১০ টি লাভজনক ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা - small businesses

ক্ষুদ্র ব্যবসা বলতে মূলত ছোট ব্যবসা বোঝানো হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র ব্যবসা তালিকা যদি করা হয় তাহলে অনেক ব্যবসা আইডিয়া সামনে চলে আসবে। তাই এই ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে থেকে লাভজনক কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে।

১০ টি লাভজনক ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা - small businesses - NeotericIT.com


আমাদের দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও বেকারত্বের হার কিন্তু কমেনি। শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে বেকারত্বের হার ও বেড়ে চলেছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা শেষ করে তাদের কাঙ্খিত চাকরি পাচ্ছেন না। যার কারনে তারা পড়াশোনা শেষ করে অনেক হতাশ হয়ে পড়ছেন।অনেকেই ব্যবসা করবেন বলে ভাবছেন কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ব্যবসা ক্ষেত্রে সফল হতে পারছেন না। তাই তাদের জন্য পরামর্শ থাকছে আপনারা প্রথম পর্যায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকার মধ্যে থেকে যেকোনো একটি ব্যবসা আইডিয়াকে টার্গেট করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। নিচে সেরা কয়েকটি লাভজনক ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা তুলে ধরা হলো:-


১.জুসবারের ব্যবসা আইডিয়া 

আমরা এখন বেশিরভাগ লোকই বাইরে ভেজাল খাবার খেয়ে থাকি। ভেজাল খাবারের মধ্যে রয়েছে অনেক ধরনের জুসও। বোতলজাতকরণ এই সকল জুসগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ততটা মঙ্গল কর নয় ।তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে বাজারে ভালো একটি স্থান দেখে অর্গানিক ফলমূল নিয়ে একটি জুস বারের দোকান দেওয়া যেতে পারে।এখানে উপকরণ হিসেবে লাগবে যে ফলের জুস তৈরি করবেন সেগুলো, ও একটি ভালো জুসার মেশিন। আনারসের জুস, আঙ্গুরের জুস, আমের জুস, আরো মৌসুমী অনেক ফল রয়েছে যেগুলো জুস তৈরি করে কাস্টমারদেরকে পরিবেশন করতে পারেন।


২.কাঁচামালের ব্যবসা করা যেতে পারে 


কাঁচামালের ব্যবসাটি অনেক কম পুজিতে করা যায়। প্রথম অবস্থায় যারা কম পুজিতে ব্যবসা করতে চান তারা কাঁচামালের ব্যবসাটিকে টার্গেট করতে পারেন। কাঁচামালের ব্যবসা করতে হলে দোকান দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। বড় হাটগুলোতে যেকোনো একটি স্থান দেখে দোকান দিয়ে কাঁচামাল বিক্রি করা যেতে পারে।এক্ষেত্রে আপনার কাজ হবে কাঁচামালের আড়ত থেকে পাইকারি দামে ভালো কাঁচামাল সংগ্রহ করা। তারপরে হাটে নিয়ে গিয়ে এই সকল কাঁচামাল বিক্রি করা যাবে। এক্ষেত্রে আপনার যদি দোকান দেওয়ার মতো ব্যবস্থা থাকে তাহলে আরো ভালো হয়। এই ব্যবসা করে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা অনায়াসেই লাভ করা সম্ভব।তাই ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা খুঁজে থাকলে এই ব্যবসাটি করতে পারেন। 


৩.চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা 

চায়ের ব্যবসা হচ্ছে খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। ভালো একটি স্থান দেখে যদি চায়ের দোকান দেওয়া যায় তাহলে ভালো লাভ করা সম্ভব। চায়ের দোকান দিতে সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে।আপনার দোকানের চা যদি গুণগত মান সম্পন্ন হয় তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই দোকানটি জনপ্রিয় হয়ে যাবে।তাছাড়া চায়ের ব্যবসার আরেকটি সুবিধা হলো এখান থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা লাভ করা যাবে যার মাধ্যমে ব্যবসায়িক পুঁজি বাড়বে।


৪.খাবার হোটেলের ব্যবসা 

খাবার হোটেলের ব্যবসা বর্তমান সময়ের আরেকটি লাভজনক ব্যবসা। এখন মানুষ এতটাই কর্মব্যস্ত হয়ে গিয়েছে যে খাবার তৈরি করার সময় পায়না যার কারণে অনেক সময় বাইরে থেকে খেয়ে থাকে। বাইরে খাবার খাওয়ার জন্য ভালো হোটেলের সন্ধান করে থাকেন। 


তাই ভালো একটি স্থান দেখে যদি খাবারের হোটেল দেওয়া যায় আর খাবারের গুণগত মান যদি ভালো করা যায় তাহলে এমনিতেই কাস্টমার হোটেলে আসবে। এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু কয়েকটি কাজ করা লাগবে।যেমন:-


  • ➡️ হোটেলে ভালো বাবুর্চি নিতে হবে। 
  • ➡️ খাবার তৈরির মালামাল বাবুর্চিকে দিতে হবে। 
  • ➡️ দোকানে মাঝেমধ্যে বসে হিসাব নিকাশ করতে হবে। 


আমার এক পরিচিত আত্মীয় তিন বছর আগে খাবারের হোটেল দিয়েছিল এখন সে প্রতি মাসে খাবারের হোটেল থেকে ৩ লক্ষ টাকার উপরে আয় করে থাকেন। তাহলে এতক্ষণে অবশ্যই বুঝে গিয়েছেন যে খাবারের হোটেলের ব্যবসা হচ্ছে বর্তমানে খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। 


৫.মাছের পাইকারি ব্যবসা 

ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকার মধ্যে মাছের পাইকারি ব্যবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। মাছের পাইকারি ব্যবসা করতে হলে বাইরে অথবা পুকুর থেকে পাইকারি দামে মাছ কিনে আনতে হবে এবং সেগুলো দিয়ে গ্রাম গঞ্জের হাটে বাজারে বিক্রি করতে হবে।ধরুন আপনি ২০০ টাকা কেজি দরে ৫০ কেজি মাছ কিনে এনেছেন। সেগুলো বাজারে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তাহলেও কিন্তু এখানে আপনার ২৫০০ টাকা লাভ হয়ে যাচ্ছে।যার ফলে আপনার প্রতিদিনই এখান থেকে ভালো লাভ হচ্ছে এবং পরবর্তীতে চাইলে ব্যবসাটি বৃহৎ পরিসরে করতে পারছেন। এক্ষেত্রে আপনার টার্গেট থাকতে হবে কাস্টমারদের কে কম দামে ভালো মাছ সরবরাহ করবো।তাহলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে মাছের পাইকারি ব্যবসা করে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে। 


৬.সুপার শপের ব্যবসা 

ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকার মধ্যে সুপার শপের ব্যবসাটি অন্যতম। কেননা বর্তমান সময়ে সুপার শপের দোকানগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ছোট পরিসরে একটি সুপার শপের দোকান দেওয়া যেতে পারে।পরবর্তীতে দোকানটি থেকে যদি ভালো রেস্পন্স পান তাহলে দোকানটি বড় করা যেতে পারে। সুপার শপের ব্যবসাটি এখন অনেকেই করতেছে। সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসাটি শুরু করলে অনেক দূর পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব।তাই কম পুজিতে যদি ব্যবসা শুরু করবেন বলে ভেবে থাকেন তাহলে সুপার শপের ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। 


৭.খেজুরের গুড়ের ব্যবসা আইডিয়া 

শীতকালে খেজুরের গুড়ের ব্যবসাটি খুবই লাভজনক হতে পারে। কেননা শীতকালে খেজুরের গুড় দিয়ে সকল ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা খেজুরের গুড়ের সাথে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করে থাকেন। তাই আপনি যদি কম দামে ভালো ভেজাল মুক্ত খেজুরের গুড় বাজারে সরবরাহ করতে পারেন তাহলে কাস্টমারের অভাব হবে না।এই ব্যবসাটি অতি সামান্য পরিমাণ পুজিতেই শুরু করা যাবে। যদি নিজের গাছ না থাকে তাহলে সরাসরি যশোর থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি কিনে এনে বিক্রি করতে পারেন। ব্যবসাটি করার মাধ্যমে যদি একবার জনপ্রিয় হয়ে যেতে পারেন তাহলে এক সিজনেই লাখ টাকা আয় করে ফেলতে পারবেন। 


৮.হাঁসের ব্যবসা আইডিয়া 

যারা গ্রামে থাকেন ও যাদের বাড়ি নদী ও বিলের আশেপাশে তাদের জন্য হাঁসের ব্যবসাটি খুবই লাভজনক হতে পারে। হাঁসের মাংস মুরগির মাংস থেকে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে যার কারণে হাঁসের মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।তাছাড়া হাঁসের ডিম আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। শরীরের দুর্বলতা ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার জন্য হাঁসের ডিম ও হাঁসের মাংস দারুন একটি উৎস।তাই আপনারা চাইলে ১০০ থেকে ২০০ টি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে খুব সহজেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। হাঁসগুলি সঠিক যত্নে লালন-পালন করলে অল্প সময়ের মধ্যেই এখান থেকে ভালো লাভ হবে। 


৯.শিশুদের পণ্যের ব্যবসা 

বাংলাদেশে শিশুদের পণ্যের দাম সময়ের সাথে হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের পণ্য কিনে এনে ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। শিশুদের পণ্যের ব্যবসা করতে হলে অনেক বেশি টাকা ইনভেস্ট করা লাগেনা। অল্প কিছু টাকা জোগাড় করে এই ব্যবসাটি শুরু করা যায়।আপনি এক্ষেত্রে ভালো একটি স্থান দেখে দোকান দিতে পারেন এবং দোকানে লোশন, শ্যাম্পু, পাউডার ও আরো অনেক ধরনের খেলনা সামগ্রী তুলতে পারেন। এই ব্যবসার সব থেকে বড় সুবিধা হলো এখানে অনেক কম পরিশ্রমে ভালো লাভ করা যায়। 


১০.ইলেকট্রনিকের দোকান দিয়ে ব্যবসা 

ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকার মধ্যে ইলেকট্রনিকের দোকান দিয়ে ব্যবসাটি খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। ভালো একটি স্থান দেখে যদি ইলেকট্রনিকের দোকান দেওয়া যায় তাহলে অনেক বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। তাছাড়া ইলেকট্রনিকের দোকান থেকে আরও অনেক ভাবে আয় করা যায়। যারা ইলেকট্রনিক যন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার জন্য কাজ করে থাকেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার দোকানে কাস্টমার নিতে পারেন।তাহলে দোকানে ইলেকট্রনিক মালামাল বিক্রি অনেক বেশি হবে। তাই যদি এক থেকে দুই লক্ষ টাকা মতো পুঁজি হয়ে থাকে তাহলে একটি ইলেকট্রনিকের দোকান শুরু করতে পারেন। 


ক্ষুদ্র ব্যবসার মেশিন 

যত সময় যাচ্ছে তত বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্রছাত্রী আছেন যারা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাচ্ছেন না। তাই তারা চাইলে সময় নষ্ট না করে ক্ষুদ্র ব্যবসার দিকে মনোযোগী হতে পারেন তাহলে এখান থেকে ভবিষ্যতে অনেক টাকা ইনকাম করা যাবে। বর্তমানে যারা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে চান তাদের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এই মেশিনগুলো ব্যবহার করে অনেকেই প্রতিদিন টাকা আয় করতে পারছে। অল্প কিছু টাকা ইনভেস্ট করার মাধ্যমেই এই মেশিনগুলো কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। নিচে কয়েকটি ক্ষুদ্র মেশিনের নাম উল্লেখ করা হলো:-



  • মুড়ি ভাজার মেশিন 
  • আগরবাতি তৈরি করার মেশিন 
  • মোমবাতি তৈরি করার মেশিন 
  • পেপার প্লট তৈরি করার মেশিন 
  • কলম তৈরি করার মেশিন 
  • অটো প্রিন্টিং মেশিন 


উপরে দেওয়া এই মেশিনগুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি মেশিন কিনে প্রথম অবস্থায় ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। এই মেশিন কেনার জন্য অনেক বেশি টাকা ইনভেস্ট করা লাগেনা এটাই হচ্ছে সুবিধা। 

১০ টি লাভজনক ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা - small businesses - NeotericIT.com


শেষ কথা,  অনেকের ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছা থাকলেও সঠিক গাইডলাইনের অভাবে ব্যবসা করতে পারেন না। তাই আজকের পোস্টে বর্তমান সময়ের সেরা কয়েকটি ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা দেওয়া হয়েছে যে ব্যবসাগুলো অনেক কম বুঝেতে করা সম্ভব এবং এই ব্যবসা গুলোর মাধ্যমে খুবই দ্রুত সময়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। তাই যদি অল্প পুজিতে ব্যবসা করতে চান তাহলে উপরের ব্যবসা আইডি গুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটিকে টার্গেট করে শুরু করতে পারেন। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url