মেথির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম | মেথির অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া - methir upokarita

মেথি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।শরীর থেকে শুরু করে চুল ও ত্বকের যত্নেও মেথি দারুন কাজ করে থাকে। অনেকেই মেথি খাওয়ার অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না।মেথি রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখা সহ রক্তচাপ ও ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আজকের পোস্টে মেথি খাওয়ার উপকারিতা, মেথি খাওয়ার নিয়ম ও মেথি খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-

মেথির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম - মেথির অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া  - methir upokarita - NeotericIT.com


নিওটেরিক আইটির এই এর্টিকেলে আপনাদের জন্য যে পয়েন্ট গুলো কভার করা হবে ঃ 

  1. পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা
  2. পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
  3. গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
  4. ডায়াবেটিসে মেথি খাওয়ার নিয়ম
  5. মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
  6. মেথি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
  7. মেথি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
  8. পুরুষের জন্য মেথির অপকারিতা


মেথি খাওয়ার উপকারিতা 

চুলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে হজমের সমস্যা দূর করার জন্য মেথি অসাধারণ কাজ করে থাকে। সঠিক পরিমাণে যদি মেথি খাওয়া যায় তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে শরীর দূরে থাকে। নিচে মেথি খাওয়ার অসাধারণ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো:-

পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা

পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা অনেক রয়েছে , তার মধ্যে অনেকগুলো নিছে দেওয়া হলো একে একে ।  

মেথির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম - মেথির অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া  - methir upokarita - NeotericIT.com

মেথি ওজন কমিয়ে থাকে 

মেথি আমাদের শরীরে ফাইবারের পরিমাণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। শরীরে ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকলে আমাদের বেশি খিদে পায় না। যার ফলে খাওয়ার পরিমাণ অনেক কমে যায় এবং শরীরের ওজন হ্রাস পায়। তাই যারা বাড়তি ওজনের জন্য চিন্তায় রয়েছেন তারা নিয়ম করে মেথি খেতে পারেন। 


মেথি কোলেস্টেরল কমিয়ে থাকে 

মেথিতে রয়েছে স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামের এক ধরনের উপাদান যা আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে থাকে। তাছাড়া মেথিতে গ্লেকটোমেনান আরেকটি উপাদান পাওয়া যায় যা হৃদযন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুন কাজ করে থাকে। তাই শরীর থেকে বাজে কোলেস্টেরল দূর করার জন্য নিয়মিত মেথি খাওয়া যেতে পারে। 


মেথি কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে 

মেথি খেলে কিডনির মধ্যে কম ক্যালসিফিকেশন তৈরি হয়ে থাকে। যা সাধারণত ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর মত কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। তাই মেথি সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খেলে কিডনি পরিষ্কার থাকে ও মৃত্রথলি সুস্থ থাকে। 


মেথি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে 

মেথিতে থাকা ট্রাইগ্লিসেরাইট ব্রেস্ট ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে নষ্ট করে ফেলে। তাছাড়া মেথি রক্তে ভেসে থাকা টক্সিন উপাদান গুলোকে শরীর থেকে বের করে দিয়ে থাকে। যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে আসে। 


মেথি বুকের দুধ বাড়িয়ে থাকে 

মেথিতে রয়েছে ডায়োসজিন নামক এক ধরনের উপাদান যা বুকের দুধের পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে থাকে। তাছাড়া এটিতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় মাতৃদুগ্ধের পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যায়। 


মেথি শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে 

প্রত্যেকের শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এগুলোর মাত্রা কম বেশি হতে শুরু করে। নিয়মিত মেথি খেলে এগুলোর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকেন ও শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে। 


মেথি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে 

নিয়মিত মেথি ব্যবহার করলে খুব সহজে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়। ত্বক থেকে বলে রেখা দূর করতে ও ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখতে মেথির জুড়ি মেলা ভার। মেথি চোখের নিচে কালো দাগ বসতে দেয় না। কেননা মেথিতে রয়েছে এক ধরনের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল পদার্থ যা ত্বকের গভীরে পর্যন্ত যায়। যার ফলে দীর্ঘদিন এটি ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা সহ ত্বকের আরো অনেক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। 


মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে 

মেথি খেলে শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কেননা মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও আরো অনেক ধরনের উপাদান যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। 


মেথি চুল পড়া প্রতিরোধ করে ও নতুন চুল গজায়

চুল পড়া প্রতিরোধ করতে ও নতুন শুরু করাতে মেথি দারুন একটি উপাদান। কেননা মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি। যা সাধারণত চুলকে শক্তিশালী করে তুলে চুল ঝরে পড়া রোধ করে থাকে। তাছাড়া মেথিতে রয়েছে লিথিসিন নামক পদার্থ যা চুল পড়ে যাওয়াকে আটকিয়ে থাকে।মাথার খুশকি দূর করার জন্য মেথি ব্যবহার করা যেতে পারে। অল্প বয়সে যাদের চুল পাকা হয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে তারা নীতি ব্যবহার করতে পারেন। কেননা মেথিতে রয়েছে মেলানিন নামের উপাদান যা চুলের কালো রং ধরে থাকে। 



মেথি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে 

মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপাদান। ফাইবার শরীরে হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। তাছাড়া যাদের হজম শক্তি অনেক দুর্বল তারা নিয়মিত মেথি খেতে পারেন তাহলে হজমের সমস্যা আস্তে আস্তে ঠিক হতে শুরু করবে। 


মেথি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে 

রাতে এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খেলে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।


মেথি হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকে 

মেথির রসে রয়েছে সাপোনিস ও ডায়োজোনিন নামের যৌগ পদার্থ। যা সাধারণত মানুষের শরীরে হরমোনের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে থাকে। তাছাড়া প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে মেথি খেয়ে থাকলে পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 


মেথি বাত ব্যথা দূর করে থাকে 

বাত ব্যথার সমস্যা খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা। যাদের এই সমস্যাটা রয়েছে একমাত্র তারাই জানে এটা কতটা কষ্টের। মেথি বাত ব্যথা দূর করার জন্য দারুন একটি ঔষধি হতে পারে। নিয়মিত মেথি ব্যবহার করলে বাত ব্যথা দূর হয়ে থাকে বা অনেকটা কমে। 


সর্দি কাশি দূর হয় 

অনেকের ঘন ঘন সর্দি কাশির সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হওয়ার কারণে এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। তারা চাইলে রাতে এক গ্লাস পানিতে কিছুটা মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারেন। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সর্দি কাশির মতো সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পাবেন। 


মেথি খাওয়ার নিয়ম  - পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম

মেথির সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে হলে রান্নায় মসলা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে রান্নায় মসলা হিসেবে মেথি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তিন থেকে চার ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তাছাড়া অন্যভাবে যদি মেথি খেতে চান তাহলে এক গ্লাস গরম পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে ১০ মিনিট থিথিয়ে নিতে হবে।তারপরে লেবু ও মধু মিশিয়ে একসাথে পান করা যেতে পারে। 


ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম

সঠিক নিয়মে মেথি খেতে পারলে শরীরের বাড়তি ওজন নিমিষেই দূর করা সম্ভব।ওজন কমানোর জন্য মেথি ব্যবহার করতে হলে এক চামচ মেথি জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালে উঠে সেই জল পান করতে হবে ও মেথি চিবিয়ে খেয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে যদি মেথির বীজ চিবিয়ে খেতে সমস্যা হয় তাহলে পেস্ট তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। কিছুদিন খেলেই পরিবর্তনটা লক্ষ্য করতে পারবেন। 

গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম

মেথি অনেক উপকারে আসে তবে আপনার গ্যাস কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানেও মেথি অনেক উপকারে আসে । গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম  -গ্যাস্ট্রিক রোগ সম্পর্কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। আমরা সকলেই গ্যাস্ট্রিক রোগের কমবেশি ভুক্তভোগী। এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই গ্যাস্ট্রিক থেকেই অন্যান্য রোগ সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের দেহে। তাই আগে মানুষ গ্যাস্ট্রিক রোগকে হালকা রোগ মনে করলেও এখন সবাই গ্যাস্ট্রিক নিয়ে আতঙ্কিত। গ্যাস্ট্রিক মরণব্যাধি ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করে । - তাই প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে যদি গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করা যায় তাহলে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আর গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করতে ঘরোয়া প্রাকৃতিক খাবার বা উপাদান গুলোর কোন বিকল্প নেই।ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান গুলোর মধ্যে মেথি একটি অন্যতম উপাদান যা আমাদের সবার ঘরেই থাকে। মেথি বিভিন্ন রোগের মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

*প্রথমে একটি গ্লাসে পানি নিয়ে তার মধ্য এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন।

*দশ মিনিট পর সেই মেথি ভেজানো পানি পান করুন অথবা সাত বাড়ানোর জন্য আপনি চাইলে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।

*এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ আস্ত মেথি ভিজিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।

*দশ মিনিট পর ওই পানিটি পান করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি মিলবে।

*সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খান।


মেথির অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া 

মেথি খাওয়ার যেমন অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি সঠিক নিয়মে না খেলে শরীরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিচে মেথি খাওয়ার কয়েকটি অপকারিতা তুলে ধরা হলো:-


➡️ মেথি মুখের ভিতরে তিতা স্বাদের প্রদাহ তৈরি করে থাকে যার কারণে অনেকের বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরার মত সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

➡️ মেথি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ হঠাৎ করে অনেক কমে যেতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। 

➡️ অতিরিক্ত মেথি খেলে রক্তে জমাট বাধা প্রতিরোধ করে থাকে। তাই যাদের রক্ত পাতলা তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেথি খেতে পারেন। 

➡️ গর্ভবতী মেয়েরা নিয়মিত মেথি খেলে সময়ের আগেই তাদের বাচ্চার জন্ম হতে পারে। তাছাড়া এতে গর্ভপাতেরও ঝুঁকি রয়েছে। 


শেষ কথা, সঠিক নিয়মে মেথি খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত পরিমাণে মেথি খেতে থাকেন তাহলে তার শরীরে বিরূপ কিছু প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।তাই অবশ্যই উপরে দেওয়া উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী মেথি গ্রহণ করবেন ও শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থেকে দূরে রাখবেন। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url