2024 সালের পহেলা বৈশাখ কত তারিখ? - পহেলা বৈশাখ ও বাঙালির সংস্কৃতি - Pohela Boisakh



দিন যায় মাস যায় দেখতে দেখতে বছর পেরিয়ে যায়। একবছর শেষে আরেকবছর… সময়ের এই চলে যাওয়া নিয়ে আসে নতুন বর্ষ। আর নতুন বছরে ফিরে আসে নতুন বৈশাখ নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। বাঙালি দাবিদার মানুষদের মধ্যে এই পহেলা বৈশাখ খুব জনপ্রিয় একটি দিবস। তবে এই পহেলা বৈশাখ ধর্মীয় কালচার নাকি এ নিয়েও নানান আলোচনা সমলোচনা হয়েই থাকে। 

পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানানজনের নানান প্লান, নানান চিন্তা। বৈশাখ পালনের নিয়ম রীতি নিয়েও রয়েছে নানান আলোচনা। 

পুরাতন বর্ষ শেষ হয়ে হাজির হলো নতুন বর্ষ ২০২৪ সাল চলে এলো। আর এরই সাথে এসে গেলো বাঙালিদের ইলিশ মাছ আর পান্তা ভাত ভোজন পহেলা বৈশাখ এর দিন। 

পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ মূলত নতুন বছরের প্রথম দিনকে বলা হয় বাংলা সনের ১ম দিনটই হলো নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। এই দিনটি সকল বাঙালিদের জন্য একটু নতুন সূচনা নতুন উদ্যম নতুন অধ্যায় হিসেবে শুরু হয়। এর কারণ হলো এটিই বাংলা সনের ১ম দিন। বলা হয়ে থাকে এটি একটি লোক উৎসব বাঙালিরা একত্রে মিলিত হয় সর্বজনীন এই উৎসবে। তৈরি হয় এক বাঙালি মিলনায়তনে। 

পহেলা বৈশাখ কে বলা হয় বাংলার দিবস বাঙালিদের দিবস একটি আনন্দে ভরা আনন্দঘন দিনে উৎযাপন ও স্বাগত করা হয় নতুন দিনের। বাংলা সনের প্রথম দিনকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করাটাই এর উদ্দেশ্য। নতুন উদ্যমে নতুন বছর শুরু করা নতুন ভাবে জীবনের প্রতীক তৈরি করা কল্যাণ ও মঙ্গল ভাবা তার সাথে পুরনো বছরগুলির কষ্ট দুঃখকে ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে নতুন বছরের সূচনা করাই এর উদ্দেশ্য। 

অতীতের জমে থাকা কষ্ট হতাশা আর গ্লানি কে বিদায় দিয়ে সকল ভুলত্রুটি কে ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে নতুন বছরে নিজেকে নতুন ভাবে সূচনা করা। নতুন ভাবে আনন্দ সুখ শান্তি আর কল্যাণ কামনা করেই পালিত হয় এই নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। নতুন দিনে বাঙালিদের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে যায় এই নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ, উৎযাপন করা হয় আনন্দে সাচ্ছন্দে। 

আজকের এই আর্টিকেলে পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানান আলোচনা করবো। এ বছরের কয় তারিখ বৈশাখ, কত সাল, পহেলা বৈশাখ এর প্রবর্তন কিভাবে হলো কিভাবে পালন করা হয় এমন হারেক রকম বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করবো। 

আসুন জেনে নেই পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ। 

2024 সালের পহেলা বৈশাখ কত তারিখ?


পুরনো বছর বিদেয় নিলো নতুন বছরের উদয় হলো। দেখতে দেখতে চলে গেলো ২০২৩ সাল, খুব দ্রুতই বছর চলে যায়। তবে থেকে যায় নানান কষ্ট, দুঃখ ও হতাশা। থেকে যায় বছর ভরা নানান ভুলত্রুটি। তবে এই সব কিছুকে পুরনো বানিয়ে ভুলিয়ে দিয়ে চলে আসে নতুন এক বর্ষ। যাকে আমরা বলে থাকি নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। 

২০২৪ সালে পহেলা বৈশাখ পালন করা হবে ১৪ এপ্রিল ২০২৪ এ। ১৪ এপ্রিল পালিত হবে নববর্ষতথা পহেলা বৈশাখ। যেটি হলো বাংলা সনের প্রথম দিন যেটি বাঙালিদের জন্য একটি বাঙালিয়ানা উৎসব হিসেবে উৎযাপিত হয়ে থাকে। 

পবিত্র ঈদুল ফিতর শেষে মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে পালিত হবে এই নববর্ষ। অর্থাৎ ১১ তারিখ ঈদ এবং এক দিন গ্যাপ দিয়ে পহেলা বৈশাখ। ১৪ ই এপ্রিল পালিত হবে এই পহেলা বৈশাখ যেখানে বাঙালি দাবিদাররা নানান ভাবে পহেলা বৈশাখকে উৎযাপন করবে নিজ আঙ্গিকে। 

পহেলা বৈশাখ বাংলা কত সাল?


বাংলা সন মূলত ১৫৫৬ খিষ্টাব্দে ১০ই মার্চ। যেটিকে হিজরিতে হিসেব করলে ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সনের গণনা আরম্ভ হয়। 
মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ ১০/১১ মার্চ বাংলা সনের প্রবর্তন করেছেন। এছাড়াও এটিকে কার্যকর কারার সময় ছিলো মূলত তার সিংহাসনে আরোহনের সময়। সময়টা বলতে গেলে ৫ নভেম্বর এর ১৫৫৬ সালে। 

পহেলা বৈশাখ কে প্রবর্তন করেন?


পহেলা বৈশাখের প্রবর্তক হিসেবে যে নামটি চলে আসে সে আর কেউ নয় মূলত মুঘল সম্রাট আকবর। বাংলার এই প্রথম সনে পালিত হওয়া নববর্ষর সূচনা হয় মূলত আকবরের সময়কাল থেকেই। সে যু্গে যারা ছিলো কৃষক তারা খাজনা দিতো চৈত্র মাসের শেষ দিনটি পর্যন্ত। চৈত্র মাসের শেষ দিনে তাদের কাছ থেকে খাজনা নিতো তালুকদার জমিদাররা অর্থাৎ ভূ স্বামীর খাজনা পরিশোধ করা হতো সেদিন। 

তার ঠিক পরের দিন নববর্ষ উপলক্ষে ভূ স্বামীরা তাদেরকে মিষ্টিমুখ করাতো। এটি উপলক্ষে আয়োজিত হতো মেলা ও নানান অনুষ্ঠান। তার সাথে পারিবারিক ও সামাজিক আনন্দে মেতে উঠে সবার সাথে জড়ো হয়ে মিলে মিশে পালিত হতো এই পহেলা বৈশাখ। আনন্দ উত্তেজনার মধ্য দিয়ে পালিত হতো এই উৎসবমুখী নববর্ষ। আর পালিত হতে থাকে বাংলার প্রথম দিন অর্থাৎ নববর্ষ। 

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য


হতে হবে প্রথম দিন বছরের প্রথম দিন বাংলা দিনের প্রথম পালিত হয় বৈশাখ নববর্ষ যাকে বলি পহেলা বৈশাখ। 

অমুক দেশি তুমক দেশি পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ পালন করবে সকল বাংলাদেশি। শুধু বাংলাদেশি রাই না বরং বাংলা ভাষাভাষী সবাই পালন করে এটি এবং এটি উৎযাপন করে সার্বজনীন ভাবে। 

অন্য সময় যাই খাওয়া হোক না কেন। যদি দিনটি হয় পহেলা বৈশাখ তাহলে থাকতে হবে মাছ আর ভাত। যেনো তেনো মাছ নয় বরং ইলিশ মাছ আর পান্তা ভাত। এসব ছাড়া পহেলা বৈশাখ জমেই না। 

যেদিন হবে পহেলা বৈশাখ কাপড়ে আসবে রঙের পরিবর্তন লাল সাদার রঙে শাড়ি পড়বে মেয়েরা। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি যাকে বলে আরকি। 

পহেলা বৈশাখ যেহেতু উৎসব হিসেবে উৎযাপন করা হয় সেহেতু ভালো খাবার তো লাগেই। প্রতিটি ঘরে ঘরে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয় সামর্থ্য অনুযায়ী। কারণ উৎযাপন যেহেতু হবে ভালো করেই হবে। 

বছর ঘুরে চলে আসে প্রতিবছর পহেলা দিন যাকে বলি নববর্ষ কিংবা পহেলা বৈশাখের দিন। ভারতে আসে ১৫ এ এপ্রিল বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল। তবে শর্ত হলো ১ টি সেটি হলো প্রথম দিন পহেলা দিন। আর বছরের নানা পরিবর্তন হলে বদলাতে পারে তারিখ। মূল বিষয় একটি যদি হয় বাংলা বছরের প্রথম দিন সেদিনটিই হবে পহেলা বৈশাখ। তারিখের আগে পরে হলেও হতে পারে। 

পহেলা বৈশাখের দিন মেলার দিন। নানান মেলায় নানান খেলা নিয়েই পহেলা বৈশাখ। গ্রাম গঞ্জে জমে উঠে এই মেলা। মেলায় থাকে পুতুলের তা ধিং তা ধিং নাচের আয়োজন। সাথে থাকে হাস্যরসাত্মক সার্কাসের আয়োজন। আর দোলা যায় নাগরদোলা। বা হয়ে যায় এক প্রতিযোগিতা, নৌকা বাইচ অনুষ্ঠান যাকে বলে। সব মিলিয়ে পহেলা বৈশাখে মেলা মানেই সরগরম ব্যাপার স্যাপার। 

হালখাতার অনুষ্ঠান হবে এই পহেলা বৈশাখে। নানান জায়গার নানান পেশার মানুষ হবে জড়ো মহাজনের বকেয়া হবে পরিশোধ। মহাজন করবে তাদের মিষ্টান্ন দিয়ে মিষ্টিমুখ। সব হবে মিষ্টি মুখরিত। শুরু হবে নতুন ভাবে নতুন বছরের স্বাগতম। 

শোভাযাত্রা শোভাযাত্রা নাম তার মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ যখন এসেই যাবে তখন তো শোভাযাত্রা হবেই। মঙ্গল শোভাযাত্রায় সব ধরনের মানুষ একত্রে তা পালন করে। সবাই করে অংশগ্রহণ জাত-পাত নির্বিশেষে।

যারা মৃৎশিল্প আর হস্তশিল্পে পারদর্শী তাদের আগমন ঘটে বাংলার প্রথম দিন পহেলা বৈশাখের দিনে। পহেলা বৈশাখের মেলা উৎযাপন শুরু হলেই মেলায় চলে আসে মৃৎশিল্পের নানা কারুকাজ যন্ত্রপাতি সাথে হস্তশিল্পের যন্ত্রপাতি সমূহ। 

টেলিভিশনে দেখা যায় বাংলার নানান প্রাচীন ঐতিহ্য। আর এসব অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নানা টেলিভিশন চ্যানেল গুলিতে। বাসার সবাই তখন এসব উপভোগ করে আপন মনে। 

বৈশাখের শুরু হয় যার হাত ধরে সে আর কেউ নয় বাংলার মুঘল সম্রাট আকবর এর শাসন আমল থেকে। আর এরই মাধ্যমে সূচনা হয় পহেলা বৈশাখ উৎসব। 

বাউল শিল্পীদের মেলা বসে যায় পহেলা বৈশাখে। পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে এটিকে ধরা হয়। যাখানে বাউলরা গান গেয়ে বেড়াবে।

বাঙালি পরিচয়ের সবাই এই নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ পালন করে। জাত-পাত বর্ণ-গোত্র সব কিছু নির্বিশেষে পালিত একটি উৎসবকে বৈশাখ আখ্যা দেয়া হয়। 

পহেলা বৈশাখ শুধু দেশের মানুষদের জন্য নয়। এটি পালিত হয় নানান দেশের বাঙালিদের মধ্যেও। যেই দেশেই বাঙালি আছে তারা এটি পালন করে। করে তুলে আনন্দময় একটি উৎসব। 

পহেলা বৈশাখ ও বাঙালির সংস্কৃতি


বলা হয়ে থাকে, বাঙালির ঐতিয্য জাগরণ করা বাঙালির সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে পহেলা বৈশাখ। বাংলার বাউল গান, মৃৎশিল্প, পুতুলনাচ, গাননাচ, মেলা, শিল্পকলা, চিত্রনাট্য/চিত্রশিল্পী থেকে সব বাঙালি কালচার বাঙালি সংস্কৃতি চলে আসে এই পহেলা বৈশাখে। 

বাংলার পুরনো ঐতিয্যের অনেক কিছুই চলে আসে পহেলা বৈশাখে। মাছে ভাতে বাঙালি শব্দটা কেনা জানি। সেটিও পহেলা বৈশাখে ফুটে উঠে। 

পহেলা বৈশাখ আর বাংলার সংস্কৃতি সবই সুন্দর ভাবে ফুটে উঠে। পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে আবার ঐতিয্য নিয়ে ভাবাও ও সংস্কৃতির প্রশার ঘটায়। 

পহেলা বৈশাখের ইতিহাস


পুরনো দিনের কথাই বলি। এমন একটা সময় ছিলো যখন নববর্ষ পালিত হতো অন্য নামে। নববর্ষকে বলা হতো ভিন্ন এক দিবস যাকে বলে আর্তব উৎসব অথবা ঋতুধর্মী উৎসব। এই উৎসবের সাথে জড়িত ছিল কৃষিকাজের সাথে বাংলাদেশে এমনিতেই কৃষি নির্ভর দেশ আর ওই দিবস যেহেতু ছিলো ঋতুনির্ভর একটি কাজ। তাই এই কৃষিকাজকে ঘিরেই এর সুবিধার খাতিরেই মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ ১০/১১ মার্চ বাংলা সনের প্রবর্তন করেছেন। এছাড়াও এটিকে কার্যকর কারার সময় ছিলো মূলত তার সিংহাসনে আরোহনের সময়। সময়টা বলতে গেলে ৫ নভেম্বর এর ১৫৫৬ সালে। 

এই বাংলা সনকে আবিষ্কার তথা প্রবর্তন করা হয় হিজরী চান্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের উপর ভিত্তি করে। আমরা সাধারণত নতুন সনকে বলে থাকি বঙ্গাব্দ। তবে অতিতে এর নাম বঙ্গাব্দ ছিলো না। প্রথম দিকে এর নাম ভিন্ন ছিল যাকে বলা হতো “ফসলি সন” তখন সবাই এটিকে এ নামেই চিনতো। 

পহেলা বৈশাখের আচার অনুষ্ঠান


হালখাতা ছিলো আগেরকার সময় এই বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব। যদিও এটি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক একটি বিষয়। নগর থেকে গ্রাম গঞ্জে সব জায়গার ব্যবসায়ীরা এই নতুন দিনের শুরুতে তাদের সেই অতীতের খাতার হিসাব নিকাশ লেনদেন সম্পন্ন করে আবার নতুন করে হিসাব খুলতেন নববর্ষের নব হিসাবের নতুন খাতা অকে বলে। 

তারপর শুরু হয় নববর্ষ উপলক্ষে আপ্যায়ন পর্ব। যারা ব্যবসায়ী তারা তাদের কাস্টমার বা নতুন পুরাতন নানান খদ্দেরকে আমন্ত্রিত করতো এবণ মিষ্টি বিলিয়ে দিত। একইসাথে নববর্ষের নতুন চাভে ব্যবসায়িক নতুন উদ্যম স্থাপন করত। এই রীতি আজও আছে বর্তমানেও এটি পালন করা হয়। 

নববর্ষের এই আনন্দে আনন্দিত থাকতো বাংলার গ্রামীণ জীবনের লোকজনরা। তাদের সাথে এই পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ ছিলো একই সুতোয় বাঁধা। যার কারণে গ্রাম গঞ্জের মানুষের কাছে পহেলা বৈশাখ তাৎপর্য ও গুরত্বপূর্ণ। 

নববর্ষের আমেজে ভরে উঠে অনেক ঘর। সবাই সকালে উঠে যায় স্নান করে নিজেকে পবিত্র করে। এ দিনে সব কিছু ভালো করার চেষ্টা করে যেমন ভালো খাওয়া দাওয়া, ভালো থাকা ও ভালো থাকতে পারাকে একটি কল্যাণমূলক ও মঙ্গলজনক মনে করে যেটি ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গলজনক হবে। এটাই তাদের ধারণা ও বিশ্বাস। 

নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেদিন ঘরে ঘরে নানা আয়োজন হয়। খুশির জোয়ারে যখন মানুষজন মেতে থাকে তখন তো আত্মীয় স্বজনেরও প্রয়োজন হয়। কারণ যেকোন আনন্দেই আত্মীয় ছাড়া জমে না। বৈশাখের সময় সবাই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ইনভাইট করে তার পাশাপাশি আশে পাশের যারা বসবাস করে অর্থাৎ পাড়া-প্রতিবেশীদেরকেও আপ্যায়ন করে থাকে। 

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে হারেক রকম খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়। মিষ্টান্ন নানা ধরনের পিঠা, পয়েস আরও অনেক কিছু। তার সাথে আঞ্চলিক লোক সমাজের নানান রেসিপিও করা হয় পহেলা বৈশাখের দিনে। এই নববর্ষ নিয়ে চলে নানান উদ্দিপনা একজনের সাথে আরেকজন হয় শুভেচ্ছার আদান প্রদান। এরই সাথে একজন আরেকজনকে উপহার দিয়ে থাকে প্রিয়জনদের উপহার আদান প্রদান সহ নানান ভাবে আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। এখন শহরেও চলে এমন উৎসব গ্রামের এই দৃশ্য শহরাঞ্চলেও দেখা দেয়। 

পহেলা বৈশাখ কিভাবে উদযাপন করা হয়


পহেলা বৈশাখে আত্মীয় স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে নিয়ে উৎযাপন করা হয় পহেলা বৈশাখ। সাথে থাকে ইলিশ মাছ আর পান্তা ভাত। পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ যেনো পহেলা বৈশাখের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ইলিশ ছাড়া পহলে বৈশাখ যেনো জমে না। 

সবাই মিলে নানান ধরনের খাবার খাওয়া নতুন পোষাক পড়া আত্মীয় স্বজনকে ইনভাইট করে একসাথে আনন্দ করা। পান্তা ভাত মরিচ পেয়াজের সাথে সুস্বাদু ইলিশ দিয়ে ভোজন করা সবই এর সাথে জড়িয়ে আছে। 

সমাজের যেকোন জাতি গোত্র বর্ণ সবার জন্যই এই উৎসবটি উন্মুক্ত। তবে অনেকে এটিকে সার্বজনীন মানেন আবার অনেকে এটিকে নানান কারণে একটি কুসংস্কার হিসেবে তুলে ধরেন। 

তবে বাংলাদেশে খুব সরগরম ভাবেই উৎযাপন করা হয় পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক উৎসবগুলো।

পহেলা বৈশাখের গুরুত্ব


পহেলা বৈশাখ বাংলার একটি সংস্কৃতি নামে পরিচিত। এই উৎসবটিকে সব বাঙালিদের জন্য সার্বজনীন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিনে পালিত একটি উৎসব যেটি বছরকে বছরকে বাঙালিরা পালন করে আসছে। 

এতে আছে আনন্দ ও নানান আয়োজনের সমষ্টি। নানান সংস্কৃতি সাথে জড়িত থাকে। ব্যবসায়ীদের হালনাগাদ উৎসব। পান্তা ইলিশের ফুলঝুরি। সাথে আছে নানা শিল্পকলার প্রকাশ। মৃৎশিল্প, চিত্রনাট্য, নাচগান-পুতুলনাচ সহ কতকি। 

নানান পেশার নানান বর্ণের ধনী থেকে গরীব কিংবা মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত সবাই নিজ নিজ মত এই পহেলা বৈশাখের আমেজে উত্তেজিত হয়ে উৎসবে অংশগ্রহণ করা সব নির্বিশেষে। সবার এক সাথে মিলনায়তন তৈরি করে পহেলা বৈশাখ। যে উৎসবে মিলে সবার দেখা। সবার সাথে সবার যোগ মিলে এই উৎসবে। সবার সুযোগ হয় একসাথে বাঙালিয়ানা প্রকাশ করা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে একটি দিন কাটানোর। 

এরই সাথে এর আছে ফিন্যান্সিয়াল গুরুত্ব অর্থাৎ এতে আছে অর্থনৈতিক নানান বিষয়সমূহ। অর্থনৈতিক নানান প্রান্তর যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় এর মাধ্যমে। আর এভাবেই উৎসবটি হয়ে উঠে একটি সার্বজনীন উৎসব। আর পহেলা বৈশাখ এভাবেই একটি সার্বজনীন ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের একটি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে মানুষজনের কাছে। এই উৎসবে কেউ শিল্পি হয়ে অনন্দ নেয় কেউ বাউল হিসেবে আবার কেউ ক্রেয়া বা কেউ বিক্রেতা হিসেবে। সবাই নিজ নিজ মত এই দিনে নিজেদের আনন্দ উৎযাপন করে। 

নববর্ষ পালন ও সমলোচনা


অনেক বিজ্ঞ লোকেরা পহেলা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রার সমলোচনা করে থাকে। এর কারণ তাদের দাবী কোন প্রথম দিন কল্যাণময় হতে পারে না। এসব প্যাগান বিষয় এসব ভুল ও কুসংস্কার। 

কোন একটি দিন ভালো ভাবে কাটালে বছর ভালো যাবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা করে মঙ্গল আনা যাবে এসব সবই ভুল ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস। 

পহেলা বৈশাখের নামে অনেকর অশ্লীলতা করে অনেক মেয়ে ছেলে নানানভাবে একত্র হয়। পহেলা বৈশাখ কে নতুন বছরের উৎযাপন এর পাশাপাশি ভালো ভাবে কাটালে সারাবছর ভালো যাবে এমন মতবাদ কে কুসংস্কার হিসেবে ধরা হয় যা ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে আসা 31st/new year এসবেরই অন্তর্ভুক্ত। একারণে অনেকেই পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রার নানান বিষয়কে অপছন্দ করেন এবং এর কারণও খুবই শক্তপোক্ত। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা শির্ক ও কুসংস্কার তাই মুসলিমরা বুঝে শুনে পালন করাটাই ভালো। 

যাইহোক উৎসব পালন যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কেউ পক্ষে বলবে কেউ বিপক্ষে বলবে এটাই স্বাভাবিক। 

শেষকথা


বাঙালিদের উৎসব হিসেবে দাবী করা পহেলা বৈশাখ চলে আসছে রাত পোহালেই। আগামীকাল ১৪ ই এপ্রিই ২০২৪, আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। 

পহেলা বৈশাখ কে কে পালন করবেন আর কে কে করবেন না এবং কিভাবে পালন করবেন তা শেয়ার করতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে। 

এমন আর্টিকেল আরও পেতে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url