বিশ্বকাপে কাতারের কি লাভ হবে না ক্ষতি ? | বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ এর লাভ ক্ষতি
২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে কাতার নানামুখী সমালোচনার শিকার হয়েছে। অতীতের সকল বিশ্বকাপ আয়োজক দেশের চেয়ে কাতার একটি বিষয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে । আর তা হল বিশ্বকাপ আয়োজন এর বাজেট ।
কাতার বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ। এই আসর আয়োজন করার জন্য কাতার প্রায় ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে । বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ২২ লক্ষ কোটি টাকা । অতীতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল রাশিয়া বিশ্বকাপ আয়োজনে এর দশভাগের একভাগ টাকাও খরচ হয়নি । অনেকের মনেই প্রশ্ন হল কাতার যে এত বিপুল অর্থ খরচ করে বিশ্বকাপ আয়োজন করলো এতে কাতারের কি লাভ হবে নাকি ক্ষতি । সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে নিওটেরিক আইটির এই আর্টিকেলে । বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ ছাড়াও অনেকে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২,ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২,কাতার বিশ্বকাপ ২০২২,কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২,ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২,কাতার বিশ্বকাপ,বিশ্বকাপ ফুটবল,বিশ্বকাপ ২০২২,২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ,বিশ্বকাপ,কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২,বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ কাতার,বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা কিভাবে দেখব,ফুটবল বিশ্বকাপের খবর,ফুটবল,শুরু হল বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ কাতার,ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধন ২০২২,ফুটবক বিশ্বকাপের খবর ২০২২,বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ মোবাইলে দিয়ে দেখুন লাইফ,২০২২,কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ইত্যাদি লিখে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে থাকেন হাজার হাজার ব্যবহারকারী ।
কাতার বিশ্বকাপের বাজেট
কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ নির্বাচন করা হয়েছিল এই বিশ্বকাপ শুরুর ১২ বছর আগে । তখন কাতারে ছিল একটি মাত্র স্টেডিয়াম। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য উপযুক্ত ছিল না । ২০১০ সালের পর থেকে কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন সাতটি স্টেডিয়াম তৈরি করেছে । সেই সাথে আরেকটি স্টেডিয়ামকে এমনভাবে সংস্কার করা হয়েছে যে তাকে নতুন স্টেডিয়াম বলাই ভালো । বিশ্বকাপের খেলা দেখতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এক স্টেডিয়াম থেকে আরেক স্টেডিয়ামে যাবে। তাদের যাতায়াত সহজ করতে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক মেট্রো রেল ব্যবস্থা । এছাড়া বিশ্বকাপ উপলক্ষে বহু নতুন সড়ক নতুন নতুন হোটেল রিসোর্ট এবং পর্যটন সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে । বিশ্বকাপ আয়োজনে ২২০ বিলিয়ন ডলার বাজেটের কথা বলা হয় তার সিংহভাগ গেছে এইসব অবকাঠামো নির্মাণে । কিন্তু নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিশ্বকাপ আয়োজন এর আনুষ্ঠানিক ব্যয় ছাড়াও আরও বেশ কিছু অনানুষ্ঠানিক খাতে কাতারের অনেক অর্থ খরচ রয়েছে । দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয় কাতার বিভিন্ন পাবলিক ফান্ডে আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে । এর বাইরেও ফিফার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে তারা গোপনে কত টাকা ঘুষ দিয়েছে তার হিসাব বের করা অসম্ভব । এছাড়া আফ্রিকার দেশগুলো যেন কারো পক্ষে ভোট দেয় সেজন্য ২০১০ সালে আফ্রিকান ফুটবল কনফেডারেশন কাতার বিপুল অর্থ সহায়তা দিয়েছিল ।এর বাইরেও ফ্রান্স স্পেন এবং জার্মানিকে কাতারের পক্ষে থাকার জন্য আর্থিক ভাবে খুশি করতে হয়েছে। তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির প্রিয় ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মিতে কাতার ৫০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে। স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা কে ৫ বছরের জন্য কাতার ১৫০ মিলিয়ন ইউরো স্পন্সনশীপ দিয়েছে । এবং কাতার স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজে জার্মান কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে । আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে খরচ মিলিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতারকে বেহিসেবি অর্থ খরচ করতে রয়েছে ।
কাতারের লাভ না ক্ষতি ?
কাতার যত খরচ করেছে তার খুব সামান্য অর্থই তারা তুলতে পারবে । দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের মাধ্যমে কাতার প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে । তার মানে কাতারের ২০৩ বিলিয়ন ডলার লোকসান হতে যাচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে খরচ করা অর্থ ধরলে কাতারের পুরোটাই লস। তবে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন কর্তৃপক্ষ বলছে যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে তা শুধু বিশ্বকাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বিশ্বকাপ শেষে এগুলো কাজে লাগবে । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জনসংখ্যার দিক থেকে কাতার বিশ্বের ১৩৯ এবং আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ১৬৫ তম দেশ । কাতারের নিচে যেসব দেশ আছে সেগুলোর বেশিরভাগই অতিক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র । সে বিবেচনায় বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র এই দেশের জন্য এত স্টেডিয়াম এত হোটেল আর এত বিস্তৃত মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের কোন দরকার নেই ।কাতার তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ আর সুকৌশলী ব্যবসায় পরিকল্পনার কারণে মাত্র ৫০ বছরের এর মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশে পরিণত হয়েছে। বিপুল অর্থ থাকলেও কাতারের একটি জিনিসের অভাব ছিল আর তা হলো খ্যাতি। বিশ্বকাপ আয়োজন করার মধ্য দিয়ে কাতার বিশ্বজোড়া পরিচিতি আর এক ধরনের সফট পাওয়ার অর্জন করতে পেরেছে । যা সচারচর টাকা দিয়ে কেনা যায় না । কাতার যদি সফলভাবে বিশ্বকাপ আসর শেষ করতে পারে তবে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব এবং ইরানের মতো শক্তিশালী প্রতিবেশীদের চেয়েও কাতারের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে । সেইসাথে বিশ্বের সামনে কাতারের সক্ষমতার ভাবমূর্তি অনেক বেশি উজ্জ্বল হবে ।
বড় আয়োজন কেন লাভজনক হয় না ?
বিশ্বকাপ ফুটবল এবং অলিম্পিকের মতো বৈশ্বিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ ধরনের বড় বড় আয়োজনে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি । সুইজারল্যান্ডের লুসান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৬৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের মতো ৩৬ টি বড় আয়োজনের মধ্যে ৩১ টি আয়োজনে লাভজনক হয় নি । এই গবেষণার ১৪ টি বিশ্বকাপের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে । ১৪ টির মধ্যে কেবলমাত্র একটি বিশ্বকাপ আয়োজন লাভজনক ছিল । আর সেটি হল ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ । ঐ বিশ্বকাপে রাশিয়া ১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ছিল । এত বিপুল অর্থ বিনিয়োগের বিপরীতে রাশিয়া মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার মুনাফা করতে পেরেছিল । তাই বলতে গেলে বিনিয়োগের বিপরীতে এই মুনাফা খুব বেশি সন্তোষজনক হয়নি। বিশ্বকাপের প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেই রাশিয়া মুলত সামান্য এই মুনাফা করেছিল । কিন্তু অন্যান্য দেশ তাদের বিশ্বকাপের খরচ মিটিয়ে এই সামান্য লাভ ও দেখতে পারেনা । বিশ্বকাপ আয়োজন করার মাধ্যমে একটি দেশের যে শুধু আর্থিক ক্ষতি হয় তা নয় একটি দেশের উপর কত বড় অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল ব্রাজিল । ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল ।এটি ফিফার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ। সেই আয়োজন থেকে ব্রাজিলের লাভ করার আশা থাকলেও শেষমেষ ব্রাজিলের ৬৭০ মিলিয়ন ডলার লোকসান হয় । বিশ্বকাপের টাকা জোগাড় করতে ব্রাজিলের জাতীয় বাজেট কমিয়ে ফেলা হয় । এবং জনগণের ট্যাক্স বাড়ানোসহ বহু কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল । যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে দেশটিতে ব্যাপক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয় । এই বিপুল অর্থ অপচয় না করে ব্রাজিল যদি তাদের দেশের অনাহারে থাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করত তাতেও দেশ দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হতো । সাধারনত বিশ্বকাপের সময় সড়ক পরিবহন সহ পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন করলে সেই সবের সুফল প্রবর্তিতেও পাওয়া যায়। কিন্তু স্টেডিয়ামের মত অকেজো বিষয়ের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করলে দেশের সাধারণ জনগণ তার থেকে কোনভাবেই লাভবান হতে পারেনা ।
ফিফার ব্যবসায়িক মনোভাব
বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ লাভবান হতে না পারার আরেকটি বড় কারণ হল ফিফার অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীক মনোভাব । বিশ্বকাপ আয়োজন এর যত খরচ তার সব বহন করতে হয় আয়োজক দেশকে। ফিফা শুধু ম্যাচ পরিচালনা ব্যয় বহন করে। কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে যত টাকা আয় হয় তার সিংহভাগ নিয়ে নেয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা । বিশ্বকাপ আসরে ফিফা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস । তাই তারা টাকা কামানোর সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনা । স্টেডিয়াম এর টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্পনসর্শিপ , খেলার মাঠের বিজ্ঞাপন এবং টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব পর্যন্ত সবকিছুই থাকে ফিফার হাতে। গত বিশ্বকাপ থেকে ফিফা ৫৪০ কোটি ডলার আয় করেছে। তবে ফিফার খরচ ও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে একজন ফুটবলার পিছনে ফিফার খরচ হয়েছিল মাত্র দুই লাখ ডলার । কিন্তু ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে খেলোয়াড় প্রতি ফিফার খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ লাখ ডলারে । বিশ্বকাপ কে আমরা নিখাদ বিনোদন মনে করলেও ফিফার কাছে এটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা । এমন গুঞ্জন শোনা গেছে যে ফিফা তাদের মুনাফা বাড়াতে চার বছরের বদলে প্রতি দুই বছর পর পর ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চাই । আসলে ফিফা সংস্থা তাকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে তারা নিজেদের পকেট ভারি করা ছাড়া আর কিচ্ছু বোঝে না । ফিফার সাংগঠনিক কার্যক্রমে এমন সব বিষয় চোখে পড়ে যায় শুধু মাদক চোরাকারবারি এবং মাফিয়াদের মধ্যেই দেখা যায়। এটি অপেশাদার সংগঠন থেকে কিভাবে ফুটবল মাফিয়া পরিণত হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের পূর্বের আর্টিকেল পড়ুন ।