে শেষ করা যেত না।
যখন কাউকে ভালোবাসতে হয় তখন তাকে জানতে হয়, বুঝতে হয়। আবার যখন কাউকে খুব ভালো করে জানা যায়, বুঝতে পারা যায় তখন তাকে ভালোবাসাও যায়। তাকে উপলব্ধি করাও যায়। তাই আমাদের উচিত সেই মহামানব সম্পর্কে বেশি বেশি করে জানা। আমাদের বাবা মায়েরাও এর থেকে বেশি তেমন জানেন না। ফলশ্রুত আমরাও কখনো বুঝতে পারিনা এর বাইরেও আরো জানার আছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও এই মহামানব সম্পর্কে আরো অনেক বই আছে যা পড়লে অনেক কিছু জানা যায় বা বুঝতে পারা যায়। যতই পড়ার বা জানার গন্ডি বাড়বে ততই তাঁর প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।
আমরা সাধারনত অন্য নবীদের জীবনী সম্পর্কে কুরআনে জানতে পারি। কিন্তু যেহেতু আমাদের নবীর জীবদ্দশায় কুরআন নাযিল হয়েছে তাই তাঁর জীবনী জানতে সীরাহ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁর জীবনী সম্পর্কে না জানলে, না পড়লে আমারা জানবো না তিনি আমাদের কে কতটা ভালোবেসেছেন। কতটা দোয়া আমাদের জন্য করেছেন। কতটা কেঁদেছেন, কতটা মিস করেছেন আমাদেরকে। আমরা দুনিয়ার জমিনে আসার আগেই তিনি আমাদের কে ভালোবেসে গেছেন আমাদের কে না দেখেই। স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজে ঘোষনা করেছেন আমাদের প্রতি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরদ ও প্রেম।
তিনি বলেছেন, ১) لَقَدۡ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ عَزِیۡزٌ عَلَیۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیۡصٌ عَلَیۡکُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের কাছে একজন রসূল এসেছেন; (তোমাদের জন্য তাঁর মায়া এতই বেশি যে) তোমাদের কে যা কিছু কষ্ট দেয় তা তাঁর কাছে খুবই কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আত-তাওবাঃ আয়াত-১২৮)
কয়েকটি হাদিস সম্পর্কে জানলে আমরা কিছুটা নমুনা বুঝতে পারবো। দেখে নিই,
২) আ’ইশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তর প্রসন্ন দেখলে আমি বলতাম, হে আল্লাহর রসূল আমার জন্য দোয়া করুন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ আপনি আ’ইশার আগের ও পরের গুনাহ, গোপন ও প্রকাশ্যের সকল গুনাহ ক্ষমা করুন।
রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দোয়া শুনে আ’ইশা (রাঃ) হেসে নিজের কোলে মাথা নিচু করে ফেলতেন। তাঁর হাসিমাখা মুখ দেখে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করতেন, আমার দোয়াতে কি তুমি আনন্দিত হয়েছো?
হযরত আ’ইশা (রাঃ) বলতেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা কেমন কথা, আপনার দোয়ায় আমি আনন্দিত হবো না?
তখন রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, আল্লাহর শপথ এভাবেই আমি প্রত্যেক নামাজের পর আমার উম্মতের জন্য আমি দোয়া করি। (ইবনে হিব্বান)।
রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের ক্ষতি হবে এমন সব বিষয়ের ব্যাপারেও খুব বেশি চিন্তা ভাবনা করতেন। আপনজন কিংবা সম্মানিত কোনো ব্যক্ত ঈমান না আনলে তাঁর চিন্তা আর পেরেশানি আরো বেড়ে যেত। মহান আল্লাহ এব্যাপারেও একটি আয়াত নাজিল করেছেন এভাবে-
৩) لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ أَلَّا يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ অর্থঃ ওসব লোক ঈমান আনছে না, এ কারণে কি আপনি তাদের চিন্তায় ও পেরেশানিতে মর্মব্যথায় আত্মঘাতী হবেন? (সূরা শু’আরাঃ আয়াত-০৩)
রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের প্রতি বিশেষ দয়াশীল ছিলেন। এমনকি তাঁর জীবদ্দশায় যেসব উম্মতের জন্ম হয়নি তাদের প্রতিও ছিলো বিশ্বনবীর অগাধ ভালোবাসা।
৪) হাদিসে এসেছে- হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছা করছে। সাহাবিরা বললেন, আমরা কি আপনার ভাই নই? রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তেমারা আমার সাহাবী তথা সঙ্গী। আর ভাই হলো তারা যারা আমার উপর ঈমান আনবে, কিন্তু আমাকে দেখবে না। (মুসনাদে আহমাদ)
এছাড়া এমন অসংখ্য হাদিস রয়েছে যা পড়লে আমরা জানতে পারবো কেমন ছিলো আমাদেওর প্রতি তাঁর ভালোবাসা। আর যখন এই বিষয়গুলি আমরা জানবো তখনই তাঁর প্রতি আমাদেরও ভালোবাসা আরো তীব্র হবে।
৫) নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কেউ ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতক্ষন আমি তার কাছে তার বাবা, তার সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হবো। সহীহ বুখারী- ১৫, সহীহ মুসলিম-৪৪
সোর্সঃ
১) সূরা আত-তাওবাঃ আয়াত-১২৮
২) ইবনে হিব্বান
৩) সূরা শু’আরাঃ আয়াত-০৩
৪) মুসনাদে আহমাদ
৫) সহীহ বুখারী- ১৫, সহীহ মুসলিম-৪৪
লেখাঃ কাবেরী