কিভাবে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা যায় | চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয় - chokher joti baranor

অনেকের চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ার কারনে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীন হয়ে যায়।আবার কখনো নিজের অজান্তে আবার কখনো কিছু অভ্যাসের কারণে আমরা চোখের দৃষ্টি শক্তি কমিয়ে ফেলছি। বর্তমান সময়ে যেহেতু মানুষ ইলেকট্রনিক গেজেট গুলো বেশি ব্যবহার করে থাকেন তাই এর কারনেও আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে। আজকের পোস্টটিতে আলোচনা করা হবে কিভাবে চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করা যায় বা চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয়। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-

কিভাবে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা যায় - চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয় - chokher joti baranor - NeotericIT.com


নিওটেরিক আইটির আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য কিভাবে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে । 

চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ 

চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার কারণে আমরা নিজেরাই দায়ী। আমাদের নিজেদের কিছু বদ অভ্যাসের কারণে ক্রমেই চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে। চোখের দৃষ্টিশক্তি কেন কমে যায় বা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:-

অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক গেজেটের ব্যবহার 

বর্তমান সময়ে অনেকেই কম্পিউটার ল্যাপটপ ও স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এই সকল প্রযুক্তি গুলো ব্যবহারের ফলে আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তির মারাত্মক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায় ও চোখের উপর অনেক চাপ পড়ে থাকে। তাছাড়া এর ফলে মাথা ব্যথা ও চোখে ব্যথার মত সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া

জাঙ্ক ফুড চোখের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট ও চিনি জাতীয় খাবার যা শরীরের ভেতরে ভেঙে সাধারণ চিনি বা গ্লুকোজে পরিণত হয়ে থাকে।আর অতিরিক্ত চিনি বা গ্লুকোজের আধিক্যের কারণে চোখের রক্তনালী অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।তাছাড়া কিছু ফাস্টফুড রয়েছে যেগুলো চোখের রক্তনালিতে চর্বি জমা করে। এর ফলে সময়ের সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। 

ধূমপান ও মদ্যপান করলে 

অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্য পান করলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে।ধূমপানের কারণে ম্যাকুলার  ডিজেনারেশনের চোখের নার্ভের সবচেয়ে সমবেদনশীল অংশ ক্ষতিগ্রস্ত  হয়ে থাকে, যার ফলে সেন্ট্রাল ভিশন প্রভাবিত হয়ে থাকে। যা সাধারণত ঝুঁকি বৃদ্ধি করে অপটিক নার্ভের ক্ষতিসাধন করে থাকে। ফলে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে গিয়ে অন্ধত্বের শিকার হতে পারেন। 

চোখ নিয়মিত পরিষ্কার না করলে 

অনেকেই আছেন যারা ধুলাবালির মধ্যে কাজ করে থাকেন কিন্তু চোখ নিয়মিত পরিষ্কার করেন না।তাদের চোখে এই সকল ধুলাবালি জমে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। তাছাড়া এর ফলে অনেকে অন্ধত্বের স্বীকারও হতে পারেন। তাই অবশ্যই নিয়মিত চোখ পরিষ্কার করাটা জরুরি। নিয়মিত চোখ পরিষ্কার করলে চোখে কোন ধরনের ময়লা জমবে না ও কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা চোখের কোন ক্ষতি হবে না। 

কিভাবে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা যায় - চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয় - chokher joti baranor - NeotericIT.com

কিভাবে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা যায় - চোখের জ্যোতি বাড়ানোর উপায়

চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করার জন্য কিছু বাজে অভ্যাস ত্যাগের পাশাপাশি বাড়তি কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা চোখ হচ্ছে আমাদের কাছে সবথেকে মূল্যবান একটি সম্পদ তাই চোখের যত্নের দিকে সকল সময়ে বাড়তি নজর দিতে হবে। চোখের জ্যোতি বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানুন । 

১.চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেতে হবে। কাঁঠাল,  কুমড়া, কালো কচু শাক, পুইশাক, লাউ শাক, ধনিয়া পাতা, মিষ্টি পেঁপে, মিষ্টি আলু, ডিম কলিজা, ও মাদ জাতীয় খাবার খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত হয়ে থাকে। 

২.চোখের ধূলিকণা থেকে রক্ষা পেতে বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ সকল সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

৩.মোবাইল, কম্পিউটার ও টিভির ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি থেকে চোখকে যতটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেননা এতে থাকা উজ্জ্বল রশ্মি চোখের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। 

৪.চিনি,  প্রক্রিয়াজাত ময়দা, ও ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে।

৫.স্যামন,টুনা প্রভৃতি মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের মতো উপাদান রয়েছে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড চোখের বিভিন্ন সমস্যাকে প্রতিরোধ করতে দারুন কার্যকারী। তাই দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে চাইলে এগুলো খেতে পারেন। 

৬.ভিটামিন সি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে। চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য টমেটো,  পেয়াজ,  কাঁচা লঙ্কা, রসুন, লেবুর রস এগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। কেননা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি দারুন একটি উপাদান। 

তাছাড়া চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে আপনারা ঘরোয়া আরো চারটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন। 


চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর ঘরোয়া উপায় 

১. রাতে ঘুমানোর আগে একটি পাত্রে দু’চামচ ত্রিফলা চূর্ণ ভিজিয়ে রাখতে হবে।তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিষ্কার কাপড়ে ছেকে নিয়ে ওই জল দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর ওই জল দিয়ে চোখের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। এটা নিয়মিত করলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। 

২.বাদামের ৮ থেকে ১০ টি দানা রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে খানিকটা দুধ খেয়ে নিতে হবে। নিয়মিত খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। 

৩.প্রথমে কিছু পরিমাণ ধনেপাতা নিয়ে তারপর পিষে রস বাহির করতে হবে। রস বের করে দুফোটা করে প্রতিদিন চোখে দিলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

৪.কমলালেবুর রসে বাটা গোলমরিচ ও সৌন্ধব লবণ মিশিয়ে দুটো তিন মাস প্রতিদিন সকাল বিকাল সেবন করলে চোখে জ্যোতি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 


চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয় 

চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর কয়েকটি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন এবার জানতে পারবেন চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয়। চোখের বাড়তি যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে পুনরায় সতেজ করে তোলা যায়।তাছাড়া যাদের দৃষ্টি শক্তি আগের তুলনায় অনেকটাই কমে গিয়েছে তারাও নিচে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী চোখের যত্ন নিলে চোখের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে আসে। 

১.চোখের ক্লান্তি দূর ও পেশী শক্তিশালী করার জন্য ক্লকওয়াইজ ও এন্টি ক্লকওয়াইজ চোখের মনি ঘুরিয়ে দশ সেকেন্ড করে চোখের ব্যায়াম করতে পারেন।

২.চোখের পেশীর রক্ত সরবরাহ সচল রাখতে দুই হাতের তালু কয়েক মিনিট ঘষে আলতোভাবে হাতের তালু দিয়ে আলাদা করে চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে ৫ সেকেন্ড মত। এটাও এক ধরনের চোখের ব্যায়াম। 

৩.রাতে ঘুমানোর সময় চোখ বন্ধ করে চোখের পাতা আঙ্গুলের ডগা দিয়ে হালকা করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দুই মিনিট ম্যাসাজ করতে পারেন। 

৪.চোখ সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। 

৫.গাজরের রয়েছে বিটা ক্যারোটিনের মত উপাদান ও ভিটামিন এ যা চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। 

৬.তুলসী পাতা বাটা, চন্দন বাটা, ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে চোখে লাগাতে হবে। 

৭.পুদিনা পাতার রস চোখের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের চোখের নিচে কালো দাগ রয়েছে তারা পুদিনা পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন। 

৮.দিনের বেলা বাইরে বেরোলে সূর্যের আলো থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। 

৯.ঘুম আমাদের চোখকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম ও পূর্ণদৃষ্টির জন্য শক্তি দিয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন চোখের সুরক্ষার জন্য অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। পরিমিত পরিমাণে না ঘুমালে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে ও চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীন হয়ে যেতে পারে।তাই অবশ্যই এই দিক থেকে আমাদের বাড়তি সচেতন হতে হবে । 

১০.প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ক্লাস করে পানি খেতে হবে ও প্রতিদিন সকালে ১০ মিনিট চোখের ব্যায়াম করা যেতে পারে। নিয়মিত চোখের ব্যায়াম করলে শিরাগুলি সতেজ থাকে। 

শেষ কথা,  ইতোমধ্যে চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয় বা কিভাবে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা যায় এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।চোখ খুবই মূল্যবান একটি অঙ্গ তাই অবশ্যই চোখের সুরক্ষায় বাড়তি সচেতন থাকতে হবে। চোখের সুরক্ষার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করতে পারেন ও নিয়মিত চোখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন।ধন্যবাদ। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url