আখলাক অর্থ কি - আখলাকে হামিদার গুরুত্ব - Akhlak ortho ki?



আসসালামু আলাইকুম,, চরিত্র এমন একটি জিনিস যেটি আপনার সবকিছুকে মূল্যায়ন করবে। চরিত্রের মাধ্যমে একজন মানুষ সর্বোচ্চ সম্মানের পাত্র হতে পারে আবার এই চরিত্রের জন্যই একজন মানুষ সর্বনিম্ন নিকৃষ্ট হতে পারে। আমরা মুসলিম আর একজন মুসলিমের চরিত্র যদি উত্তম না হয় তার আখলাক যদি উত্তম না হয় তাহলে তার এই মুসলিম হওয়া অন্যদের কি শিখাবে? 

একজন মানুষ যতই কোটিপতি হোক না কেন তার চরিত্র তার পরিচয় তার বংশের পরিচয় বহন করবে। চরিত্রবান ব্যাক্তি যদি গরিবও হয় তার মূল্য অনেক। মানুষ যাকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়! সেই মানুষ যদি চরিত্রবান না হয়, ভালো আখলাক এর অধিকারী না হয় তাহলে সে উত্তম মানুষ হতে পারবে না। 

দুশ্চরিত্র ব্যাক্তি নিজের জন্যও ক্ষতিকর, দেশ জাতীর জন্যও ক্ষতিকর। তাই সবার উচিত চরিত্রবান হওয়া। ইসলামের দৃষ্টিতে যাকে আখলাক বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম চরিত্রের মূল্য অনেক। একজন উত্তম চরিত্রের ব্যাক্তিই মুমিন আর খারাপ চরিত্রের ব্যাক্তি কখনো ভালো মুমিন হতে পারে না। কারণ মুমিন হলে তার চরিত্র উত্তম চরিত্র থাকবে। তার আচরণ ব্যবহার চলার ধরণ, কথাবার্তা সবই হবে সুন্দর ও উত্তম। সে কখনো মন্দ কাজ, কথার মাধ্যমে নিজের চরিত্রকে নষ্ট করবে না। 

আজকের আর্টিকেল আখলাক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এবং আখলাকে হামিদা নিয়ে এবং তার বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে। আসুন জেনে নেই এবং নিজের জীবনে এপ্লাই করি। 

আখলাক অর্থ কি


আখলাক শব্দের সহজ অর্থ চরিত্র। একজন মানুষের ব্যবহার, আচরণ, কথাবলার ধরণ সবই আখলাকের মধ্যে পরে। আখলাক দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি আখলাকে হামিদা অন্য আখলাকে যামিমা। 

আজকের আলোচনা আখলাকে হামিদা নিয়ে। আখলাকে হামিদা অর্থ উত্তম চরিত্র। আর আখলাকে যামিমা অর্থ খারাপ চরিত্র। আমরা মুসলিম আমরা শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত। আমারা মুসলিম আর আমাদের অবশ্যই আখলাকে হামিদার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। একজন ঈমানদার ব্যাক্তি মানেই সে একজন উত্তম চরিত্রের মানুষ, অর্থাৎ সে একজন উত্তম চরিত্রের ব্যাক্তি। আর ঈমানদার ব্যাক্তি কখনোই আখলাকে যামিমার অধিকারী হয় না। সে সব সময় উত্তম চরিত্র তথা আখলাকে হামিদার অধিকারী হয়ে থাকে। 

যে ব্যক্তি আখলাকে শ্রেষ্ঠ সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। যার আখলাক উত্তম যে আখলাকে হামিদার অধিকারী সেই তো প্রকৃত রাসুল প্রেমী। 

আখলাকে হামিদার গুরুত্ব


আখলাকে হামিদার গুরুত্ব অনেক। যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন সেই নবীর উম্মতকে কি আর আখলাকে হামিদার গুরত্ব বুঝাতে হয়? 

প্রতিটি মুসলিমের আখালকে হামিদার অধিকারী হতে হবে। কারণ আখলাকে হামিদার গুরুত্ব অনেক এই আখলাকে হামিদা আপনার মধ্যে যদি না থাকে তাহলে আপনি পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবেন না। আপনার মধ্যে যদি আখলাকে হামিদার পরিবর্তে আখলাকে যামিমা থাকে তাহলে আপনি প্রকৃত মুমিন হতে তো পারবেনই না বরণ গুনাহগার হবে। 

যেমন ভালো কাজ, ভালো কথা, ভালো ব্যবহার সবই আখলাকে হামিদার অধিকারীদের জন্য। কেউ যদি এসব থেকে উল্টো থাকে অর্থাৎ আখলাকে যামিমা বা খারাপ চরিত্রের অধিকারী থাকে তাহলে তার কাজ,কর্ম,কথা,ব্যবহার সবই থাকবে খারাপ আর এসব খারাপ কাজ কর্মে থেকে কখনো মুমিন হওয়া যায় না বরং গুনাহগার হওয়া যায়। 

আপনি আখালকে হামিদার অধিকারী হলে আপনার কাজ কর্ম আপনাকে নেকি এনে দিবে। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভালোবাসবেন এবং উত্তম প্রতিদান দান করবেন। আপনার ভালো ব্যবহার আপনার ভালো চরিত্র মানুষকে মুগ্ধ করবে। মানুষের কাছে আপনি হবেন একজন উত্তম চরিত্রের মানুষ, চরিত্রবান ব্যক্তি, আপনার থাকবে চরিত্রবান ব্যক্তিত্ব। আপনার চরিত্রের জন্য মানুষ আপনাকে সম্মান করবে, বিশ্বাস করবে, প্রশংসা করবে, আপনাকে ভালোবাসবে, আপনার জন্য দোয়া করবে। আর আপনার নেকি তো হবেই আপনার চরিত্রের জন্য আপনি উত্তম প্রতিদান পাবেন। 

চরিত্রবান ব্যক্তিকে শত্রুও বন্ধু বানিয়ে ফেলে। চরিত্রবান ব্যাক্তি একজন প্রকৃত মুমিন হতে পারে। আর এই চরিত্রবান মানুষ তথা আখালকে হামিদার অধিকারী লোকেরাই নিজের জন্য, মানুষের জন্য, দেশের জন্য, ইসলামের জন্য উত্তম। 

আখলাকে হামিদার বৈশিষ্ট্য


আখলাকে হামিদা তথা উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য অনেক। একজন আখলাকে হামিদার অধিকারী ব্যক্তির চরিত্র যেমন উত্তম তার কর্মও তেমন উত্তম তার প্রতিদানও থাকে অতি উত্তম। 

আখলাকে হামিদা তথা উত্তম চরিত্রের ব্যক্তিদের কিছু বৈশিষ্ট্য,,, 


বিনয়ঃ বিনয় হওয়া। তার মধ্যে বিনয় থাকে সে অহংকারে নিজেকে ফুলিয়ে রাখে না। সে যতই বড়লোক হোক না কেন কারো সাথে দাম্ভিকতা দেখায় না তার আচরণ বিনয় থাকে তার মধ্যে বিনয়ের ছাপ থাকে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার সাথেই তার আচরণ থাকে বিনয় ও নম্র। 

নম্রতাঃ একজন ব্যক্তি ভালো আখলাকের হয় যখন তার মধ্যে নম্রতা থাকে। সে নম্রভাবে কথা বলে, চলাচল করে, আচরণ করে। তার সকল কর্মকাণ্ডেই নম্রতা পরিলক্ষিত হয়। তাই ভালো আখলাকের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা উভয়ই রয়েছে। 

ধৈর্যঃ একজন উত্তম চরিত্রের ব্যাক্তি অনেক ধৈর্যশীল হয়ে থাকে। সে কখনো অধৈর্য হয়ে সব কিছু উলটপালট করে না। সে অধৈর্য হতে কারও সাথে খারাপ আচরণ করে না। সে নিজেকে সংযত রাখে। খারাপ সময়েও সে ধৈর্য হারায় না। আর আল্লাহ তায়ালা বলেই দিয়েছেন তিনি ধৈর্যশীলতের সাথে আছেন। তাই ধৈর্যশীলতা উত্তম চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য যা তাকে সংযত রাখে। 

ক্ষমাঃ একজন উত্তম চরিত্রের ব্যক্তি মানুষকে মন খুলে ক্ষমা করে। তার সাথে মানুষ হয়তো খারাপ করেছে কিন্তু মানুষ যখন নিজের ভুল বুঝেক্ষমা চায় তখন উত্তম চরিত্রের ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দেয়। ক্ষমা করাও একটি মহৎ গুন। সবাই সহজে ক্ষমা করতে পারে না, যা অনুচিত। 

তাকওয়াঃ তাকওয়া থাকলেই ভালো চরিত্রের অধিকারী হওয়া যায়। আল্লাহর উপর তাকওয়া না থাকলে মানুষ পথ হারা হয়ে নিজের পথকে হারিয়ে বসে। 

ওয়াদা পালন করাঃ যদি ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা পালন না করা হয় তাহলে তার উত্তম চরিত্র কোনভাবেই থাকে না। তাই অবশ্যই ওয়াদা পালন করতে হবে। 

সততা ও সত্যবাদীতাঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত আমরা সেই নবীর উম্মত যিনি এতটাই সত্যবাদী ছিলেন যে কাফিররাও তাকে আলামিন বলতো। কাফেররাও তার কথা বিশ্বাস করতো এবং তার কথাকে সত্য বলে মেনে নিত। তাহলে আমরা কিভাবে মিথ্যাবাদী হই? 

আমানত রক্ষাঃ আমানত রক্ষা করতে হবে। আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। 

পরোপকারী হওয়াঃ উত্তম চরিত্রের মানুষ অন্যদের উপকার করে অপকার করে না। 

পরমতসহিষ্ণুতাঃ উত্তম চরিত্রের ব্যক্তি মানুষদের মতকে সম্মান করে। 

শিষ্টাচারঃ উত্তম চরিত্রের ব্যক্তির মধ্যে শিষ্টাচার থাকা আবশ্যক। 

শালীনতাবোধঃ যদি শালীনতা না থাকে তাহলে তাকে কোনদিনও উত্তম চরিত্রের বলে মনে হবে না। দেখেই বুঝা যাবে যে সে অশালীন একজন ব্যক্তি। 

এছাড়াও, নিজের কাজগুলো নিজেই করা, সৃষ্টি সেবায় নিয়োজিত থাকা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, বড়দের সম্মান করা, দেশকে ভালোবাসা, দেশ ও দশের জন্য কাজ করা সমাজের সেভা করা সবই আখলাকে হামিদার বৈশিষ্ট্য। 

আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিটি মুসলিমকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তৌফিক দান করুক আমিন। 

সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী কে ছিলেন


উত্তম আখলাক, আখলাকে হামিদার কথা বললে সর্বপ্রথম ও সর্বোত্তম ব্যক্তি যিনি তিনি আর কেউ নন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। 

“তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী”
(কুরআন ৬৮:৪) 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url