জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত - জুমার সুন্নত নামাজ - Jummar diner sunnot


জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত


আসুন জেনে নেই জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত সম্পর্কে। প্রতি জুমার দিন আমাদের অবশ্যই এই সুন্নতগুলি পালন করা উচিত।

১. জুমার দিন ফজরের নামাজ জামাতে শরিক হয়ে আদায় করতে হবে জুমার নামাজ বাসায় পড়ার নামাজ নয়। এটি মসজিদে জামাতের সাথেই আদায় করতে হয়। আমাদের সবার উচিত জুমার দিন আগে ভাগে প্রস্তুত হয়ে জুমার নামাজের জন্য মসজিদে পৌছে যাওয়া। এমন যেনো না হয় যে গাফেলতির জন্য জুমার জামাত ছুটে যায়। 

২. গোসল করা, জুমার নামাজের অন্যতম সুন্নত আমল গোসল করা। জুমার দিন তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করা অর্থাৎ আগেভাগে গোসল করে তৈরি হওয়া। জুমার নামাজ গোসল ছাড়া না পড়া। যদি কোন বড় সমস্যা না থাকে। তাই সকাল সকাল গোসল করে ফেলা। 

৩. মিসওয়াক করা, মিসওয়াক করা একটি সবসময়কার সুন্নত আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্যতম একটি সুন্নত মিসওয়াক করা। আমরা অবশ্যই আমাদের বাসায় মিসওয়াক রাখবো এবং জুমার দিন মিসওয়াক করতে হবে। এটিও জুমার দিনের একটি সুন্নত আমল। 

৪. তেল ব্যবহার করা, চুল দাঁড়ি শরীরে তেল ব্যবহার করে পরিপাটি হওয়া। জুমার সালাতের জন্য সুন্দর ভাবে নিজেকে পরিপাটি করাটাও একটি সুন্নাত। চুল ও দাঁড়ির যত্নেও তেল ব্যবহার করা হয় তাই তেল ব্যবহার করবেন জুমার দিন। 

৫. সুগন্ধী/আতর ব্যবহার করা, সুগন্ধী সব সময়ই একটি সুন্দর জিনিস। দিনটি যদি হয় জুমার দিন তবে অবশ্যই সুগন্ধী ব্যবহার করবেন। জুমার নামাজ পড়ার জন্য যখন রওনা হবেন অবশ্যই সুগন্ধী লাগিয়ে নিবেন। সুগন্ধী ব্যবহার একটি সুন্নত আমল। 

৬. জুমার দিন উপলক্ষে পরিচ্ছন্ন জামা পরিধান করা। শুধু জুমার জন্যে নয় বরং সব নামাজেই পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত পোষাক পরিধান করা জরুরি। আমাদের উচিত সবচেয়ে ভালো-উত্তম পোষাক পরিধান করে সালাতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া। পোষাকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পোষকটাই পরিধান করা। যা ইসলামী পোষাকের আওতাভুক্ত থাকে। 

৭. দূরুদ পাঠ করা। জুমার দিনে অবশ্যই বেশি বেশি দূরুদ পাঠ করবেন। দূরুদ পাঠ করা মানেই ১০ রহমত ও ১০ বিপদ থেকে মুক্তি। জুমার দিন দোয়া কবুলের জন্যও দূরুদ পাঠ করবেন। জুমার দিনের একটি আমল হলো বেশি বেশি দূরুদ পাঠ। 

৮. কুরআন পড়া, প্রতিটি মুসলিমের উচিত প্রতিদিন কুরআন তেলওয়াত করা। জুমার দিন তো অবশ্যই কুরআন তেলওয়াত করতে হবে। তবে জুমার জন্য বিশেষ সূরা রয়েছে যেটি সূরা কাহাফ। তাই জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করা পুরো সূরা পাঠ করা সম্ভব না হলে যতটুক পারা যায় পড়া, তবে পাঠ করতে হবে। এটিও জুমার দিনের আমল আর এই সূরার প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ থাকলে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। 

৯. জুমার দিন মসজিদে দ্রুত যাওয়া। অনেকে জুমার দিন দেরিতে মসজিদে যান যেটি উচিত নয়। জুমার দিন উচিত আগেভাগে প্রস্তুত হওয়া এবং মসজিদে দ্রুত উপস্থিত হওয়া। তাই জুমার দিন যত দ্রুত পারা যায় মসজিদের দিকে রওনা দিবেন। 

১০. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া। জুমার দিন কোন যানবাহন ব্যবহার না করা। জুমার দিন উচিত পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া। তাই যানবাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে মসজিদের দিকে রওনা দেয়া উত্তম। 

১১. মসজিদে প্রবেশ করেই না বসে প্রথমেই দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা। মসজিদে ঢুকেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করলে মসজিদের হক আদায় হবে। তাই জুমার দিন মসজিদে প্রবেশ করে বসে না গিয়ে দুই রাকাত নামাজ অবশ্যই পড়ে নেয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা চলা অবস্থায় এক মুসল্লিকে দেখলেন মসজিদে এসে বসে গেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা বন্ধ করে মুসল্লিকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে আদেশ দিয়েছেন। তাই এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। 

১২. মসজিদে প্রবেশের পর যেখানে বসার জায়গা আছে সেখানেই বসুন। অন্য মানুষকে কষ্ট দিবেন না সামনে যেতে গিয়ে। অনেকে সামনে বসার জন্য অন্যদের অস্বস্থির কারণ হয়ে উঠে। তাই আমাদের উচিত যেখানে জায়গায় খালি সেখানে বসা এবং পরবর্তীতে যখন সামনের কাতার ফাঁকা হবে তখন সামনে যাওয়া। মুসল্লিদের কষ্ট না দেয়াই এর উদ্দেশ্য। 

১৩. শান্ত থেকে মনোযোগ সহকারে চুপচাপ থেকে খুৎবা শুনুন। খুৎবা চলাকালীন কোন ধরনের কথাবার্তা না করা। আমরা অনেকেই খুৎবার সময়েও কথা বলি এটা উচিত না। খুৎবার সময় মনোযোগ সহকারে সেই খুৎবা শ্রবণ করা। এটি অবশ্যই জরুরি একটি আমলের মধ্যে একটি। তাই খুৎবা চলাকালীন কোনধরনের কথাবার্তা বলবেন না। 

১৪. চোখে ঘুম আসলে নিজের জায়গায় পরিবর্তন করুন। আমাদের মধ্যে অনেকে ঘুম পাগল আবার কেউ কেউ জুমার খুৎবার সময় ঝিমায়। ঘুম পায় অনেকের এটি বর্জনীয় একটি বিষয়। জুমার দিন ঘুম ঘুম করলে চলবে না তাই এটি প্রতিরোধের জন্য নিজের স্থান পরিবর্তন করুন এবং খুৎবা শুনায় মনোযোগ স্থাপন করুন। তাহলে শয়তান থেকে আসা অলসতা দূর হবে।

১৫. বেশি বেশি দোয়া করবেন। জুমার দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করুন দোয়া চান। জুমার দিন দোয়া কবুলের একটি অন্যতম দিন। জুমার দিন আসরের সময়েও দোয়া কবুল হয়ে থাকে। তাই এই অফার যেনো না ছুটে। অবশ্যই বেশি বেশি দোয়াদূরুদ করা। মাগরিবের আগের কিছু সময়ে দোয়া করা এই সময় দোয়া কবুলের সময়। তাই জুমার দিন দোয়া করা যেনো অব্যাহত থাকে। 

জুমার সুন্নত নামাজ


জুমার নামাজ পড়ার শুরুতেই অর্থাৎ মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে না বসে প্রথমে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামাজ আদায় করে নেয়া। তারপর মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শ্রবণ করা। 

জুমার দিন খুৎবার আগ পর্যন্ত চাইলে দুই রাকাত দুই রাকাত মাসনা মাসনা করে নামাজ পড়া যাবে। চাইলে চার রাকাত সুন্নত পড়া যায় যেটা সচরাচর আমরা পড়ে থাকি। 

দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ, চাইলে আরও সুন্নত নামাজ পড়ার পর জুমার দুই রাকাত আদায় শেষ করা। 

জুমার ফরজ দুই রাকাত পড়ার পর আমরা অনেকেই চলে যায়। এটি আরেকটি বর্জনীয় অভ্যাস। কোন জরুরি প্রয়োজন থাকলে সেটি ভিন্ন বিষয় তবে জুমার ফরজ পড়েই চলে যাওয়া উচিত না। জুমার নামাজের পর দোয়াদূরুদ পড়া। আর অবশ্যই চার রাকাত বা'দাল জুমা আদায় করা। 

ফরজ নামাজের পর চার রাকাত বাদাল জুমা আদায় করে মসজিদ থেকে যাওয়া। বাদাল জুমার চার রাকাত সুন্নত নামাজ। তাই এই সুন্নত নামাজ যাতে আমাদের না ছুটে। তাই আমাদের উচিত অবশ্যই কমপক্ষে এই বাদাল জুমার চার রাকাত আদায় করা। 

জুমার নামাজের সুন্নত কয় রাকাত


জুমার নামাজের শুরুতে মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা। 

তারপর মাসনা মাসনা দুইরাকাত করে যত ইচ্ছা পড়া যায়। আর উল্লেখিত ভাবে কাবলাল জুমা অর্থাৎ জুমার আগে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া। যদিও কাবলাল জুমা নিয়ে অনেক ইখতিলাফ আছে। কেউ কেউ বলেন দুইরাকাত করে যতখুশি পড়া যাবে খুৎবার আগ পর্যন্ত। কাবলাল জুমা বলে কোন নামাজ নেই। আবার অনেকে বলে কাবলাল জুমা চার রাকাত সুন্নত। 

জুমার ফরজ দুই রাকাত শেষ করে চার রাকাত বাদাল জুমা আদায় করা। এটি সুন্নত নামাজ,  তাই অবশ্যই জুমার ফরজ দুই রাকাতের পর চার রাকাত বাদাল জুমা আদায় করে নিবেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url